স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
শেষ আপডেট: 23rd July 2024 09:00
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে এবার বিধানসভায় প্রস্তাব আনতে পারে তৃণমূল। শাসক দলের শীর্ষ নেতাদের একাংশের মতে, যেভাবে ‘নির্বাচিত বিধায়কদের’ হেনস্তা করছেন রাজ্যপাল, তার জবাবও বেনজির হওয়া উচিত।
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিধানসভায় প্রস্তাব পাশের ব্যাপারে হালফিলে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে তামিলনাডু। রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া বহু বিলে সই না করে তা ঝুলিয়ে রেখেছিলেন তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবি। এই অবস্থায় তামিলনাড়ু বিধানসভায় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রস্তাব এনে তা পাশ করিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। সেই প্রস্তাবে রাষ্ট্রপতি ও কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়ে বলা হয়েছিল, বিধানসভায় কোনও বিল পাশ হলে তাতে সম্মতি জানানোর জন্য রাজ্যপালকে সময় বেঁধে দেওয়া হোক। এও নিশ্চিত করা হোক যাতে রাজ্যপাল আইনসভা তথা বিধানসভার স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ করতে না পারেন।
তামিলনাড়ু বিধানসভায় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পাশ হওয়ার সেই প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছিলেন পাশের রাজ্য কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। কারণ, তামিলনাড়ুতে শাসক দল ডিএমকে-র মতই সিপিএমও কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানের বিরুদ্ধে সরব।
দক্ষিণের এই রাজ্যের পরিস্থিতি থেকে বাংলাও বিচ্ছিন্ন নয়। রাজ্য সরকার তথা শাসক দলের সঙ্গে নতুন করে সংঘাত তৈরি হয়েছে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের। বিধানসভার উপ নির্বাচনে জিতে সদ্য বিধায়ক পদে শপথ নিয়েছেন সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রেয়াত হোসেন সরকার। তাঁদের শপথ পাঠ করিয়েছেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু রাজ্যপালের বক্তব্য, তাঁদের শপথ বৈধ নয়। এমনকি রাজ্যপাল সায়ন্তিকা ও রেয়াতকে চিঠি লিখে হুঁশিয়ার করেছেন, তাঁরা অধিবেশনে যোগ দিলে ৫০০ টাকা করে জরিমানা হবে।
তৃণমূলের একাধিক শীর্ষ সারির নেতার কথায়, রাজ্যপাল এভাবে নির্বাচিত বিধায়কদের জরিমানা করতে পারেন না। এখানে ব্যক্তি সায়ন্তিকা বা রেয়াত হোসেনের বড় কথা নয়। বড় কথা হল, বিধানসভার ও বিধায়কদের স্বাধিকার। বিধানসভার ব্যাপারে সর্বাধিক ক্ষমতা ও অধিকার রয়েছে স্পিকারের। তার উপর কারও নয়। তিনি বিধায়কদের শপথ বাক্য পাঠ করালে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার কারও নেই। রাজ্যপাল ঠিক করে দিতে পারেন না কার থেকে শপথ নেবেন নব নির্বাচিত বিধায়করা।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস নতুন বিধায়কদের শপথের ব্যাপারে যে সব শর্ত আরোপ করছেন, তাকে সমর্থন করছেন না বামেরাও। বিধানসভায় সিপিএমের কোনও বিধায়ক নেই ঠিকই। কিন্তু এ ব্যাপারে সিপিএমের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট। দলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এদিন বলেন, রাজ্যপাল এটা ঠিক করছেন না। খামোখা জটিলতা তৈরি করছেন। নতুন বিধায়কদের শপথ পাঠ করানোর পূর্ণ অধিকার রয়েছে বিধানসভার স্পিকারের। রাজ্যপাল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন না।
রাজ্যপালের এই ভূমিকায় বিজেপির পরিষদীয় দল যে খুব খুশি তাও নয়। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও ব্যক্তিগত ভাবে এই রাজ্যপালকে পছন্দ করছেন না বলেই বিজেপি সূত্রে খবর। ফলে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শাসক দল প্রস্তাব আনলে বিজেপি তা নিয়ে কতটা আপত্তি করবে সে ব্যাপারেও সংশয় রয়েছে।