শেষ আপডেট: 16th September 2024 14:12
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিশ্বকর্মা পুজো মানে দুর্গাপুজোর আনন্দ ঘুড়ির মতো আকাশে ডানা মেলে ওড়ার দিন শুরু। কিন্তু, এবছর যেন কেমন আগমনির আগেই বিজয়ার সুর ভেসে বেড়াচ্ছে শহরের আনাচেকানাচে। কলকাতার মন খারাপ। তাই তার রেশ লেগেছে বিশ্বকর্মা পুজোতেও। শিল্প-কারখানা, কারিগর দেবতার পুজো তাই নমো নমো করে চলছে শিল্পশহরগুলি সহ গোটা বাংলাতেই।
আনাজপাতির দাম থেকে মাছ-মাংসের দামে তেমন কোনও হেরফের ঘটেনি আশ্চর্যজনকভাবে। তিনদিন ধরে মুখকালো আকাশের মতোই তাই ব্যবসায়ীদের পুঁজিতে লেগেছে টান। বিশেষত আর জি কর কাণ্ড নিয়ে শহর কলকাতা থেকে গোটা রাজ্য যেভাবে তেতে রয়েছে, তার ছাপ পড়েছে পাড়ার গলির মুখে থাকা রিকশ ও অটো স্ট্যান্ডগুলিতেও। সব মিলিয়ে উমার আগমনের আগে উৎসবের গা-ঘামানোর ম্যাচ বিশ্বকর্মা পুজো কেমন সোঁদাপড়া কালি পটকার মতো ফুসফুস করে জ্বলছে, ফাটতে চেয়েও ফাটছে না।
কোভিডকাল বাদ দিলে অন্যান্যবার বিশ্বকর্মা পুজোতে দুর্গাপুজোর স্বাদ মেলে হুগলি নদীর দুই কূল সহ আসানসোল, দুর্গাপুর, রানিগঞ্জ, মেদিনীপুর, হলদিয়া, কল্যাণী এলাকায়। এমনিতেই রাজ্যে শিল্পের হাল খুবই শোচনীয়। বহু বড় বড় শিল্প হয় বন্ধ হয়ে গিয়েছে, নয়তো ধুঁকছে। তাই যেসব কারখানায় এক সময় বিরাট আকারে বিশ্বকর্মা পুজো হতো, সেখানে এখন জোনাকিও জ্বলে না। এই মরা শিল্পের বাজারে বিশ্বকর্মা বেঁচে রয়েছেন আদতে বাস গুমটি, রিকশ, অটো-টোটো স্ট্যান্ড এবং ক্ষুদ্রশিল্পগুলির কুটীরঘরে।
বাজার ঘুরে দেখা গেল, এ বছর বিশ্বকর্মা পুজোয় তেমন কোনও টান নেই। প্রতিমার দামে খুব একটা হেরফের আসেনি। তিন ফুট থেকে সাত ফুট উচ্চতার প্রতিমা দেড় থেকে তিন-সাড়ে তিন হাজারের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। তিনদিন বৃষ্টির পরেও ফুলের বাজারে যে আগুন জ্বলার আশঙ্কা করা গিয়েছিল তাও তেমন একটা নেই। পাইকারি বাজারে মোটামুটি ১৪০-১৫০ টাকা কেজিতে প্রায় সব ফুলই মিলছে।
বিশ্বকর্মা পুজো মানেই কচি পাঁঠা কিংবা রেওয়াজি খাসি মাস্ট। প্রত্যেকবারই এই সময় দাম খানিকটা চড়ে। কিন্তু সোমবার বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রেওয়াজি খাসি ও কচিপাঁঠার মাংসের দাম বাড়ছে না। কারণ, বিক্রিবাট্টার টানে মন্দা। আগে যেভাবে ছোট ছোট কারখানার মালিকরাও পাত পেড়ে শ্রমিকদের খাওয়াতেন, বাজার মন্দা যাওয়ায় তাঁদের অনেকেই সেই পন্থা বন্ধ করে দিয়েছেন। তার জায়গা নিয়েছে বিরিয়ানির প্যাকেট।
মাংসের বিকল্প হচ্ছে বাঙালির প্রিয় মাছ। কিন্তু, অতীতের মতো ইলিশ মাছ খাওয়ানোর সাদ্ধ বহু মালিকই হারিয়েছেন। কারণ, প্রকৃত স্বাদের ইলিশের অভাব এবং দাম। তাই কাটা পোনাই ভরসা। কারখানা শ্রমিকদের হাতির খোরাক জোগাতে সাড়ে ৪০০ টাকাতেই বড় কাতলা মিলছে বাজারে। তেমন কোনও আকাশছোঁয়া দাম চড়েনি। তাই অনেকেই নেমে এসেছেন খিচুড়ি-ল্যাবড়ায়।
শুধু একটি বস্তুতে বাজার চাঙ্গা আছে। তা হল দেশে প্রস্তুত বিলাতি। সোমবার থেকেই অধিকাংশ বিলাতির দোকানে দেখা গেল দেশি ও বিদেশি দুই কাউন্টারেই দীর্ঘ লাইন। কারণ মঙ্গলে পুজোর পর থেকেই উৎসব শুরু হবে। ফলে স্টক আগে থেকে ঘরে তোলা চাই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুজোর আর দিন কয়েক বাকি। তাই গৃহস্থ থেকে খেটেখাওয়া শ্রমিক-মজদুর সকলেই এখন সামান্য হলেও কেনাকাটা করতে ব্যস্ত। ফলে, বিশ্বকর্মার ঘুড়িতে একটু টান রেখে সংসারের ভোঁকাট্টা হয়ে যাওয়া বাঁচাতে শক্ত হাতে লাটাই মুঠোয় চেপে ধরেছেন।