দ্য ওয়াল ব্যুরো : ৫৯ বছর ধরে গাঁজাকে বিপজ্জনক মাদকের তালিকায় রেখেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। রাষ্ট্রপুঞ্জের মাদক বিষয়ক এক কনভেনশনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, গাঁজা ও চরসকে বিপজ্জনক মাদকের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারতও গাঁজাকে বিপজ্জনক মাদকের তালিকা থেকে সরানোর সিদ্ধান্তে সায় দিয়েছিল। গত ২ জুন রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রেস বিবৃতিতে একথা জানানো হয়েছে।
গত বুধবার ইউএন কমিশন অব নারকোটিক ড্রাগসের ৬৩ তম অধিবেশন বসে। রাষ্ট্রপুঞ্জের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "কমিশন অব নারকোটিক ড্রাগসের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, গাঁজাকে ১৯৬১ সালের সিঙ্গল কনভেনশন অব নারকোটিক ড্রাগসের চার নম্বর তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। ওই তালিকায় হেরোইনের মতো মাদককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। অর্থাৎ রাষ্ট্রপুঞ্জ এতদিন মনে করত, গাঁজা হল হেরোইনের মতোই বিপজ্জনক মাদক।"
কমিশন অব নারকোটিক ড্রাগস সংস্থাটির সভ্য মোট ৫৯ টি দেশ। ভারতও তার অন্যতম। সংস্থার সভায় গাঁজাকে বিপজ্জনক মাদকের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব পেশ হলে ভারত এবং ইউরোপের অনেকগুলি দেশ তার পক্ষে ভোট দেয়। চিন, পাকিস্তান ও রাশিয়ার মতো ২৫ টি দেশ গাঁজাকে বিপজ্জনক মাদকের তালিকা থেকে সরানোর বিরোধিতা করে। ভোটদানে বিরত থাকে ইউক্রেন।
রাষ্ট্রপুঞ্জের বক্তব্য, এর মাধ্যমে বিভিন্ন মাদককে ওষুধ হিসাবে ব্যবহারের পথ খুলে দেওয়া হল। ভারতের নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যানসেস অ্যাক্ট (এনডিপিএস), ১৯৮৫ অনুযায়ী গাঁজা উৎপাদন, কাছে রাখা বা পরিবহণ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে হু প্রস্তাব দেয়, গাঁজাকে বিপজ্জনক মাদকের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হোক। কমিশন অব নারকোটিক ড্রাগসের সামনে গত মার্চ মাসে ওই প্রস্তাব পেশ করা হয়।
সম্প্রতি অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পরে তাঁর বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীকে মাদক আইনে গ্রেফতার করা হয়। রিয়ার ভাই শৌভিকও ওই আইনে গ্রেফতার হয়েছিলেন।
রিয়ার বিরুদ্ধে এনডিপিএস আইনের ২৭এ, ২১, ২২, ২৯, ২৮ ধারায় মামলা করা হয়। ওই আইনের ২১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তির কাছে বেআইনি মাদক দ্রব্য পাওয়া গেলে, বেআইনি মাদক দ্রব্য কেনা বা বেচা, উৎপাদন কিংবা তৈরি করতে দেখা গেলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এখানে মাদক তৈরি বলতে কোকেন, গাঁজা, চরস, হাসিস, আফিম থেকে তৈরি মাদক ইত্যাদি সবই বোঝায়। আটক মাদক দ্রব্যের পরিমাণের ভিত্তিতে শাস্তির বিধান দেওয়া হয়েছে। অল্প পরিমাণে মাদক পাওয়া গেলে ৬ মাস পর্যন্ত জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। আটক করা মাদকের পরিমাণ বেশি হলে ১০ বছর পর্যন্ত হাজতবাস ও ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
২২ নম্বর ধারা: এই ধারাতেও মাদক সঙ্গে রাখা বা তার কেনা বেচা ও পাচারের বিরুদ্ধে বিধান দেওয়া হয়েছে। তবে ফারাক হল, এই ধারায় বিধান দেওয়া হয়েছে বাণিজ্যিক পরিমাণে মাদক মজুত ও কেনা বেচা এবং পাচারের বিরুদ্ধে। সে ক্ষেত্রে সশ্রম কারাদণ্ডের মেয়াদ হবে ন্যূনতম দশ বছর। তা বেড়ে সর্বোচ্চ কুড়ি বছর পর্যন্ত হতে পারে।
২৭ এ ধারা: নারকোটিক ড্রাগ বা সাইকোট্রপিক জিনিস তথা কোকেন মরফিন সেবনকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলা হয়েছে। শাস্তির বিধান উপরের দুই ধারার মতোই।
২৮ ও ২৯ নম্বর ধারা: এই দুই ধারায় মাদক সংক্রান্ত অপরাধে প্ররোচনা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।