শেষ আপডেট: 7th May 2024 14:01
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রায় ২৬ হাজার চাকরিহারাদের মধ্যে কতজন যোগ্য প্রার্থী, কতজনকেই বা অবৈধভাবে নিয়োগ করা হয়েছে, অবশেষে সুপ্রিম কোর্টে সেই হিসাব দিল স্কুল সার্ভিস কমিশন।
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে যাঁদের চাকরি গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে কে যোগ্য এবং কে অযোগ্য তা বাছাই নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছিল। এর আগে গত ২৯ এপ্রিল এসএসসি মামলার শুনানিতেও যোগ্য-অযোগ্য বিভাজন সম্ভব কিনা তা জানতে চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তারপর গত ৩ মে এসএসসি জানায় যে, তারা সুপ্রিম কোর্টে যোগ্যদের পরিসংখ্যান দিতে পারবে।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে এসএসসির আইনজীবী জানান, যোগ্য এবং অযোগ্যদের তালিকা আলাদা করা সম্ভব। সঙ্গে এসএসসির আইনজীবী এও জানিয়েছেন, ২৬ হাজার চাকরিহারাদের মধ্যে ১৯ হাজারে নিয়োগ বৈধ। আর সাত হাজার জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে ফের চাকরি বাতিল মামলার শুনানি ছিল। এর আগের শুনানিতে রাজ্য, এসএসসি, পর্ষদ, চাকরিহারা- সবপক্ষের বক্তব্য শুনতে চেয়েছিল শীর্ষ আদালত। মঙ্গলবার নির্দিষ্ট সময়ে শুনানি শুরুর পর থেকেই রাজ্যকে প্রধান বিচারপতির বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। যদিও যোগ্য-অযোগ্য পৃথকীকরণের প্রশ্নে এসএসসি-র কোর্টেই বল ঠেলে রাজ্য। আদালতে রাজ্যের আইনজীবী দাবি করেন, কারা যোগ্য-কারা অযোগ্য বলতে পারবে এসএসসি। পুরো প্যানেল নাকি অংশবিশেষ বাতিলের প্রয়োজন ছিল, তাও কমিশনই বলতে পারবে।
তারপরই এসএসসি জানায় যে তাদের কাছে ১৯ হাজার যোগ্য চাকরিপ্রাপকের তালিকা রয়েছে ! স্বাভাবিকভাবেই আদালত প্রশ্ন করে, কারা যোগ্য এবং কারা অযোগ্য, তাহলে এতদিন কেন বলতে পারেনি এসএসসি। সেক্ষেত্রে এসএসসির আইনজীবী জয়দীপ গুপ্ত বললেন, ‘‘চাকরি বাতিল আদালতের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। সুপ্রিম কোর্টের অনেক রায়েই এর আগে তা বলা হয়েছে।’’
এদিন সুপ্রিম কোর্টে কমিশন যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের হয়ে সওয়াল করে। এসএসসি এদিন সুপ্রিম কোর্টে কার্যত দায় স্বীকার করে জানায়, মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল থেকে নিয়োগ হয়েছে। ফাঁকা ওএমআর জমা দিয়ে চাকরি হয়েছে। র্যাঙ্ক জাম্প হয়েছে। ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিলের বিরোধিতা করে কমিশন আদালতে সওয়াল করে, "আমরা শুধু অযোগ্যদের পৃথক করার কথা বলছি।" তবে যাঁরা পড়িয়েছেন এতদিন, তাঁরা কেন বেতনের টাকা ফেরত দেবেন, সে প্রশ্নও তোলে কমিশন।
এসএসসির বক্তব্য শুনে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, এসএসসি দায়িত্ববানের মতো কাজ করেনি। শুধু তা-ই নয় এসএসসির পরীক্ষা সংক্রান্ত তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত জালিয়াতি করেছে বলেও মত সুপ্রিম কোর্টের।
এদিন শুনানিতে অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করা নিয়ে শীর্ষ আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়ে রাজ্য সরকার। রাজ্যের আইনজীবীকে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ২০১৬-র নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত শূন্যপদ কেন ২০২২ সালে তৈরি হল? সুপারনিউমেরিক পদ কেন তৈরি হয়েছিল? ব্যাখ্যা দেয় রাজ্য। রাজ্য়ের আইনজীবী জানান, সুপারনিউমেরিক পদ বেআইনি নিয়োগ ঢাকতে তৈরি করা হয়নি। চাকরি বাতিলের ফলে ওয়েটিং লিস্ট থেকে নিয়োগ করার জন্যই সুপারনিউমেরিক পোস্ট তৈরি করা যেতে পারে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তার জন্যই ৬৮৬১ পদ তৈরি করা হয়েছিল।
অন্যদিকে, মধ্যশিক্ষা পর্যদের তরফ থেকে এদিন আদালতে জানানো হয়, এসএসসি যাঁদের সুপারিশ করে, তাঁদের নিয়োগ করে পর্ষদ। তাঁদের আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, "যখন যোগ্য অযোগ্য আলাদা করা সম্ভব, তখন শিক্ষার স্বার্থে আলাদা করা হোক। চাকরিহারাদের মধ্যে ৬ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন অনেকে রয়েছেন। তাঁরা না থাকলে আমরা প্রধান শিক্ষক, সিনিয়র শিক্ষক কোথা থেকে পাব?”
গত ২২ এপ্রিল ২০১৬ সালের এসএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দেয় কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ। চাকরি যায় ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক শিক্ষাকর্মীর।