শেষ আপডেট: 12th April 2025 19:50
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ‘বাধ্য হয়েই চার রাউন্ড গুলি চালিয়েছিল পুলিশ।’ শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে বলতে শোনা গেল এডিজি আইন-শৃঙ্খলা জাভেদ শামিমকে। কোন পরিস্থিতিতে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল এদিন তাঁর ব্যখ্যাও দিতে দেখা যায় তাঁকে। প্রসঙ্গত, ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে রাজ্যের নানা প্রান্তে একেবারে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। জ্বলছে আগুন, হাত পড়েছে সরকারি সম্পত্তিতে। সবথেকে খারাপ অবস্থা মুর্শিদাবাদের। ধুলিয়ান থেকে সুতি, সামশেরগঞ্জ, সর্বত্রই অশান্তির ছবি।
জাভেদ শামিম যদিও বলছেন, সুতিতে সুজার মোড়, সামশেরগঞ্জে ডাক বাংলো মোড়ের অশান্তি ভয়ানক চেহারা নেয়। উন্মত্ত জনতাকে বাগে আনতে গিয়ে রীতিমতো বেগ পেতে হয়। আর তখনই গুলি চালাতে বাধ্য হয় পুলিশ। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বললেন, “সুতিতে সুজার মোড়, সামশেরগঞ্জে ডাক বাংলো মোড়ে অশান্তি হয়েছে। রাস্তা অবরোধ হয়, পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। তারপরই পুলিশের উপর আক্রমণ করে। পুলিশ অনেকক্ষণ থেকে সংযত ছিল। মিনিমাম থেকে ম্যাক্সিমাম ফোর্স প্রয়োগ করা হয়। লাঠি, গ্যাস সবরকম চালানো হয়। কিন্তু, জনতা আরও হিংসাত্মক হয়ে ওঠে।” এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন, “পাবলিক বাস থেকে, সরকারি সম্পত্তি সবকিছুতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তিন ঘণ্টা এরকম চলার পরে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে সুজার মোড়ে পুলিশ বাধ্য হয়ে চার রাউন্ড ফায়ারিং করে। তার মধ্যে ২ জনের আহত হওয়ার আমাদের কাছে খবর আছে। তাঁরা হাসপাতালে আছেন। ভাল আছেন এখন।”
অন্যদিকে এদিন সাংবাদিক বৈঠকে বারাবার গুজবে কান না দেওয়ার কথা বলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারও। একই সুর জাভেদ শামিমের গলাতেও। বলছেন, “ভয়ঙ্করভাবে গুজব ছড়াতে থাকে। ভুল বোঝানো হচ্ছে। দুষ্কৃতী, সমাজবিরোধীরাই এটা করছেন।” অন্যদিকে শান্তির বার্তা দিয়ে মমতা স্পষ্ট বলছেন, “কিছু রাজনৈতিক দল ধর্মকে অপব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছেন। তাদের প্ররোচনায় পা দেবেন না।”
এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম জানান, পুলিশের গুলি চালানো ছিল পরিস্থিতি সামাল দিতে বাধ্যতামূলক পদক্ষেপ। তাঁর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে যেভাবে উত্তাল পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা সামলাতে পুলিশকে কঠোর হতে হয়েছে। বিশেষ করে মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ান, সুতি এবং সামশেরগঞ্জ এলাকায় পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে।
জাভেদ শামিম বলেন, সুতির সুজার মোড় এবং সামশেরগঞ্জের ডাকবাংলো মোড় অঞ্চলে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। জনতা রীতিমতো হিংসাত্মক আচরণ শুরু করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে চরম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। তিনি জানান, “প্রথমে রাস্তা অবরোধ হয়, পুলিশ সেখানে হস্তক্ষেপ করলে তাদের উপর আক্রমণ চালানো হয়। পুলিশ দীর্ঘ সময় সংযত আচরণ করছিল। ধাপে ধাপে লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাসের মতো বিভিন্ন উপায় প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে না।”
তিনি আরও বলেন, “জনতা তখন আরও হিংসাত্মক হয়ে ওঠে, সরকারি সম্পত্তি ও বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা তিন ঘণ্টা ধরে এই অবস্থা চলার পর, মানুষের প্রাণ রক্ষায় বাধ্য হয়ে পুলিশ সুজার মোড়ে চার রাউন্ড গুলি চালায়। এতে দু’জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং বর্তমানে তাঁরা সুস্থ আছেন।”
অন্যদিকে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার এদিন সাংবাদিক বৈঠকে সাধারণ মানুষকে গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ জানান। জাভেদ শামিমও একই বার্তা দেন। তাঁর বক্তব্য, “ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। কিছু সমাজবিরোধী এবং দুষ্কৃতী এতে যুক্ত।”
এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও শান্তির বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “কিছু রাজনৈতিক দল ধর্মকে হাতিয়ার করে রাজনৈতিক লাভ তুলতে চাইছে। তাদের প্ররোচনায় যেন কেউ পা না দেন।”