শেষ আপডেট: 8th March 2025 17:48
প্রতিদিন নিয়ম করে সংসার সামলে শান্তিপুর স্টেশন থেকে সকালের ট্রেন ধরেন শান্তিপুর বাইগাছি পাড়া বিলপুকুরের বাসিন্দা বিশাখা। সারাদিন ট্রেনে ট্রেনে লজেন্স বিক্রি করে বাড়ি ফেরেন রাতে। কিন্তু এতেই শেষ নয়, রাত্র দুটো পর্যন্ত লজেন্সের প্যাকেট তৈরি করেন। কাজের শেষে দুই চোখের পাতা এক করতে করতেই ফুটে ওঠে ভোরের আলো। সংসারের কাজ সামলে তারপর আবার ফেরি নিয়ে ট্রেনে ওঠার পালা।
শুরুটা কিন্তু এমন ছিল না। ২৫ বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন প্রতিবেশী এক যুবককে। তাদের কোল আলো করে তিনটি সন্তানও হয়। তাঁত বনে সুখেই সংসার চলছিল। কিন্তু মারণ রোগ দেখা দেয় স্বামীর। অনেক চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি তাঁকে। এরপরেই শুরু বিশাখার লড়াই। তাঁত বুনে তিন ছেলেকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। তাই মাঝেমধ্যে অনুষ্ঠান বাড়িতে রান্নার কাজ করতেন। কিন্তু তাতেও সংসার চলছিল না। এরপর এক নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ট্রেনে হকারি করার কার্ড করেন। শুরু হয় নতুন জীবন।
বিশাখার কথায়, "কী করে পসরা নিয়ে ভিড় ট্রেনে উঠব প্রথম প্রথম সে কথাই ভাবছিলাম। চিড়েভাজা, চালভাজা আর লজেন্স নিয়ে ট্রেনে উঠি। কটা দিন এমনটাই চলে। পরে বুঝতে পারি চিড়েভাজা-চালভাজা অনেকেই বিক্রি করছেন। কিন্ত লজেন্সটা তেমন কেউ নয়। তাই শেষপর্যন্ত এটাকেই বেছে নেই। এখন প্রতিদিন ট্রেনে উঠে লজেন্স বিক্রি করি। সেই আয়েই কোনওমতে চলে সংসার।"
শান্তিপুরের বাইগাছি পাড়ায় ছোট্ট একটি টিনের ঘরই বিশাখার মাথা গোঁজার আস্তানা। আর্থিক অনটনের কারণে তিন ছেলেকে সেভাবে পড়াশোনা করাতে পারেননি। বিশাখার বড় ছেলেও এখন মায়ের সঙ্গে ট্রেনে হকারি করেন। আর বাকি দুই ছেলের একজন গেছে ভিনরাজ্যে। ছোটছেলেকে ঢুকিয়ে দিয়েছেন দোকানের কাজে। ট্রেনে হকারি করে সারাদিনে যা অর্থ উপার্জন হয় তা সংসারের পেছনেই খরচ হয়ে যায়। ঘরটা আর কিছুতেই সারানো হয় না। আক্ষেপ বৃষ্টি হলেই যে ঘর ভেসে যায় জলে। পুরসভায় বারবার আবেদন করেও মেলেনি সরকারি ঘর। তবে আশ্বাস পেয়েছেন অনেক। এখন সেই ভরসাতেই রয়েছেন রেলের হকার বিশাখা।