শেষ আপডেট: 1st August 2024 20:20
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ইন্ডিয়া জোটের তখন সলতে পাকানো শুরু হয়েছে। সংসদে একদিন অধীর চৌধুরীকে ডেকে সনিয়া গান্ধী বলেছিলেন, তুমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এত কড়া কথা বোলো না। অন্তত দিল্লিতে বোলো না।
সনিয়ার সেই পরামর্শের পর দিল্লিতে সংবাদমাধ্যমকে কিছুটা এড়িয়েই চলতে শুরু করেছিলেন অধীর। কারণ, তৃণমূলকে নিয়ে কোনও কথা বললে সনিয়া-রাহুল অস্বস্তিতে পড়বেন। আবার না বললে, বাংলায় কংগ্রেসের বিরোধী রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখা মুশকিল।
তাৎপর্যপূর্ণভাবেই এবার লোকসভা ভোটে অধীরের জন্য প্রচারে কংগ্রেসের কোনও কেন্দ্রীয় নেতা বহরমপুরে আসেননি। ভোটের সময়ে প্রদেশ কংগ্রেসকে বিশেষ টাকা পয়সাও দেয়নি এআইসিসি। তাও পরোয়া করেননি অধীর। কিন্তু বহরমপুরে পরাজয়ের পর এবার সনিয়া গান্ধীর কাছে সমস্ত অভিমান-অসন্তোষের কথা উজাড় করে দিলেন বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ।
সূত্রের খবর, সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে সম্প্রতি দেখা করে অধীর বলেছেন, এবার ভোটে আমাকে ত্রিমুখী আক্রমণ সামলাতে হয়েছে। একদিকে পুলিশ-প্রশাসন দিয়ে কংগ্রেসকে কোণঠাসা করার ত্রুটি রাখেনি তৃণমূল। দুই বিজেপি। যারা চড়া দাগের হিন্দু-মুসলমান করে গেছে। আর তিন, খোদ জাতীয় কংগ্রেস তথা এআইসিসি। লোকসভা ভোট চলাকালীন জয়রাম রমেশ ও কেসি বেনুগোপাল লাগাতার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুণগান গেয়েছেন। সব জেনেশুনেও এটা করে গেছেন ওঁরা।
সূত্রের খবর, জয়রামের ভূমিকা শুনে সনিয়াও বিষ্ময় প্রকাশ করেন। আরও বিষ্মিত কেসি বেনুগোপালের ভূমিকা নিয়ে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে অবশ্য মনে করেন, বেনুগোপালের ভূমিকা নিয়ে সনিয়ার বিষ্ময়ের কারণ নেই। অধীর চৌধুরীকে কংগ্রেস লোকসভার নেতা করার পর থেকেই মণীশ তিওয়ারি, আনন্দ শর্মা ও কেসি বেনুগোপাল যে লাগাতার বিরোধিতা করে গেছেন, তা দিল্লিতে সুবিদিত।
তবে সেই পর্ব এখন অতীত। এখন আগ্রহের বিষয় হল, অধীর চৌধুরীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী?
জাতীয় কংগ্রেসের এখন যা গতিবিধি ও মনোভাব তাতে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গেই সমঝোতা করে চলতে চান জয়রাম রমেশরা। প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, এআইসিসির মনোভাব বরাবর এরকমই। সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোট পোক্ত করাটাই এখন অগ্রাধিকার। তার সঙ্গে জুড়েছেন প্রদীপ ভট্টাচার্য, শুভঙ্কর সরকাররাও। যাঁরা তৃণমূলের সঙ্গে জোটে আগ্রহী। ফলে ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আগে কংগ্রেস যে তৃণমূলের সঙ্গে পুরোদস্তুর সমঝোতা করে চলতে চাইছে তা পরিষ্কার।
এবং এতেই একপ্রকার অস্তিত্ব সংকটে পড়েছেন অধীর। বাংলার রাজনীতিতে তাঁর একমাত্র ইউএসপি হল, তৃণমূল বিরোধিতা। তাঁর দল জোড়াফুলের সঙ্গে সমঝোতা করে নিলে অধীরের রাজনীতির পরিসরটাই ছোট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনিতে তাঁর চেনা মুর্শিদাবাদ অচেনা হয়ে গেছে। তীব্র মেরুকরণে ভোট ভাগাভাগি হয়ে গেছে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে।
এরই মধ্যে ত্রিপুরা থেকে রাজ্যসভার একটি আসন খালি হয়েছে। ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। এবার লোকসভা ভোটে জিতেছেন। বাংলার রাজনীতিতে কেউ কেউ ভাসিয়ে দিচ্ছেন যে বিজেপি অধীরকে তাদের দলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে ত্রিপুরা থেকে রাজ্যসভার আসনটি দেওয়া যেতে পারে তাঁকে।
অধীরের কাছে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব আগেও ছিল। মুকুল রায় বিজেপিতে যাওয়ার পর অধীর চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে সেই প্রস্তাব দিয়ে এসেছিলেন। অমিত শাহর সঙ্গে আলোচনা করে অধীরকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন মুকুল। তখন ২০১৮ সাল। নৈশভোজে মুকুলবাবুর যত্ন করার খামতি রাখেননি অধীর। ভালমন্দ খাইয়েছিলেন। রাত সাড়ে ১টা পর্যন্ত চলেছিল সেই আড্ডা। কিন্তু মুকুলের প্রস্তাবে রাজি হননি অধীর। বরং উনিশের লোকসভা ভোটে দাঁতে দাঁত চেপে লড়েছিলেন।
তবে এখন সময় বদলেছে। অধীরের দল কংগ্রেসই তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার পথে হাঁটছে। এই ষাঁড়াশি সংকটের মধ্যে পড়ে অধীর চৌধুরী যে স্থির কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন তা নয়। তবে ভবিষ্যৎ অবশ্যই ভাবাচ্ছে তাঁকে।
এমনিতে অধীর চৌধুরী নিজে থেকে কিছু চাওয়ার লোক নন। সনিয়ার কাছেও কখনও কোনও পদ চাননি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, দাদা এখনও তাকিয়ে রয়েছেন দশ নম্বর জনপথের দিকে। সনিয়া-রাহুল নিজে থেকে যদি তাঁর কোনও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন তো ভাল। নইলে হয়তো দাদাই কিছু একটা ভাববেন।