শেষ আপডেট: 21st September 2024 15:42
প্রীতি সাহা
৯ অগস্ট। আরজি কর মেডিক্যালের ওটিতে সিনিয়রের সঙ্গে ডিউটি করছিলেন ইএনটির তৃতীয় বর্ষের ছাত্র-চিকিৎসক আসফাকুল্লা নাইয়া। খবর পান, সেমিনার হলে তাঁদেরই এক সহপাঠীর ক্ষতবিক্ষত দেহ পড়ে রয়েছে। সিনিয়রকে বলে তখনই ওটি থেকে বেরিয়ে সহপাঠী কয়েকজনের সঙ্গে পৌঁছেছিলেন সেমিনার হলে।
তারপরে ঠিক কী ঘটেছিল? কী দেখেছিলেন? একান্ত সাক্ষাৎকারে দ্য ওয়ালকে জানালেন আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম প্রতিবাদী মুখ, কাকদ্বীপের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা তরুণ যুবক।
বাবা মারা গেছেন দু'বছর আগে। মা গৃহবধূ। বাড়িতে রয়েছে ছোট-ভাইবোন। কাকদ্বীপের রামতননগর গ্রামে বাড়ি। ২০১৪ সাালে যে গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছে। আসফাকুল্লার বাড়িতে টিভিও নেই। বলছিলেন, "জীবনে কখনও কোনও রাজনৈতিক দলের মিছিলেও হাঁটিনি। পড়াশোনা নিয়েই থেকেছি।"
কথা প্রসঙ্গে ৯ অগস্টে ফিরে যান ইএনটির তৃতীয় বর্ষের পিজিটি। বলছিলেন, "ওখানে পৌঁছে পুলিশের একটা তৎপরতা দেখেছিলাম, কত তাড়াতাড়ি দেহটা বের করা যায় এবং পোস্টমর্টেম করে নিজেদের মতো গুছিয়ে কাহিনী তৈরি করা যায় আর কি! মাঝে পুলিশি বাধা, সিভিক ভলান্টিয়াররা লাঠি হাতে চলে এসেছিল আমাদের সরাতে, আমরা সরিনি।"
খানিক থেমে বলেন, "ভাবতে পারছেন অন ডিউটিতে থাকা একটা বোন, আমাদের সহপাঠী তাঁর ওপর অত্যাচার হল, অথচ সেটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। চোখের সামনে ওই দৃশ্য দেখে ক্ষোভ, ব্যথায়, যন্ত্রণায় কেঁদে ফেলেছিলাম। কান্নার ভিতর থেকে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। তা থেকেই এই আন্দোলন।"
আসফাকুল্লার কথায়, "আইন সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই, তবে একটা বিষয় বুঝেছিলাম, দেহটাকে আটকাতে হবে, অন্তত ম্যাজিসট্রেট আসুক, তাঁর উপস্থিতিতে বাকি কাজ হোক।"
এরপর আর সাতপাঁচ ভাবেননি। আসফাকুল্লা-সহ আরও কয়েকজন সেমিনার রুমে প্রথম নির্যাতিতার দেহ আটকে দিয়েছিলেন। স্লোগান তুলেছিলেন, ম্যাজিসট্রেট না আসা পর্যন্ত দেহ বের করতে দেব না।
সেই শুরু আন্দোলনের। বিনিময়ে লাখো লাখো মানুষকে যেমন পাশে পেয়েছেন তেমনই অগুনতি হুমকিও এসেছে। কাকদ্বীপের প্রত্যন্ত গ্রামের তরুণের কথায়, "১৪ অগস্ট মধ্যরাতে আরজি করে আমাদের আন্দোলন মঞ্চে যখন হামলা হল, তখন স্টেজে এসে মাইক নিয়ে আমার নাম করেও খোঁজা হয়েছে।"
অন্যদের মতো শনিবার থেকে কাজে ফিরেছেন আসফাকুল্লাও। বললেন, "আমাদের একটাই দাবি, জাস্টিস ওনলি জাস্টিস।"
২০১৮ সালে কলকাতা ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। বিভিন্ন জায়গায় হাউস স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন। অস্থায়ীভাবে কাজ করেছেন চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতালেও। পিজিটি কোর্স শেষের পর আরও বেশি করে চিকিৎসা পরিষেবায় নিজেকে যুক্ত রাখতে চান।
বলছিলেন, "ডাক্তার তৈরি হতে গেলে অনেক টাকা লাগে। সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় ডাক্তার তৈরি হয়। ফলে সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। একজন ভাল চিকিৎসক, যিনি মানুষের পাশে থাকেন, আগামীদিনে এভাবেই নিজেকে দেখতে চাই।"