সুখেন্দুশেখর রায় ও সন্দীপ ঘোষ।
শেষ আপডেট: 18th August 2024 21:51
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এক্স হ্যান্ডেলে তাঁর পোস্টকে নিয়ে আপত্তি করে রবিবার কলকাতা পুলিশ লালবাজারে তলব করেছিল তাঁকে। কিন্তু তার পরেও দমলেন না রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। আরজি কর কাণ্ড নিয়ে আরও চড়া স্বরে তাঁর রাগ ও অসন্তোষের কথা উগরে দিলেন সত্তরোর্ধ্ব এই তৃণমূল নেতা।
তাঁর কথায়, “আমার বক্তব্য স্পষ্ট। তা হল, পুলিশ ও প্রশাসনের মদত না থাকলে ধৃত এই সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় ও আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ অরণ্যদেব হয়ে উঠল কীভাবে? এর উত্তর সন্ধান কি আমরা করব না?”
প্রবীণ সাংসদ আরও বলেন, “এমন পাশবিক ঘটনার পর যাঁরা শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাইবে তাঁদের উপর ঘৃণা, রাগ, ক্ষোভ থাকবেই। ভয় দেখিয়ে আমাকে চুপ করানো যাবে না।”
আরজি কর কাণ্ড নিয়ে সুখেন্দুশেখর গোড়া থেকেই প্রতিবাদী। তাঁর প্রতিবাদের ধরনধারণ শাসক দলকে অস্বস্তিতে ফেলছিলই। কিন্তু শনিবার মধ্যরাতে সুখেন্দুবাবু এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে যে দাবি করেছেন, তা আলোড়ন ফেলে দিয়েছে তৃণমূলে ও রাজ্য রাজনীতিতে। কারণ, তিনি দাবি করেছেন, সিবিআইয়ের উচিত কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা।
তৃণমূলের কোনও সাংসদ এভাবে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের উপর অনাস্থা জানালে শাসক দল ও সরকারের জন্য বিড়ম্বনার বইকি। তাই এদিন সুখেন্দুবাবুকে তলব করা হয় লালবাজারে। কিন্তু তিনি শেষমেশ অবশ্য শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে যাননি। তবে আরজি কর কাণ্ড নিয়ে তাঁর প্রতিবাদ ও সমালোচনা অব্যহত রাখেন।
রবিবার রাতে তিনি বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, এই অপরাধ যে করেছে তার মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত। সঠিক দাবিই করেছেন তিনি। তবে আমার কিছু মৌলিক প্রশ্ন রয়েছে। এই প্রশ্নের উত্তর সন্ধান এখনই করা দরকার। তা হল, হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের উপর পাশবিক ও নারকীয় অত্যাচার করে তাঁকে খুন করার ঘটনায় ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের এত ক্ষমতার উৎস্য কী ছিল? তা কি পুলিশের উপরতলার এক শ্রেণির অফিসারের মদতে হয়নি?"
সুখেন্দুবাবু বলেন, অভিযোগ উঠেছে যে ওই সিভিক ভলান্টিয়ার পুলিশের বারাকে থাকত, পুলিশের বাইক নিয়ে ঘুরত, আরজি কর হাসপাতালে দরকারমতো যে কাউকে ভর্তি করতে পারত। সেখানে অবাধ বিচরণ ছিল তার। এও শুনেছি তার নাকি চারটি বিয়ে, যা বেআইনি। এরকম একটা উচ্ছৃশঙ্খলকে দিনের পর দিন কে আস্কারা দিয়েছে? তার দায় কি পুলিশ অস্বীকার করতে পারে?
নির্যাতিতার দেহ দ্রুত সৎকার করে দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সুখেন্দুশেখর। তাঁর বক্তব্য, "এই জন্যই তো পুলিশের বিরুদ্ধেই প্রথম সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। তা ছাড়া নির্যাতিতার বাবা মাকে মেয়ের দেহ দেখতে দিতেও দেরি করা হল কেন?"
কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল অবশ্য দুদিন আগে সাংবাদিক বৈঠক করে এর ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন, পুলিশের প্রাথমিক অগ্রাধিকার ছিল ক্রাইম সিনকে প্রোটেক্ট করা ও তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা। সেই প্রক্রিয়ার সময়ে ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছে। কিছু পারিপার্শ্বিক প্রমাণও মিলেছে। তারও ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছে। সিবিআইকে সেই ভিডিও দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের দাবি মতো, একজন বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তার পরই দেহ সৎকার করা হয়েছে।
সুখেন্দুবাবু এদিন শুধু পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে চুপ থাকেননি। আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ওই অধ্যক্ষ নিজে থেকে পদত্যাগ করেননি। তাঁকে সরতে বলার পর পদত্যাগ করেছেন। তার পর আলাদিনের কোন প্রদীপ তাঁর কাছে ছিল যে চার ঘণ্টার মধ্যে অন্য একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে তাঁকে অধ্যক্ষ করা হল?
রাজ্যসভায় তৃণমূলের এই প্রবীণ সাংসদের কথায়, "ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালের গেস্ট হাউজকে তিনি সুরিখানায় পরিণত করেছিলেন বলে অভিযোগ। তাঁকে অন্য মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ করার আগে সেগুলো কেন বিবেচনা করা হল না, সেটাই তো বিষ্ময়ের।"
পুলিশি তলবের ব্যাপারে সুখেন্দুশেখরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "কলকাতা পুলিশের সাইবার সেল থেকে আমাকে ফোন করা হয়েছিল। কী কথা হয়েছে, তা বলা ঠিক হবে না। তবে আমি এটুকু স্পষ্ট করে দিতে চাই, যে জান্তব ও পাশবিক ঘটনা ঘটেছে তার পর চুপ করে থাকা যায় না। আমার দুটো সত্ত্বা রয়েছে। রাজনৈতিক সত্ত্বা যেমন রয়েছে, তেমনই আমি একজন সাধারণ নাগরিক। সংবিধান আমাকে বাক স্বাধীনতা দিয়েছে। ভয় দেখিয়ে আমাকে চুপ করানো যাবে না। কর্তব্যপথে অটল থাকব আমি।"