শেষ আপডেট: 8th March 2025 17:39
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: উত্তরপ্রদেশ বা বিহার নয়। সামাজিক বৈষম্য ও অস্পৃশ্যতার ঘটনা সামনে এল রাজ্যের পূর্ণ স্বাক্ষর জেলা পূর্ব বর্ধমানে। গ্রামের শিবমন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশের অধিকার দিতে হবে। এই দাবি ঘিরে দুইপক্ষের সংঘাতে উত্তপ্ত হল কাটোয়ার গীধগ্রাম।
প্রায় দু'সপ্তাহ আগে ঘটনার সূত্রপাত। মাঝে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে দুই পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসে বিষয়টি মিটমাট হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার একই ইস্যুতে ফের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। অশান্তি এড়াতে এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।
গীধগ্রামে আছে সাড়ে তিনশো বছরের পুরানো একটি শিবমন্দির। এই শিব 'গীধেশ্বর' নামে পরিচিত। সারাবছর নিত্যসেবা হয় গ্রামবাসীদের আরাধ্য দেবতা গীধেশ্বরের। শিবরাত্রি পালিত হয় ধুমধাম করে। হয় গাজন উৎসবও। স্থানীয় সূত্রে খবর, শিবরাত্রির দু-তিন দিন আগে গীধগ্রামের দাসপাড়ার কয়েকজন বাসিন্দা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, গীধেশ্বরের মন্দিরের পুজো দিতে দেওয়া হচ্ছে না দাসপাড়ার শতাধিক পরিবারের সদস্যদের। মন্দিরে ঢুকতে গেলে গালিগালাজ করা হচ্ছে তাঁদের।
এই ধরনের অভিযোগ তুলে দাসপাড়ার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা কাটোয়া মহকুমা প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন, যাতে তাঁরা শিবরাত্রির দিন গীধেশ্বর শিবের পুজো করার অধিকার পান। বিষয়টি নিয়ে গ্রামে উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ায় তড়িঘড়ি হস্তক্ষেপ করে প্রশাসন। কাটোয়ার মহকুমাশাসক অহিংসা জৈনের উদ্যোগে গত ২৮ ফ্রেবুয়ারি মহকুমাশাসকের অফিসে বৈঠক হয়। কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী, কাটোয়া মহকুমা পুলিশ আধিকারিক কাশীনাথ মিস্ত্রি, কাটোয়া ১ নম্বর বিডিও, গীধেশ্বর মন্দির কমিটির কর্মকর্তারা এবং দাসপাড়ার কয়েকজন প্রতিনিধি ওই বৈঠকে ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় গ্রামের দেবতার পুজোর অধিকার গ্রামবাসীরা সমানভাবেই পাবেন। দু'পক্ষই তাতে সম্মতি দেয়।
কিন্তু ফের উত্তেজনা ছড়ায় গীধগ্রামে। দাসপাড়ার বাসিন্দা এককড়ি দাস, মদন দাসদের অভিযোগ,তাঁরা শিবমন্দিরে পুজো দিতে গেলেও তালা খোলা হয়নি। পুজো দিতে দেওয়া হয়নি। যদিও গীধেশ্বর শিবের এক সেবাইত মাধব ঘোষ বলেন, "প্রতিদিনের মতো নিত্যসেবা পুজোর পর পুরোহিত গর্ভগৃহের দরজা বন্ধ করে চলে যান। সন্ধ্যার আগে ওই দরজা খোলার বিধি নেই। কিন্তু দাসপাড়ার কিছু লোক দাবি করছিলেন ফের গর্ভগৃহ খুলে দিতে হবে। তখনই গ্রামের মানুষ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।"
মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে ইতিমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাতে গীধেশ্বর শিবের পুজোর তিন শতাব্দী প্রাচীন নিয়মনীতি উল্লেখ করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পূর্বপুরুষদের বেঁধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী গীধেশ্বর শিবের পুজোয় মালাকার সম্প্রদায় মন্দিরের ভিতর পরিষ্কার করেন। ঘোষ সম্প্রদায় ভোগের জন্য দুধ ছানা ইত্যাদি দেন। কুম্ভকার মাটির হাঁড়ি সরবরাহ করেন। হাজরা সম্প্রদায় মশাল জালানোর দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়া কোটাল,বাইন ইত্যাদি সম্প্রদায় নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু ব্রাহ্মণ ব্যতীত গর্ভগৃহে কেউ প্রবেশ করতে পারেন না। এটাই তিন শতাব্দী ধরে চলে আসছে। তাই এই প্রথা যাতে না ভঙ্গ করা হয় সেজন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন গ্রামবাসীদের একাংশ।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বলেন, "প্রথমত এই সব বিষয় শুধুমাত্র প্রশাসন দিয়ে হবে না। আগে মানুষকে সচেতন করতে হবে। শুধু গীধগ্রাম নয়, জেলায় আরও কয়েকটি জায়গায় একই রকমভাবে অনেককে মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয় না। এরজন্য লাগাতার সচেতন করতে হবে। মানুষজনকে বোঝাতে হবে। নাহলে এত সহজে এই মিথ ভাঙবে না।"
কাটোয়া মহকুমা পুলিশ আধিকারিক কাশীনাথ মিস্ত্রি বলেন, পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে আছে। গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।