শেষ আপডেট: 3rd December 2024 13:29
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পুনর্মুষিক ভব!
নিজের ভুল স্বীকার করলেন মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি বলেন, "আমি গত কয়েকদিন প্রকাশ্যে দলের সম্পর্কে যে সব কথা বলেছিলাম, তার অনেকটাই ভুল ছিল। সোমবারের বৈঠকে নেত্রী আমাকে গাইড করেছেন। এখন থেকে ওনার কথা শুনেই চলব!"
প্রসঙ্গত, সোমবার বিধানসভায় পরিষদীয় দলের বৈঠকে দলের বিধায়কদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, যা বলার তিনি বলবেন, তিনিই শেষ কথা। এরপরই এদিন 'ভুল' স্বীকার করতে দেখা গিয়েছে 'বিদ্রোহী' বিধায়ককে।
হুমায়ুন বলেন, "নেত্রী যে দলের শেষ কথা, তা নিয়ে আমি কোনওদিন প্রশ্ন তুলিনি। উনি আমার মাতৃসম। ওনার অভিজ্ঞতা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই।
আমি স্বীকার করেছি, যে আমার ভুল হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমি ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছি। তবে আমার কিছু অনুযোগ ছিল, সেগুলির অনেকটাই উনি পূরণ করে দিয়েছেন!"
কী অনুযোগ? হুমায়ুন বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী ব্যস্ত থাকেন। ওনার সঙ্গে আমরা জেলার বিধায়করা সবসময় দেখা করার সুযোগ পাই না। এনিয়ে আমি বলেছিলাম। উনি আমার কথার গুরত্ব বুঝে একটি হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ খুলে দিয়েছেন। ওই গ্রুপের মাধ্যমে এবার থেকে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারব। বিভিন্ন বিষয়ে ওনাকে ওয়াকিবহাল করতে পারব।"
দলের নেতাদের আলটপকা মন্তব্য ঠেকাতে সম্প্রতি বিধানসভা, লোকসভা এবং দলের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি গড়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি ওই কমিটির তরফেই হুমায়ুনকে শো-কজ করা হয়েছিল।
শৃঙ্খলাভঙ্গের প্রশ্নে হুমায়ুনের বিরুদ্ধে ঠিক কী কী অভিযোগ এনেছিল দল? কিংবা বলা ভাল, দলের বিরুদ্ধে ঠিক কী কী কারণে সম্প্রতি বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন হুমায়ুন?
ঘটনার সূত্রপাত, সম্প্রতি কসবার গুলি কাণ্ডের পর রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপ মুখ্যমন্ত্রী করার দাবি জানিয়েছিলেন হুমায়ুন। একই সঙ্গে দলের একাংশ নেতার বিরুদ্ধেও প্রকাশ্যে মুখ খুলেছিলেন। হুমায়ুন বলেছিলেন, "অন্যায় হলে আমাকে তো বলতেই হবে। আমি কাউকে ভয় ডর করি না।"
এমনকী মমতার ঘনিষ্ঠরা দলনেত্রীর ভাল চান না বলেও প্রকাশ্যে মন্তব্য করেন তিনি। ফিরহাদ হাকিম, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়দের নামোল্লেখ করে হুমায়ুন এও বলেন, "প্রভাবশালীরা আমাকে মার্ডার করে ফেলতে পারে।" শো-কজের পরও নিজের বক্তব্যে অনড় থেকে হুমায়ুন বলেছিলেন, "হক কথা বলার জন্য দল শোকজ করলে করবে! এর আগে তো ২০১৫ সালে আমাকে বিনা নোটিসে ৬ বছরের জন্য শোকজ করে দেওয়া হয়েছিল। এবারে তবু নোটিস দেওয়া হয়েছে। তাতে গর্ব অনুভব করছি।"
এমনকী শো-কজের পর দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন হুমায়ুন। সম্প্রতি টিএমসিপির সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যকে নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছিলেন দলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গ টেনে দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির স্বচ্ছতা নিয়েও বড় প্রশ্ন তুলেছিলেন হুমায়ুন। ভরতপুরের বিধায়ক বলেন, "কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও তো প্রকাশ্যে তৃণাঙ্করকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, তাঁকে কেন শোকজের আওতায় আনা হবে না?"
হুমায়ুন এও বলেন, "মুর্শিদাবাদের গ্রামীণ এলাকার কৃষক পরিবারের ছেলে। আমরা গ্রামের বিধায়করা বললে ডিসিপ্লিনারি কমিটি ব্যবস্থা নেয়। আর যাঁরা ভবানীপুর, বিশেষত কলকাতার এলাকার নেতাদের জন্য অন্য নিয়ম।" শুধু তিনি একা নন, দলের গ্রামীণ বিধায়করাও বঞ্চনার শিকার বলেও দাবি করেন তিনি।
মুর্শিদাবাদের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এই দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে লড়াই হবে জানিয়ে হুমায়ুন এও বলেন, "তৃণমূলে থেকেই এই লড়াই হবে।"
অবশেষে 'ভুল' স্বীকারের মধ্যে দিয়ে তাহলে লড়াই থামল? কিছুটা বিব্রত ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক বলেন, "দলকে তো বলেইছি, অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল করে ফেলেছি! সব তো মিটেও গেল! আবার এসব প্রশ্ন কেন!"