শেষ আপডেট: 6th August 2023 11:12
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রহিত ভেমুলার কথা মনে আছে। হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Hyderabad) মেধাবি ছাত্রটি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল সহপাঠী এবং শিক্ষকদের লাগাতার গঞ্জনার জেরে (UGC committee about suicide)। কারণ সে দলিত পরিবারের সন্তান। গঞ্জনার অভিযোগ উঠেছিল হিন্দুত্ববাদী একটি ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধেও।
২০১৬ সালে রহিতের আত্মহত্যার ঘটনায় উত্তাল হয়েছিল দেশের বহু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দাবি উঠেছিল, প্রতিটি ক্যাম্পাসকে বিদ্বেষ, ঘৃণা মুক্ত করতে হবে। কিন্তু পরিস্থিতি যে এতটুকু বদলায়নি, একের পর এক পড়ুয়ার আত্মহত্যার ঘটনায় তা স্পষ্ট।
গত মাসে সুপ্রিম কোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ রহিত ভেমুলার মা এবং অন্য এক অভিভাবকের দায়ের করা জনস্বার্থ মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অর্থাৎ ইউজিসি-কে এই ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ক্যাম্পাসের পরিবেশকে ঘৃণা, বিদ্বেষ মুক্ত না করা গেলে সমাজের প্রান্তিক অংশের ছেলেমেয়েদের বিপন্নতা আরও বেড়ে যাবে। কীভাবে ক্যাম্পাসকে ঘৃণা, বিদ্বেষ মুক্ত রাখা যায় ইউজিসি-কে তার উপায় খুঁজতে বলেছে শীর্ষ আদালত।
ইউজিসি ক্যাম্পাসকে এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্ত রাখতে ২০১২ সালে একটি বিধি চালু করে তা প্রতিটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে পাঠায়। তাতে জাতপাত, ধর্মীয় বিদ্বেষের ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ করার কথা বলা আছে। কিন্তু অনেকগুলি ঘটনায় দেখা গিয়েছে, বিদ্বেষ, হেনস্থার ঘটনায় আত্মহত্যা বা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। খড়গপুর আইআইটির এক মুসলিম ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় শেষ পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্ট খুনের মামলা দায়ের করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশ ও কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই ওই ছাত্রের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলেছিল। সেও ক্যাম্পাসে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিল বলে খবর।
রহিত ভেমুলার মায়ের দায়ের করা জনস্বার্থের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট ক্যাম্পাসে আত্মহত্যার সংখ্যা ও কারণ জানতে চায় ইউজিসি-র কাছে। দেখা যায়, ইউজিসি-র কাছে র্যাগিং সংক্রান্ত তথ্য আছে। কিন্তু পড়ুয়ার আত্মহত্যার সংখ্যা এবং কারণ সম্পর্কে উচ্চশিক্ষার এই নিয়ামক সংস্থা অন্ধকারে। শীর্ষ আদালত উদ্বেগ প্রকাশ করার পর এখন কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি আত্মহত্যা আটকানোর উপায় খুঁজতে বিশেষজ্ঞ কমিটিকে বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।
জাতিগত বৈষম্যের কারণে আইআইটি বোম্বের দর্শন সোলাঙ্কি নামে প্রথম বর্ষের এক ছাত্র এ বছর জানুয়ারিতে আত্মহত্যা করে। ওই ঘটনায় আইআইটি বম্বে সম্প্রতি ক্যাম্পাসে ‘বৈষম্যবিরোধী’ নির্দেশিকা জারি করেছে। তার অন্যতম হল পড়ুয়ারা কেউ কারও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার র্যাঙ্ক, জাত ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করতে পারবে না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং ওবিসি সম্প্রদায়ের পড়ুয়ারা ভাল ফল করলে তাদের সংরক্ষণের সুবিধা নিয়ে গঞ্জনার শিকার হতে হয়। সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি এএস বোপান্না এবং এমএম সুরেশের বেঞ্চ ইউজিসি-কে বম্বে আইআইটি-র নির্দেশিকার মতো দেশে-বিদেশে চালু ব্যবস্থাগুলি খতিয়ে দেখতে বলেছে।
আরও পড়ুন: দেশজুড়ে ৫০৮, বাংলার ৩৭ রেলস্টেশনে 'উন্নয়ন' করলেন মোদী, এক নজরে রইল তালিকা