শেষ আপডেট: 21st March 2024 13:19
দ্য ওয়াল ব্যুরো, বাঁকুড়া: বিষ্ণুপুরে সুজাতা খাঁকে তৃণমূল যে খুব আগ্রহের সঙ্গে প্রার্থী করেছে এমন নয়। এমনকি ব্রিগেডের সভায় সুজাতার নাম প্রথমে ঘোষণা করতে ভুলেই গেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সবার নাম ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর সুজাতার নাম ঘোষণা হয়। কারণ, খুব একটা বিকল্প মুখ পাওয়া যাচ্ছিল না সংরক্ষিত বিষ্ণুপুর লোকসভার জন্য।
সেই সুজাতা প্রচারে নেমেই তাঁর প্রাক্তন স্বামী তথা বিষ্ণুপুরের বর্তমান বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁর বিরুদ্ধে এক প্রকার খেউড় করতে নেমে পড়েন। সৌমিত্রর বিরুদ্ধে একাধিক নারীসঙ্গের অভিযোগ করেন সুজাতা। ইদানীং আবার দেখা যাচ্ছে, প্রচারে বেরিয়ে ভোটারদের শাসানি দিচ্ছেন বাঁকুড়ার জয়পুর থেকে জেলা পরিষদের এই সদস্য।
এই অবস্খায় বুধবার সুজাতাকে পার্টি অফিসে ডেকে কড়া ধমক দিলেন দলের উপর তলার নেতারা। তাঁকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, হাত জোড় করে ভোট চাওয়া ছাড়া কোনও কথা যেন তাঁর মুখ থেকে না বেরোয়।
বিষ্ণুপুর লোকসভার লড়াই নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য রাজনীতিতে হাসি ঠাট্টা চলছে। অনেকে বলছেন, ৪১টি আসনে মোদী বনাম দিদির লড়াই রয়েছে। শুধু আসনে লড়াই হল স্বামী-স্ত্রীর। সুজাতা প্রচারে বেরিয়ে প্রথম দিন থেকেই প্রাক্তন স্বামীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কুৎসা করতে শুরু করেছেন। বারবারই টেনে আনছেন তাঁদের 'অসুখী' বিবাহিত জীবনের প্রসঙ্গ।
প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা হওয়ার পর বাঁকুড়ার ময়নাপুর গ্রামে গেছিলেন সৌমিত্র খাঁ। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ভোটের সময়ে তৃণমূলের কোনও অত্যাচার সহ্য করা হবে না। তৃণমূল আঘাত করলে চোখ উপড়ে নেওয়া হবে! সৌমিত্রর এই বক্তব্যের পাল্টা তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতা বলেছিলেন, "চোখ উপড়ে নেওয়া, মানুষের মাথা কেটে নেওয়া, হাত-পা ভেঙে দেওয়ার বাইরে উনি কী কাজ করতে পারেন, তা আমার জানা নেই। দীর্ঘদিন এইরকম ভাবে আমাকে ঘরে অত্যাচার করত। তাই প্রাণ ভয়ে আমি বেরিয়ে এসেছি।"
এরপর জয়পুর থেকে সুজাতা আরও বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিলেন সৌমিত্রর বিরুদ্ধে। বলেছিলেন, "গাড়ি, বাড়ি, সম্পত্তি আর রক্ষিতা নিয়ে ফূর্তি করেছেন তাঁর প্রাক্তন স্বামী!"
এ পর্যন্ত এরকম ছিল। মঙ্গলবার ওন্দা ব্লকের নতুনগ্রাম বাজার এলাকায় প্রচারে গিয়ে সুজাতা এক মহিলা ভোটারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, "তোমরা ভোট দেওয়ার সময় বড় ফুলে দিচ্ছ, আর চাওয়ার বেলায় ছোট ফুলের কাছে চাইতে আসছ, এবার আমি ক্লিয়ার কাট বলছি, তাতে মিডিয়া থাক, যেই থাক, আই ডোন্ট কেয়ার, যদি তৃণমূল ভোট না পায়, তাহলে তৃণমূলের কেউ তোমাদের অভিযোগ শুনতে আসবে না, তোমরা বিজেপির সঙ্গে বুঝে নেবে।"
শুধু এই বলেই থেমে যাননি সুজাতা, দলের নেতা-কর্মীদের কড়া নির্দেশ দেন। কোন কোন বুথে বিজেপি লিড পাচ্ছে সে হিসাব কর্মীদের লিখে রাখতে বলেন। গ্রামবাসীদের জানিয়ে রাখেন, ভোটের পর যে অঞ্চলে তৃণমূল লিড পাবে, সেখানে রাতের অন্ধকারে প্রাণ বাজি রেখেও পৌঁছে যাবেন তিনি। আর যে যে বুথে তৃণমূল লিড পাবে না, সেখানে যেতে গেলে তিনি দশবার ভাববেন। কারণ দল তাঁকে প্রার্থী করেছে। প্রকাশ্যে এ ভাবেই সাংবাদিকদের সামনে ভোটারদের হুঁশিয়ারি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে সুজাতার বিরুদ্ধে।
ওন্দা বিধানসভায় প্রচুর সংখ্যালঘু ভোটার থাকা সত্ত্বেও পঞ্চায়েত, বিধানসভা এবং লোকসভা সব ভোটেই বিজেপি তৃণমূলকে পিছনে ফেলে ভাল মার্জিনে লিড পেয়েছে। আর এটাই বিষ্ণুপুর লোকসভা নির্বাচনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। ভোটারদের এই ট্রেন্ড বদলাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল। বিজেপিকে পরাস্ত করে এই এলাকার ভোটারদের নিজেদের অনুকূলে আনতে সচেষ্ট সুজাতা। কিন্তু তৃণমূল প্রার্থীর বেলাগাম মন্তব্যে হিতে বিপরীত হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এরপর বুধবার রাসুজাতাকে ডেকে পাঠানো হয় তৃণমূলের জেলা অফিসে। জানিয়ে দেওয়া হয়, "আমি আপনাদেরই মেয়ে। আপনারা আমাকে ভোট দিন"- এমন কথাতেই যাতে নিজের বক্তব্য সীমাবদ্ধ রাখেন তিনি। কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যক্তি আক্রমণ, হুমকি যে দল বরদাস্ত করবে না তা জানিয়ে দেওয়া হয় সুজাতাকে।