শেষ আপডেট: 3rd August 2023 08:25
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মনে আছে নাসার জনপ্রিয় নভশ্চর অ্যাস্ট্রো-ক্রিস্টিনা ওরফে ক্রিস্টিনা কচের কথা। ১১ মাস মহাশূন্যে কাটিয়ে বিশ্বরেকর্ড করেছিলেন তিনি। মহাশূন্যে ক্রিস্টিনা কাটিয়েছিলেন ৩২৮টি পার্থিব দিন-রাত। গা ছমছমে নিকষ কালো আঁধারে মহাশূন্যে হাঁটাহাঁটি (স্পেস ওয়াক) করেছিলেন।
হলিউডের সায়েন্স-ফিকশন ছবি ‘গ্র্যাভিটি’-র কথা মনে আছে। স্পেস স্টেশন থেকে বেরিয়ে মহাকাশে স্পেস ওয়াক করে ফের ফিরে আসার সময় আচমকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মহাশূন্যে হারিয়ে যান এক মহাকাশচারী। ভাসতে ভাসতে অনন্ত শূন্যে বিলীন হয়ে যেতে দেখা যায় তাঁকে। তবে বাস্তবে ঠিক এমনটা হয় না। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানাচ্ছে, যদি স্পেস স্টেশনে কোনও মহাকাশচারীর মৃত্যু হয় তাহলে তৎক্ষণাৎ স্পেস স্টেশনের বিশেষ ক্যাপসুলে চাপিয়ে মরদেহ (If Someone Dies In Space) দ্রুত পাঠানো হবে পৃথিবীতে। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন যেহেতু পৃথিবীর কক্ষপথে, তাই সেখান থেকে পৃথিবীতে দেহ নিয়ে আসার পদ্ধতি অতটা কঠিন নয়। তবে সমস্যা তৈরি হয় যদি মহাকাশচারীরা মহাশূন্যে থাকেন অথবা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ কাটিয়ে একেবারে বাইরে চলে যান।
নাসা জানাচ্ছে, মহাকাশচারীদের দেহ পৃথিবীতে ফেরাতে বিশেষ বডি ব্যাগ বা ক্যাপসুল রয়েছে। সেখানে দীর্ঘদিন দেহ সংরক্ষিত রাখার সুবিধা রয়েছে। পৃথিবীতে ফেরানোর পর প্রথমে দেহ পরীক্ষা করবেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তাতে বিশেষ কোনও ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে। এর পরই সেই দেহের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
চাঁদ বা মঙ্গলের মতো গ্রহ-উপগ্রহে মহাকাশচারীর মৃত্যু হলে তখন দেহ ফেরত পাঠানো খুবই কঠিন। চাঁদ থেকে পৃথিবীতে মরদেহ ফেরাতে যত সময় লাগবে, মঙ্গল থেকে সময় লাগবে আরও বেশি। চাঁদ থেকে যদি কয়েক মাস লাগে তাহলে মঙ্গল থেকে ফিরতে কয়েক বছর লেগে যাবে।
নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর মতো অত দ্রুত রিগর মর্টিস হয় না চাঁদ বা মঙ্গলে। পৃথিবীতে মাধ্যাকর্ষণের টান প্রবল। তাই মৃত্যু হলে রক্ত শরীরের এক জায়গায় জমতে থাকে, একে বলে লিভর মর্টিস (Livor Mortis)। এর পরে অ্যালগর মর্টিস বা শরীর ঠান্ডা হতে থাকে কারণ রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। শরীরের এনজাইম, প্রোটিনগুলো বেরিয়ে ভাঙতে থাকে। শক্ত হতে থাকে পেশি যাকে বলে রিগর মর্টিস। ধীরে ধীরে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ শুরু হয়। এই ব্যাকটেরিয়ারা শরীরের কোষ-কলা খেতে শুরু করে, তখন পচন ধরতে থাকে, গন্ধ বের হয়। মৃতদেহ (If Someone Dies In Space) বেশিক্ষণ ফেলে রাখলে তাতে পচন ধরে ফুলতে শুরু করে।
কিন্তু চাঁদ বা মঙ্গলের অভিকর্ষজ টান পৃথিবীর মতো নয়। তাই সেখানে গিয়ে যদি মৃত্যু হয় তাহলে রিগর মর্টিস প্রক্রিয়া অত দ্রুত শুরু হবে না। লিভর মর্টিসে রক্ত এক জায়গায় জমাট বাঁধবে না। ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণ হবে না, ফলে পচন ধরবে না অত সহজে। কিন্তু অতিরিক্ত ঠান্ডা ও অক্সিজেন না থাকায় মৃতদেহের মমিফিকেশন শুরু হবে। শরীরের জল ভেতরের চর্বিকে ভেঙে ফেলবে। তা বাইরে বেরিয়ে এসে ত্বকের চারপাশে মোমের মতো স্তর তৈরি করবে। চাঁদের আবার ১২০ থেকে ১৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় দেহ জমে পাথর হয়ে যাবে। হাড় ভেঙে যাবে।
আরও পড়ুন: চাঁদে কি জাঙিয়া কাচা যাবে! দীর্ঘদিন একই অন্তর্বাস পরে থাকবেন নাকি মহাকাশচারীরা
নাসা বলছে, চাঁদ বা মঙ্গলে যাওয়ার পথে যদি কারও মৃত্যু হয় তাহলে এর জন্য স্পেশালাইজড বডি ব্যাগ আছে যেখানে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রিত। সেখানে দেহ রাখলে পচন ধরবে না। কিন্তু যদি চাঁদে পা রাখার পরে মৃত্যু হয় বা অন্য কোনও গ্রহ যার দূরত্ব পৃথিবী থেকে অনেক বেশি, সেখানে মৃত্যু হলে দেহ সংরক্ষণ করে পৃথিবীতে নিয়ে আসার উপায় নেই।
এখনও পর্যন্ত মহাকাশ অভিযানে যেতে গিয়ে ২০ জন নভশ্চরের মৃত্যু হয়েছে। ১৯৬৭ সালে অ্যাপোলো-১ মিশনে রকেট উৎক্ষেপণের সময় লঞ্চ প্যাডে আগুন লেগে প্রাণ হারান তিন মহাকাশচারী। ১৯৭১-এ সয়ুজ ১১ মিশনে মৃ্ত্যু হয় তিন নভশ্চরের। ১৯৮৬ সালে নাসার স্পেস শাটল দুর্ঘটনাতে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। মহাশূন্যে যাওয়ার সময় টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে যায় রকেট। নাসা জানাচ্ছে, এমন ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা যদি ঘটে ও দেহ টুকরো হয়ে যায় বা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়, তাহলে সেই দেহ পৃথিবীতে নিয়ে আসা যাবে না। মহাশূন্যেই সমাধি হবে সেই মরদেহের।