শেষ আপডেট: 28th May 2023 14:48
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রবীন্দ্রনাথ ব্রিটিশরাজের ভারত দখল নিয়ে লিখেছিলেন, বণিকের মানদণ্ড দেখা দিল রাজদণ্ড (What is Sengol) রূপে। এবার সেই রাজদণ্ডই এসে পড়েছে আলোচনার শীর্ষে। সৌজন্যে, নতুন সংসদ ভবনের (New Sansad Bhavan)) উদ্বোধন ও কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি। তাদের দাবি, স্বাধীনতার পর ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হিসেবে লর্ড মাউন্টব্যাটেন পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন এক রাজদণ্ড (Sengol)। চোল ইতিহাস যার নাম দিয়েছে ‘সেঙ্গোল’। ক্ষমতা ও সত্যের এক অপূর্ব প্রতীক। বস্তুত, নেহরুকে সেই সেঙ্গোল দিয়েছিলেন তামিলনাড়ুর এক শৈব মঠের পুরোহিতরা। কিন্তু বিজেপির মতে, একেবারে খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের টুইটের ভাষায়, যেহেতু কংগ্রেস ‘ভারতীয় সংস্কৃতিকে পছন্দ করে না, তাই সেই সেঙ্গোল চলে গিয়েছিল বিস্মৃতির আড়ালে, এক জাদুঘরে’।
স্বাভাবিকভাবেই বিজেপির এই দাবিকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। ইতিহাসবিদদের একাংশ, এমনকি খোদ রাজমোহন গান্ধী বলেছেন, এরকম কোনও ‘ঐতিহাসিক ঘটনা’র কথা তাঁর জানা নেই।
কিন্তু কী সেই সেঙ্গোল (What is Sengol)? দ্য ওয়াল খুঁজে দেখল তার কিছু ইতিহাস…।
১। এই ‘সেঙ্গোল’ শোভিত হবে লোকসভার স্পিকারের আসনের ঠিক পাশেই। তামিল ভাষায় এর নাম ‘সেঙ্গোল’, যা এসেছে ‘সেম্মাই’ থেকে, অর্থ—ন্যায়পরায়ণ।
২। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মতে, এই ‘সেঙ্গোল’ ভারতের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়ে এই দণ্ডটিই নাকি জওহরলাল নেহরুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন।
৩। এতদিন অবধি উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজের এক সংগ্রহশালায় রাখা ছিল এই সেঙ্গোল।
৪। চোল রাজত্বের সময়কালের এই সেঙ্গোলটি রুপোর তৈরি, ওপরে রয়েছে সোনার প্রলেপ। লম্বায় প্রায় পাঁচ ফুট। ওপরে রয়েছে শিবের প্রিয় ষাঁড় নন্দীর অবয়ব, যা সুবিচারের প্রতীক।
৫। মাদুরাইয়ের বিখ্যাত মীনাক্ষী মন্দিরের দেওয়ালে এক তৈলচিত্রে রয়েছে, দেবী মীনাক্ষী মাদুরাইয়ের রাজার হাতে সেঙ্গোল তুলে দিচ্ছেন। অর্থাৎ, মাদুরাইয়ের রাজাকে স্বয়ং দেবী তাঁর সুশাসনের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দিচ্ছেন।
৬। বিজেপির দাবি, স্বয়ং পণ্ডিত নেহরুই নাকি চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারীকে জিজ্ঞেস করেন, ক্ষমতা হস্তান্তরের চিহ্ন হিসেবে কী করা যায়? রাজাজি তাঁকে এই সেঙ্গোলের কথা জানান।
৭। পরে বিংশতিতম গুরু মহাসন্নিধানম শ্রী শ্রী অম্বালাবণ দেশিকাস্বামী তৎকালীন মাদ্রাজ শহরের এক বিখ্যাত স্বর্ণকারকে এই সেঙ্গোল তৈরির দায়িত্ব দেন। তৈরি হয়ে গেলে যথোপযুক্ত বিধান মেনে সেটি দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং প্রথমে লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে ও পরে ক্ষমতা হস্তান্তরের চিহ্ন হিসেবে পবিত্র গঙ্গাজলে শুদ্ধ করে পণ্ডিত নেহরুর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
৮। ইতিহাসবিদরা যদিও বিজেপির এই দাবিকে মান্যতা দিতে পারেননি। রাজাজির পৌত্র ও জীবনীকার, ইতিহাসবিদ রাজমোহন গান্ধী বলেছেন, তিনি এমন ঘটনা প্রথম শুনলেন।
৯। নেহরুর বিভিন্ন লেখাপত্রের সম্পাদক, অধ্যাপক মাধবন পালত বলেছেন, নেহরু নিয়মিত লেখালেখি করতেন এবং প্রায় প্রতিদিনের ঘটনাবলিই কোথাও না কোথাও লিখে রাখতেন। এত বড় ঘটনা ঘটলে নেহরু সেটা নিশ্চিতভাবেই কোথাও লিখে রাখতেন।
১০। কংগ্রেস নেতৃত্বও একবাক্যে এই ‘ইতিহাস’-কে উড়িয়ে দিয়েছেন। জয়রাম রমেশ বলেছেন, এইসব কথা পুরোপুরি ‘বোগাস’। যার উত্তরে অমিত শাহ লিখেছেন, কংগ্রেস কেন ভারতের সংস্কৃতিকে এত অপছন্দ করে? মঠের অধীনমরা যাকে মান্যতা দিয়েছেন, কংগ্রেস তাকে বোগাস বলছে! কংগ্রেসের উচিত নিজেদের কাজকর্মের ওপর নজর দেওয়া!
বহুতলের চাপে বসে যাচ্ছে নিউ ইয়র্ক, গোটা জীবজগতের ওজনকে ছাপিয়ে গিয়েছে কংক্রিট