শেষ আপডেট: 13th September 2024 19:22
সময়টা রাজ্যের শাসকদলের কাছে স্বস্তির নয়। মা-মাটি-মানুষের সৈনিকরা অনেকে বুঝে উঠতে পারছেন না, কী প্রশ্নের কী উত্তর হবে। কিছুটা দিশাহীনতাও যেন কাজ করছে। এমনই অস্থির সময়ে নাটকে আশ্রয় নিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থাভাজন বলে পরিচিত বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী।
নারায়ণ মনোজ মিত্রর গুণগ্রাহী। জীবনে প্রথমবার পেশাদার মঞ্চে সেই মনোজ মিত্রর কালজয়ী চরিত্র বাঞ্ছারামকে ফুটিয়ে তুলছেন অশোকনগরের এমএলএ। নাটকের নাম 'আবার বাঞ্ছা।'
উত্তর চব্বিশ পরগনায় দু-তিনটি জনপদে সংস্কৃতি বিশেষ করে নাটক চর্চার চল রয়েছে বহুদিনের। যেমন, নৈহাটি, গোবরডাঙা ও অশোকনগর।
নারায়ণ পাশের এলাকা স্বরূপনগরের গ্রামের ছেলে। সেখানেই বেড়ে ওঠা। দিদি অশোকনগরের বিধায়ক করার পর বলা যেতে পারে অভিনয়ের ছোঁয়া লেগে গেছে তাঁর আত্মায়।
বিধায়ক জানালেন, থিয়েটারের প্রতি টান সেই ছোটবেলা থেকে। স্কুলে-কলেজে নাটক করেছেন। যেমন শখের অভিনয় হয় আরকি। তার পর আর অভিনয় করার সুযোগ হয়নি। বরং রাজনীতিতে যত জড়িয়েছেন, ততই দূরত্ব বেড়েছে। তবে অশোকনগরের বিধায়ক হয়ে আসার পর ‘খোলা আকাশটা যেন আবার হাতের মুঠোয়’। নারায়ণের কথায়, ''নাট্যমুখের অভি চক্রবর্তী'র সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর তাঁর জীবনের বন্ধ দরজা খুলে গিয়েছে।''
অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণবাবু উত্তর চব্বিশ পরগনার জেলা পরিষদের জেলা সভাধিপতিও। কাজের ব্যপ্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়েই তাঁর নামডাক এলাকায়। কিন্তু নাটকের মহড়ায় যখন যান তখন তিনি শুধুই ছাত্র। নির্দেশক অভি চক্রবর্তীর একেবারে বাধ্য ছাত্র। বললেন, "আমি যত বড়ই অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বা পলিটিশিয়ান হই না কেন, নাট্য নির্দেশক অভি চক্রবর্তীর কাছে আমি হয়তো প্রমাণ করে দিতে পেরেছি যে ছাত্র হিসেবেও আমি দারুণ বাধ্য। আমি আমার সমস্ত তকমা-ডানা-পাখনা বাইরে রেখে রিহার্সাল রুমে ঢুকি। সেখানে আমার ডিরেক্টর যেভাবে আমাকে নির্দেশ দেন সেভাবেই চলি।"
যে চরিত্রে মনোজ মিত্রের অভিনয় কিংবদন্তী হয়ে গেছে সেই চরিত্রটা সার্থকভাবে ফুটিয়ে তোলা এখন নারায়ণবাবুর কাছে চ্যালেঞ্জ।
নারায়ণবাবু জানালেন, একেবারে নিম্নবিত্ত একটা ব্রাক্ষ্মণ পরিবার থেকে তাঁর উঠে আসা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের প্রথম দিন থেকে। কিন্তু বিধায়ক হতে সময় লেগেছে ২৮ বছর। বললেন, "তবে এই ২৮ বছরে ২৮ ঘণ্টাও বিরাম নেইনি। যখন যে কাজ করেছি শতকরা ১০০ ভাগ সময় দিয়েই করেছি। তা রাজনীতিই হোক আর অন্যকিছু। আসলে একটা চ্যালেঞ্জ টপকানোর যে আনন্দ তা আমাকে হাতছানি দেয়।" এবার নাটকের মঞ্চেও নিজেকে নিঙড়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন এই তৃণমূল বিধায়ক।
'আবার বাঞ্ছা' নাটকে বাঞ্ছারামের চরিত্রের পাশাপাশি আরও একটি নাটকে অভিনয় করছেন নারায়ণ গোস্বামী। অশোকনগর প্রতিবিম্ব নাট্য দলের হয়ে পার্থ সারথী রাহার নির্দেশে নমস্তস্যৈ নাটকে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর চরিত্রে অভিনয় করছেন নারায়ণবাবু। জানালেন, বাড়িতে দুর্গাপুজো হত। ১১ বছর বয়সে ঠাকুরদা পৈতে দিয়েছিলেন। তারপর থেকে দুর্গাপুজোয় চণ্ডীপাঠ করতেন। তখনকার দিনের বিশিষ্ট পণ্ডিত বিনয় চট্টোপাধ্যায় ও রঙ্গলাল চক্রবর্তীর কাছে শিখেছিলেন চণ্ডীপাঠ। নির্ভুল উচ্চারণের সেই তালিম তাঁকে সমৃদ্ধ করেছে আজীবনের জন্য। এই নাটকে তাঁকে বেছেও নেওয়া হয়েছে তাঁর এই ক্ষমতার জন্যই।
এখন দুটি নাটকের মহড়াই চলছে পাশাপাশি। দলের কাজ, জেলা পরিষদের কাজ সবটুকু সামলে যেটুকু সময়, তা দিচ্ছেন অভিনয়ে। সামনের মাসেই মঞ্চস্থ হবে দুটি নাটকই। নারায়ণবাবুর কথায়, "এখান থেকে যে অক্সিজেনটা পাচ্ছি তাতে কেটে যাচ্ছে সমস্ত চাপ। নিজে ভাল না থাকলে অন্যকে ভাল রাখব কী করে!"