শেষ আপডেট: 28th November 2022 03:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সরকার চায় ভারতবাসী প্রতিদিন নিয়ম করে ধ্যান করুক। সে জন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে ধ্যানের উপকারিতা বোঝাতে প্রচার চায় তারা। দেশে উচ্চশিক্ষার নিয়ামক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি (UGC) সমস্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুল বোর্ড ইত্যাদিকে এই ব্যাপারে চিঠি পাঠিয়েছে।
এ বছর স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘হর ঘর তেরঙ্গা’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন। দেশবাসীকে বলেছিলেন, ১৫ অগাস্ট যেন সকলে বাড়ির ছাদে জাতীয় পতাকা ওড়ায়। ইউজিসি জানিয়েছে, তাদের হর ঘর ধ্যান (Har ghar dhyan campaign) কর্মসূচিটিও স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উদযাপনেরই অঙ্গ। উচ্চশিক্ষার এই নিয়ামক সংস্থাও ‘হর ঘর তেরঙ্গা’ কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে চিঠি পাঠিয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নয়া কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আর্ট অফ লিভিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা শ্রী শ্রী রবি শঙ্কর (Shri Shri Ravi Shankar)। হর ঘর ধ্যান কর্মসূচিতে যোগদানে উদ্যোগী হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং কলেজ অধ্যক্ষদের চিঠি দিয়েছে ইউজিসি। একই চিঠি গিয়েছে কেন্দ্রীয় বোর্ডগুলি দ্বারা অনুমোদিত ২৫ হাজার স্কুলেও।
এদিকে, কর্মসূচির নামে ‘হর ঘর’ শব্দ দুটি নিয়ে গোল বেঁধেছে। অনেকেই বলছেন, এমনভাবে কর্মসূচির শব্দচয়ন করা হয়েছে যাতে এই বার্তা স্পষ্ট হয় যে এটি আদতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ভাবনা। সমালোচকদের বক্তব্য, এটা দুর্ভাগ্যের যে ইউজিসি’র মতো প্রতিষ্ঠানও রাজনৈতিক দলে পছন্দের শব্দ নিজেদের কর্মসূচিতে যুক্ত করছে।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যনির্বাহী পরিষদের প্রাক্তন সদস্য অধ্যাপক আভা দেব হাবিব মনে করেন, ‘হর ঘর’ শব্দ দুটি বিজেপির পছন্দের শব্দ, এটা এখন আর কারও অজানা নয়। ২০১৪ সালে ‘হর ঘর মোদী’ স্লোগানের মধ্য দিয়ে শব্দ দুটিকে জনপ্রিয় করা হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, রবিশঙ্করই যে এই কাজের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি, এই সিদ্ধান্তই বা কী করে হল?
রবিশঙ্করের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে অতীতে অনেক বিতর্ক হয়েছে। দিল্লিতে যমুনার তীরে 'আর্ট অফ লিভিং' প্রতিষ্ঠান একটি বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন রবি শঙ্কর এবং কেন্দ্রের পরিবেশ মন্ত্রক। পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কা ব্যক্ত করে পরিবেশ আদালতে যায় বহু প্রতিষ্ঠান। দুই সংস্থাকেই পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করে আদালত।
হর ঘর ধ্যান কর্মসূচিটি কীভাবে পালিত হবে? ইউজিসি চিঠিতে বলেছে, ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব' কর্মসূচির অধীনে সংস্কৃতি মন্ত্রক আর্ট অফ লিভিং ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এক ঘণ্টার অনুষ্ঠান তৈরি করেছে। সেটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে। এই ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ করতে বিশ্ববিদ্যালয়-সহ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শ দিয়েছে ইউজিসি।
কীভাবে অংশগ্রহণ করবে পড়ুয়া, শিক্ষকেরা? ইউজিসি বলেছে, আগ্রহী পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে। এই কাজে তদারকের ভূমিকায় থাকবেন ‘ধ্যান দূত’। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনও শিক্ষক বা অশিক্ষককে ‘ধ্যান দূত’ মনোনীত করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বহু শিক্ষক বলেছেন, রবি শঙ্করের বার্তা প্রচারের জন্য ইউজিসি-কে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা যদি শুধু ধ্যান আয়োজনের পরামর্শ দিত, তাতে এত প্রশ্ন উঠত না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি নিজেদের এলাকায় যোগ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলিতে যুক্ত করতে পারত।
মা মারা গেছেন, খাটিয়া তোলার জন্য তৈরি ছেলেরা, হঠাৎ নড়ল দেহ! যেন 'পুনর্জন্ম'