দ্য ওয়াল ব্যুরো: সেল সেল সেল! কোথাও স্তূপ করা জামা কাপড়, কোথাও জুতো। দোকান ঘিরে দাঁড়িয়ে খদ্দেররা। হাতে নিয়ে চলছে পছন্দ, সমান তালে দরদাম। কেউ কিনছেন, কেউ বা আবার দেখেই চলে যাচ্ছেন (shopping)। এমনই চিত্র কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ সব বাজারেই।
পুজোর আগে কেনাকাটার শেষবেলায় তাই একটুকুও সময় নষ্ট করতে নারাজ শহরের দোকানিরা। খদ্দেরদের পছন্দসই জিনিস দিতে ব্যস্ত তাঁরা। মন্দার বাজারে এইটুকুই তো মন্দের ভাল-- এই সুরই ব্যবসায়ীদের গলায়।
আগের সপ্তাহ পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে সেভাবে বাজার ছিল না। তাই এই শনি-রবির মুখ চেয়ে ছিলেন ব্যবসায়ীরা। শনিবার বৃষ্টির রেশ ছিল না। রবিবার সকাল থেকেই ঝকঝকে আকাশ। তবে দুপুর গড়ালেই আকাশ কালো করে নেমে আসে বৃষ্টির তোড়। বিকেল গড়ালে সেই কালো মেঘ কেটে যাওয়ায় খুশি ব্যবসায়ীরা। আর কিছু না হোক, মানুষ তো বেরোবে, জিনিস তো দেখবে, সেই আশাতেই পসার সাজানো।

বিকেল গড়ালেই ভিড় বাড়ছে। ঠেলাঠেলি-ধাক্কাধাক্কি, চিৎকার, দামাদামি সব মিলিয়ে গমগমে বাজারগুলি। আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যেও প্রিয় উৎসবে নতুন কিছু কেনার তাগিদে মার্কেটগুলোতে ভিড় বাঙালির।
ব্যাবসায়ী মীরা দাস বলছিলেন, জমানো শেষ কড়িটুকু দিয়ে মাল তুলেছেন। স্বামী মারা যাবার পর একার হাতেই দোকান সামলাচ্ছেন তিনি। তাই শেষবেলায় কিছুটা বিক্রি হলেও চিন্তা কমবে তাঁর। মীরাদেবী বলেন, "এতদিন তেমন বিক্রি ছিল না, আজ-কাল বাজার কিছুটা বেড়েছে। তবে আগের মতো বিক্রি নেই একদমই।"
পুজোর বাকি আর মাত্র হাতে গোনা কয়েকদিন। মহালয়ার আগে শেষ শনি-রবি নিয়ে তাই আশাবাদী ছিলেন ব্যবসায়ীরা। শনি-রবিতে কিছুটা চেনা ভিড় ফিরেছে বাজারে। ফুটপাত দিয়ে ভিড়ের ঠেলা খেতে হচ্ছে। তবে আশার মতো বিক্রি নেই ব্যবসায়ীদের।
তবু শেষ বাজারে যা ভিড় হয়েছে, সেই তুলনায় ব্যবসায়ীদের মুখে কি হাসি ফুটছে? দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে গড়িয়াহাটে জামা-কাপড়ের দোকান বিনয় সাহার। 'মামা' নামে এক ডাকে চেনে মার্কেটের সবাই। শনি-রবির ভিড় দেখেও আক্ষেপ যাচ্ছে না তাঁর গলায়-- "ভিড় যা দেখছো, অধিকাংশই তো কিছু কিনছে না। একজনের সঙ্গে পাঁচজন আসছে।"

হাতিবাগানে গত ১০-১১ বছরের জামা-কাপড়ের দোকান সঞ্জয় দাসের। তবে বাজারের এমন খারাপ অবস্থা আগে দেখেননি তিনি। তাঁর কথায়, "আগে যদি দিনে হাজার বিশ টাকার বিক্রি হত, এখন তার অর্ধেক তুলতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। ভিড় করে আসছে সবাই, অনেক কিছু দেখছে। কিন্তু হয় কেউ একটা কিনছে, কেউ তো কিনছেনই না। আগে পাঁচটা কিনলে এখন দুটো কিনেই বাজার শেষ করছে।"
তবে শত অভিযোগেও, শেষ মুহূর্তে কিছুটা বাজার ঘুরেছে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
আর্থিক কারণে অন্য বছরের মতো এমনিতেই পসার নেই দোকানে। বিক্রি হচ্ছে কোনরকমে। 'দাঁড়াবেন না, এগিয়ে চলুন', চেনা আওয়াজ ইতিউতি শোনা যাচ্ছে। তবে ভিড়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিক্রি না হওয়ায় নিরাশ ব্যবসায়ীরা। 'আর কত দেখবেন, এবার কিনুন', 'কিনবেন না? ব্যাগ কোথায়?' বিরক্ত দোকানিদের গলায় এখন সুর বদলেছে।