শেষ আপডেট: 8th July 2020 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কনট্যাক্ট ট্রেসিং মডেলে করোনা কার্ভ নিয়ন্ত্রণে রেখে বেঙ্গালুরুই একসময় সংক্রমণ রোখার নতুন পথ দেখিয়েছিল। কিন্তু জুনের শেষ থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা আচমকাই বাড়তে শুরু করেছে বেঙ্গালুরুতে। সেই সঙ্গেই বাড়ানো হচ্ছে কনটেইনমেন্ট জ়োনের সংখ্যাও। সূত্রের খবর, বেঙ্গালুরুতে এখন মোট কনটেইনমেন্ট জ়োনের সংখ্যা তিন হাজারের বেশি। সংক্রামিত এলাকার ভিত্তিতে অ্যাকটিভ কনটেইনমেন্ট জ়োনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ ও পশ্চিম বেঙ্গালুরুতে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, গত ৮ দিনে শহরে কনটেইনমেন্ট জ়োনের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো হয়েছে। আজকের হিসেবে মোট কনটেইনমেন্ট জ়োন ৩ হাজার ২৭৬। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, করোনা অ্যাকটিভ রোগীর সংখ্যা মে মাসের শেষে ছিল ৩৫৮ জন। জুনের শেষে সেই সংখ্যাই পৌঁছয় ৪ হাজার ৫৫৫ জনে। এরপর গত আটদিনে করোনা অ্যাকটিভ রোগীর সংখ্যা এক ধাক্কায় রেকর্ড জায়গায় পৌঁছে গেছে। গতকাল, বুধবারের হিসেবে শহরে করোনা সক্রিয় রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ১০ হাজারে। গোটা কর্নাটকের হিসেবে ৬৭% অ্যাকটিভ করোনা রোগী রয়েছে বেঙ্গালুরুতেই। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হিসেবে কর্নাটকে কোভিড পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ২৮ হাজরের বেশি। সেখানে বেঙ্গালুরুতেই করোনা পজিটিভ ১০ হাজার ছুঁতে চলেছে। কোভিড পজিটিভিটি রেট ৮.১৭%। কোভিড পজিটিভিটি রেট হল যতজনকে কোভিড টেস্টিং করা হয়েছে তার মধ্যে যতজনের রিপোর্ট পজিটিভি সেই সংখ্যার শতকরা হার। স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য বলছে, গতকালই শহরে দেড় লাখ কোভিড টেস্টিং হয়েছিল, সেই হিসেবে পজিটিভিটি রেট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.১৭ শতাংশে। তবে স্বস্তির বিষয়, শহরে করোনা সারিয়ে সুস্থও হচ্ছেন অনেকে। এখনও অবধি ৭৭৮ জন কোভিড সংক্রমণ সারিয়ে সুস্থ হয়েছেন। যার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সেরে উঠেছেন ৪১৮ জন। শহরে করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য ৫ জুলাই থেকে ‘ফুল লকডাউন’ ঘোষণা করেছে বি এস ইয়েদুরাপ্পা সরকার। মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা শহরবাসীর কাছে আবেদন করেছেন, আতঙ্কিত হবেন না। শহর ছেড়ে পালাবেন না। ব্রুহাট বেঙ্গালুরু মহানগর পালিকে (বিবিএমপি)-র পরিসংখ্যাণ বলছে, ৮ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশে যখন করোনা সংক্রমণ ক্রমেই রেকর্ড জায়গায় পৌঁছচ্ছিল, বেঙ্গালুরুতে তখন সংক্রামিতের সংখ্য ছিল ৩৫৮। মৃত্যু হয়েছিল ১০ জনের। মার্চের শেষ থেকে আজ অবধি করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা হাজার পার হয়নি। কানপুর, অমৃতসর, লখনৌ, নাগপুর, জলন্ধর, আজমেঢ়, মেরঠ, উদয়পুর ও শাহারানপুরের থেকেও বেঙ্গালুরুতে কোভিড রোগীর সংখ্যা ছিল অনেক কম। কীভাবে করোনা সংক্রমণকে একটা গণ্ডিতেই বেঁধে ফেলা গেল এই প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর এপিডেমোলজি রিসার্চ গ্রুপের বিশেষজ্ঞ ডক্টর গিরিধর আর বাবু বলেছিলেন, কনট্যাক্ট ট্রেসিং মডেলেই সংক্রমণ অনেকটাই আয়ত্তে আনা সম্ভব হয়েছে। করোনার নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল রোগীদের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন তাঁদের চিহ্নিত করা। কোভিড পজিটিভ রোগীদের কাছাকাছি বা সংস্পর্শে আসাদের শনাক্ত করা গেলেই রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কমবে। করোনা মোকাবিলায় এই কনট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের উপরেই জোর দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। গোষ্ঠীস্তরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেঙ্গালুরুতে শুরু থেকে এই কাজটাই সঠিকভাবে করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বিবিএমপি কমিশনার অনীল কুমার। তাঁর কথায়, তিন পদ্ধতিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া আটকানো গিয়েছিল। এক, কোভিড রোগী চিহ্নিত করা (Trace), দুই, দ্রুত টেস্টিং (Test) এবং তিন, চিকিৎসা (Treatment)। এই পদ্ধতিতেই ফের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলা যাবে। কনটেইনমেন্ট জ়োনের সংখ্যা বাড়য়ে টেস্টিং, স্ক্রিনিং শুরু হয়ে গেছে। কনট্যাক্ট ট্রেসিংয়ে করোনা রোগীদের সংস্পর্শে আসাদের চিহ্নিত করে আইসোলেট করা হচ্ছে। বায়োকনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর কিরণ মজুমদার শ বলেছেন, বেঙ্গালুরুতে এই কনট্যাক্ট ট্রেসিং রেশিও ১:৪৭, অর্থাৎ প্রত্যেক করোনা পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে আসা ৪৭ জনকে শনাক্ত করা হচ্ছে। কনট্যাক্ট ট্রেসিংয়ে করোনা সন্দেহে থাকা লোকজনের কোভিড টেস্ট করিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।