শেষ আপডেট: 20th August 2023 10:47
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাস্তা হোক বা মহাকাশ, বেপরোয়া গতি মানেই দুর্ঘটনা। আর সেটাই ঘটল রাশিয়ার চন্দ্রযানে। চাঁদের কক্ষপথ থেকে সটান ডিগবাজি খেয়ে ভেঙেচুরে চাঁদের মাটিতেই আছড়ে পড়ল লুনা-২৫ (Luna-25)। বেপরোয়া গতির পরিণাম মৃত্যু। চাঁদ-জয়ের আগেই ধ্বংস হয়ে গেল রাশিয়ার স্বপ্ন।
৪৭ বছরের অপেক্ষা শেষ। সেই ১৯৭৬ সালে লুনা-২৪ পাড়ি দিয়েছিল চাঁদে। সেই মিশনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লিওনিড ব্রেজনেভ। তারপর থেকে আর চাঁদমুখো হয়নি রাশিয়া। লুনা-২৫ (Luna-25) যদি চাঁদে নামতে পারত, তাহলে ফের একবার ইতিহাস তৈরি করত রাশিয়া। ভারতের আগেই চাঁদ-জয় করে ফেলত রুশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস।
মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতিযোগিতার দৌড় আর বেপরোয়া গতিই কাল হল লুনার (Luna-25)। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফট ল্যান্ড করা অত সহজ নয়। প্রথমত চাঁদের আকর্ষণের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চাঁদের পরিমণ্ডলে ঢুকতে হবে, তারপর হাল্কা পালকের মতো নামতে হবে চাঁদের মাটিতে। এর জন্য সময়ের মাপ এবং গতির সঠিক পরিমাপ দরকার। এর দুটোই রাশিয়া করেনি।
পৃথিবী আর চাঁদের আকর্ষণের মধ্যে পার্থক্য আছে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ পার হতে গেলে গতি বাড়িয়ে একের পর এক কক্ষ পেরোতে হয়। কিন্তু চাঁদের ক্ষেত্রে গোটা ব্যাপারটাই উল্টো। সেখানে গতি কমিয়ে ধীরে ধীরে উপর থেকে নীচে নামতে হয়। চাঁদের প্রতিটা কক্ষে পা ফেলতে গেলে সতর্ক থাকতে হয়। গতি সামান্য বেশি হলেই মহাকাশযান হয় ভেঙে পড়বে না হলে চাঁদের কক্ষপথের বাইরে ছিটকে গিয়ে মহাকাশে হারিয়ে যাবে। ভারতের চন্দ্রযানের ল্যান্ডার খুব সাবধানে হিসেব কষেই সেই চ্যালেঞ্জ উতরে গেছে। পরপর দুবার ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ডিবুস্টিং (Deboosting) করে ল্যান্ডারের গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করেছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। কোনও তাড়াহুড়ো, শর্টকাট সেখানে ছিল না। যে কক্ষপথে যেমন গতির দরকার, ঠিক সেইভাবেই অঙ্ক কষে চন্দ্রযানকে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু লুনা (Luna-25) করেছে এর ঠিক বিপরীত। হইহই করে দৌড়তে গিয়ে একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: ডিগবাজি খেয়ে চাঁদে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল লুনা-২৫, শর্টকাটে যেতে গিয়েই মহাকাশে সমাধি
চাঁদের নামার আগে শনিবার ল্যান্ডার লুনা ২৫-র শেষ ল্যাপের কক্ষপথে প্রবেশের কথা ছিল। যার পোশাকি নাম প্রি ল্যান্ডিং ওরবিট। কিন্তু সেখানে ঢোকার মুখেই লুনা ২৫-এ যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। এর পরই সেটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, চাঁদের সর্বশেষ কক্ষে এসে গতি কমিয়ে 'ধীরে চলো' নীতি নিতে হত লুনাকে। তা না করে গতি বাড়িয়েই লুনা-২৫ কে চাঁদে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা হয়। যার পরিণামেই এমন দুর্ঘটনা ঘটে। চাঁদের আকর্ষণের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চাঁদের মাটিতেই ভেঙে পড়ে রুশ চন্দ্রযান। শেষ কক্ষপথ থেকে সটান ছিটকে গিয়ে চাঁদে আছড়ে পড়ে।
আগামীকাল ২১ অগস্টই চাঁদের নামার কথা ছিল লুনার। ভারতের আগেই রাশিয়া চাঁদে নামছে বলে খবর ছড়িয়েছিল। তবে তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। বিজ্ঞানীদের ধারণা, চাঁদ জিতে নেওয়ার নেশায় বেপরোয়া গতিতে যদি না দৌড়ত রাশিয়ার চন্দ্রযান, তাহলে এত বড় বিপর্যয় ঘটত না। চাঁদের আঁধার পিঠে চিরতরে হারিয়ে যেতে হত না লুনাকে।