মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শেষ আপডেট: 29th January 2025 17:09
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে মহার্ঘ ভাতা তথা ডিএ-র ফারাক নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মনে এমনিতেই অসন্তোষ রয়েছে। তার উপর আবার কেন্দ্রের সরকার অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) গঠন করে দিয়েছে। ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে তার সুপারিশ বাস্তবায়িত হওয়ার কথা। কেন্দ্রের এই ঘোষণা এখন রাজ্যের কর্মীদের কাছে নুনের ছিটের মতই। সেই সঙ্গে কর্মচারী মহলে এই প্রশ্নও উঠছে যে পশ্চিমবঙ্গে সপ্তম পে কমিশনের (West Bengal 7th Pay Commission) গঠন কবে হবে?
কেন্দ্র ও রাজ্যে সাধারণত দশ বছর অন্তর পে কমিশন গঠন করা হয়। এ ব্যাপারে কোনও ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। তবে মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতি এবং উপভোক্তা মূল্য সূচকের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সরকারি কর্মচারীদের বেতন পর্যালোচনা করা হয়। মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতিতে কর্মচারীদের যাতে সংকট না হয়, সেই কারণেই কতটা বেতন বাড়ানো সঙ্গত, তা বিবেচনা করে দেখে পে কমিশন।
পশ্চিমবঙ্গে ষষ্ঠ বেতন কমিশন গঠন করা হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম মেয়াদে। বাম জমানায় বেতন কাঠামো নিয়ে বিস্তর ক্ষোভ-অসন্তোষ ছিল। সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে ২০১৫ সালের ২৭ নভেম্বর পে কমিশন (West Bengal 6th Pay Commission) গঠনের কথা ঘোষণা করেছিলেন। অর্থাৎ ষষ্ঠ বেতন কমিশনের গঠনের পর প্রায় দশ বছর কেটে গেছে। এ বছর ২৬ নভেম্বর ১০ বছর পূর্ণ হবে। নবান্নের শীর্ষ সূত্রে খবর, সপ্তম বেতন কমিশনের গঠনের ঘোষণা এ বছরই হতে পারে। সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
দ্য ওয়ালে সবার আগে লেখা হয়েছে যে, বাজেট অধিবেশনে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য ডিএ বাড়ানোর ঘোষণা করা হতে পারে। গত বছর বাজেটেও ৪ শতাংশ ডিএ বাড়ানো হয়েছিল। তার আগে ২০২৩ সালের বড়দিনে ডিএ বাড়ানোর ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এবার বড়দিনে অর্থাৎ গত ২৫ ডিসেম্বর সেই ধরনের কোনও ঘোষণা হয়নি। তাই বাজেটে ডিএ বাড়ানোর ঘোষণার সম্ভাবনা প্রবল। জানিয়ে রাখা ভাল, বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা ৫৩ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা পান। অর্থাৎ কেন্দ্র-রাজ্য মহার্ঘ ভাতার তফাত রয়েছে ৩৯ শতাংশ।
তবে নবান্নের শীর্ষ সূত্রের খবর, বাজেটে সপ্তম পে কমিশন গঠনের ঘোষণা করা হবে কিনা, তা নিয়ে এখনও কোনও আলোচনা হয়নি। অর্থ দফতর এমন কোনও প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে পাঠায়নি। তবে ওই সূত্রের মতে, ২০২৬ সালে বিধানসভা ভোট রয়েছে। তাই তার আগে নতুন পে কমিশন গঠনের ঘোষণা হয়ে যেতে পারে।
এ ব্যাপারে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের সভাপতি ভাস্কর ঘোষ বলেন, 'এই সরকার আমাদের প্রাপ্য ডিএ দেয় না। আর পে কমিশন? প্রায় সব রাজ্যে কেন্দ্রের পে কমিশনই লাগু আছে। এ রাজ্যে নেই। আমাদের দাবি কেন্দ্রের পে কমিশন এ রাজ্যেও কার্যকরী হোক।' একই ভাবে রাজ্য স্টিয়ারিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক সংকেত চক্রবর্তী বলেন, 'আগে আমাদের প্রাপ্য ডিএ টা দিক তাতেই যথেষ্ট। পে কমিশনের আশা নয় পরে করলাম।'
আবার তৃণমূল সমর্থিত রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের কনভেনর প্রতীক কুমার নায়েক বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী আমাদের পাশে ছিলেন ও আছেন। মুখ্যমন্ত্রী ঠিক সময়ে ঠিক আমাদের কথা ভাবেন। সে ডিএ হোক বা পে কমিশন।'
২০১৫ সালে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের ঘোষণা হলেও ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তার সুপারিশ অনুমোদন করা হয়। তার বাস্তবায়ন শুরু হয় আরও পরে। সুতরাং এ বছর সপ্তম পে কমিশনের গঠন হলেও তা বাস্তবায়িত হতে আরও তিন-চার বছর লেগে যেতে পারে। তার অনেক আগেই কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য অষ্টম বেতন কমিশনের সুপারিশ লাগু হয়ে যাওয়ার কথা।