শেষ আপডেট: 24th June 2023 08:17
বিষয়টি আলোচনায় ছিল বিগত বেশ কয়েক মাস যাবৎ। মাস দুই আগে আমেরিকা তাদের নতুন ভিসা নীতি চালুর পর বাংলাদেশের রাজনীতির আলোচনার মূল স্রোতে ঢুকে পড়ে সে দেশের একমাত্র কোরাল দ্বীপ এবং তথা বিশ্ব পর্যটকদের গন্তব্য সেন্ট মার্টিন।
নয়া ভিসা নীতিতে জো বাইডেন প্রশাসন ঘোষণা করে বাংলাদেশে যারা নির্বাচনকে বানচাল করার চেষ্টা করবে, আমেরিকা তাদের সে দেশে যাওয়ার ভিসা দেবে না। এরপরই বিরোধীদের সরকার বিরোধী আন্দোলন জোরদার হতে শুরু করেছে সে দেশে। নয়া উদ্যোমে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
পাশাপাশি জল্পনা শুরু হয়, দেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তের ওই দ্বীপটি নিয়ে দর কষাকষি করতেই মার্কিন প্রশাসন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নামে ভিসা নীতি চাপিয়েছে। কূটনৈতিক মহলের খবর, চিনের মোকাবিলায় আমেরিকা চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত ওই দ্বীপটি লিজ নিতে আগ্রহী। আয়তনে খুব ছোট হলেও সেখানে আমেরিকা নৌ ঘাঁটি তৈরি করতে আগ্রহী। আর ক্ষমতায় ফিরতে দ্বীপের লিজ নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে বিএনপি-র গোপন বোঝাপড়া হয়েছে বলেও জল্পনা তুঙ্গে ওঠে ভিসা নীতি ঘোষণার পরপরই। কিন্তু কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে তেমন হলে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেরও বিপদ বাড়বে। কারণ, মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ভবিষ্যতে এই দুই দেশের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হতে পারে।
বিষয়টি সম্প্রতি প্রকাশ্যে আনেন বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির সাংসদ রাশেদ খান মেনন। সে দেশের সংসদে তিনি বলেন, ‘মার্কিন ভিসা নীতির সঙ্গে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কোনও সম্পর্ক নেই। মার্কিন প্রশাসন আসলে সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি লিজ পেতে আগ্রহী। আমেরিকার চাপের কাছে মাথা নোয়াবে কি না সেই সিদ্ধান্ত সরকারকে নিতে হবে।’ মেনন আরও বলেন, ‘আমেরিকা চায় বাংলাদেশ তাদের সামরিক জোট কোয়াডের সদস্য হোক।’ আর এক সাংসদ তথা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বা জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুও বলেন, ‘মার্কিন ভিসা নীতির আসল উদ্দেশ্য সেন্ট মার্টিন দ্বীপটির দখল নেওয়া। এর সঙ্গে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কোনও সম্পর্ক নেই।’ শুক্রবার বাংলাদেশ সংসদে মুখ খোলেন আওয়ামী লিগের কক্সবাজারের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল। তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশকে অশান্ত করাই নয়, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দখলে ভারতকেও ভাঙার চক্রান্ত করা হচ্ছে। বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্র হিসাবে ব্যবহার করার ষড়যন্ত্র চলছে। ভারতেও অশান্ত করার ছক শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সহযোদ্ধা হিসাবে আমরা কিছুতেই ভারতের এই ক্ষতি হতে দিতে পারি না।’
ইতিমধ্যে জল্পনা ছড়িয়েছে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পার্টি বিএনপি মার্কিন প্রশাসনকে আশ্বস্ত করেছে তারা ক্ষমতায় এলে দ্বীপটি লিজ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বিনিময়ে আমেরিকা যেন হাসিনা সরকারকে চাপ দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, ঢাকার মার্কিন দূতাবাস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব নিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা জারি রেখেছেন।
এ নিয়ে চাপা গুঞ্জন উসকে দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, ‘যতই চাপ আসুক দেশের এক ইঞ্চি ভূখণ্ডও অন্য কোনও দেশকে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার প্রশ্ন আসে না।’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিও উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
সাংবাদিক বৈঠকে তিনি আরও বলেছেন, ‘এখনও যদি আমি বলি, ওই সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কাউকে লিজ দেব, তাহলে আমাদের ক্ষমতায় থাকতে কোনও অসুবিধা নেই। আমি জানি সেটা। কিন্তু আমার দ্বারা সেটি হবে না। কারণ আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা।’ এরপরই আওয়ামী লিগ সুপ্রিমো তথা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন ভাসিয়ে দেন, বিএনপি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা বাংলাদেশকে বিদেশিদের কাছে লিজ দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায় কি না।’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত করেছেন দ্বীপ লিজ দেওয়ার দাবি তাঁর কাছেও এসেছে। কিন্তু তিনি রাজি হননি।
প্রধানমন্ত্রী সেই সঙ্গে প্রধান বিরোধী দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, ২০০১ সালে বিএনপি গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। হাসিনা অবশ্য দ্বীপ লিজ এবং গ্যাস বিক্রির মুচলেকা সংক্রান্ত বক্তব্যে কোনও দেশের নাম করেননি। রাজনৈতিক মহল মনে করছে আওয়ামী লিগ নেত্রী আমেরিকাকেই ইঙ্গিত করেছেন।
স্বভাবতই কালক্ষেপ না করে পাল্টা তোপ দেগেছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সেন্ট মার্টিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তাঁর রাজনৈতিক কৌশল। এসব কথা বলে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চান।’ ফকরুল বলেন, ‘বিরোধী দলের সঙ্গে কোনও দেশের চুক্তি হয় না। চুক্তি হয় দেশের সঙ্গে দেশের।’
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী মুখ খোলার আগেই ঢাকার মার্কিন দূতাবাস দ্বীপ লিজ সংক্রান্ত জল্পনায় জল ঢালতে উদ্যোগী হয়েছে। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করি। দেশটির ভূখণ্ডের ওপর আমরা কোনও দাবি করিনি।’
সেন্ট মার্টিন আয়তনে খুব ছোট এলাকা হলেও সেটির মালিকানা নিয়ে বারে বারেই বিবাদ মাথাচাড়া দিয়েছে। বার্মা ব্রিটিশ শাসনাধীনে থাকাকালে সেন্ট মার্টিন ছিল সে দেশের অংশ। ১৯০০ সালে জরিপের সময় সেটি ভারতের অংশ হিসাবে দেখানো হয়। তারপর শতবর্ষ কেটে গেলেও সেন্ট মার্টিনের মালিকানার দাবি ছাড়েনি মায়ানমার তথা সেদিনের বার্মা। প্রায়ই মায়ানমার সরকার তাদের মানচিত্রে সেন্ট মার্টিনকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসাবে তুলে ধরে। স্বভাবতই নয়া বিতর্কে পুরনো কাসুন্দি ঘাটাও শুরু হয়েছে জোরকদমে।
নিজের আস্ত দেশ গড়লেন এই ব্যক্তি! নামও দিলেন, নিজেকে ঘোষণা করলেন 'সুলতান' হিসেবে