শেষ আপডেট: 7th December 2024 22:13
এক সময়ে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্নেহভাজন ছিলেন তিনি। মাত্র ৩৫ বছর বয়সের একজন কমরেডকে সংসদের উচ্চকক্ষে পাঠানোর নেপথ্যে বুদ্ধদেববাবুর আশীর্বাদ ছিল বলেই মনে করা হয়। শনিবার সেই ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কেই (Ritabrata Banerjee) রাজ্যসভা নির্বাচনে প্রার্থী করল তৃণমূল। তার পর দ্য ওয়ালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঋতব্রত যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) মূল্যায়ণ করলেন তা সিপিএমের বহু সমর্থক বা কমরেডের গাত্রদাহের জন্য হয়তো যথেষ্ট।
প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণার পর দ্য ওয়ালকে ঋতব্রত বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে একটাই কথা বলার ইচ্ছা হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা ধার করেই বলছি, ‘তব চরণে নত মাথা’।
বর্তমানে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত। এদিন তিনি বলেন, “সিপিএমের ক্লাসে পড়তাম লেনিনের (Vladimir Lenin) সেই বিখ্যাত কথাটা—'Politics begin where the masses are, not where there are thousands, but where there are millions, that is where serious politics begin'। অর্থাৎ "রাজনীতি শুরু হয় সেখানে, যেখানে জনগণ থাকে। হাজার মানুষের মধ্যে নয়, বরং যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ থাকে, সেখানেই প্রকৃত এবং আসল রাজনীতি শুরু হয়।"এই কথাটা আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে উপলব্ধি করেছি”।
২০১৭ সালে ঋতব্রতকে বহিষ্কার করে সিপিএম। অথচ সেই ঋতব্রত যে তৃণমূলের বড় সম্পদ হয়ে উঠেছেন এদিন তা কার্যত বুঝিয়ে দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ঋতব্রতর পরিশ্রম, তাঁর অধ্যবসায় ও পারফরমেন্সের তারিফ করেছেন অভিষেক। আবার ঋতব্রতর ধৈর্য্যের প্রশংসা করেছেন আই-প্যাকের অন্যতম কর্তা প্রতীক জৈনও।
বিপরীতে ঋতব্রতও যেন দলনেত্রীর প্রতি তাঁর আনুগত্য ও নিষ্ঠা বোঝানোর ত্রুটি রাখেননি। তা ছাড়া এও বোঝাতে চান বামপন্থা থেকে তিনি বিচ্যূত নন। বরং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে গরিব ও প্রান্তিক মানুষের সামাজিক অধিকারের জন্য কাজ করছেন, সেটাই প্রকৃত বামপন্থা।
ঋতব্রতর কথায়, "আমাকে রাজ্যসভায় পাঠানোর সময়ও দলের সঙ্গে বহু বিষয়ে আমার মতানৈক্য ছিল। তখন আমি দলের নির্দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করেছি। কিন্তু তৃণমূলে এসে উপলব্ধি করেছি, সিপিএমের সেই লেখা বা বক্তব্য যাচাই না করেই আমরা যা বলতাম তা কতটা অযৌক্তিক ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে 'বিনামূল্যে সামাজিক সুরক্ষা যোজনা' (BMSSY) যে ভাবে শ্রমিকদের জীবনে পরিবর্তন এনেছে, তা সত্যিকারের বামপন্থার আদর্শকেই সার্থক করেছে।"
ঋতব্রত এও বলেন, “বামপন্থার কোনও ইজারা হয় না। আমি মনে করি বামপন্থী মানে সিপিএম রবার্ট স্ট্যাম্প দিয়ে দেবে বিষয়টা সেরকম নয়। তাঁর কথায়, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার মতো। মানুষ তাঁকে অনুসরণ করেন। বামপন্থা মানে শুধু দস্তাবেজে লেখা নয়, তা দিয়ে মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই পরিবর্তনের প্রতীক।"
তৃণমূলের মধ্যে ঋতব্রত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থাভাজন বলে পরিচিত। এদিন অভিষেক তাঁর ব্যাপারে ট্যুইট করায় তা নিয়ে দলের মধ্যে জল্পনা তৈরি হয়েছে। ঋতব্রত অবশ্য সযত্নে সেই তর্ক এড়িয়ে গিয়েছেন। তাঁর কথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী। আমার অভিষেকেরও সর্বময় নেত্রী তিনি। সুতরাং এ নিয়ে দ্বন্দ্বই নেই।
ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমগ্র সাক্ষাৎকারটির লিঙ্ক রইল উপরে।