শেষ আপডেট: 6th February 2025 09:05
বাঁ দিকে কাঁচরাপাড়াকে রেখে কল্যাণী এক্সপ্রেস ধরে ডান দিকে ঢুকে গেলেই কিছু দূরে গয়েশপুর (Gayeshpur)। নদিয়া জেলার মধ্যে পড়ে। কলকাতার কালীঘাট থেকে দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। এহেন গয়েশপুর পুরসভায় বেশ কিছুদিন ধরেই অশান্তি চলছে। কারণ, পুরসভার চেয়ারম্যান সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়কে সরাতে জোট বেঁধেছেন গরিষ্ঠ সংখ্যক কাউন্সিলর। সূত্রের দাবি, ১৮ টি ওয়ার্ডের পুরসভায় ১১ জন কাউন্সিলরই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি এমনই যে বোর্ড ভেঙে যাওয়ার জোগাড়।
তবে এও বড় ঘটনা নয়। বড় ঘটনা হল, গয়েশপুরের ঝগড়া থামাতেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই (Mamata Banerjee) ফোন করতে হল। রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর থেকে নম্বর নিয়ে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর এক নেতাকে দুদিন আগে ফোন করেন মমতা। দিদির এক ফোনেই আপাতত ঠান্ডা হয়েছেন তাঁরা। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পষ্টাপষ্টি জানিয়ে দিয়েছেন, পুরসভায় এখনই বদল হবে না। বিক্ষুব্ধ রাজনীতি করতে হলে দল থেকে বেরিয়ে গিয়ে করুন।
প্রশ্ন হল, গয়েশপুরের গন্ডগোল থামাতেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করতে হবে কেন? নদিয়া জেলায় দুটি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট। গয়েশপুর রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার মধ্যে পড়ে। সেখানে জেলা সভাপতি হলেন দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অশান্তি থামাতে পারলেন না কেন?
তৃণমূলে জেলা পর্যবেক্ষক প্রথা উঠে গেছে। কিন্তু ১২ বছর ধরে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমানায় যা এক প্রকার রেকর্ড। এক দফতরে এতদিন একটানা কেউ মন্ত্রী থাকতে পারেননি। কোনও জেলায় পুরসভা স্তরে অশান্তি হলে তাঁর দেখার কথা। কিন্তু ফিরহাদ হাকিম তা থামাতে পারলেন না কেন? কেনই বা রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী নিষ্পত্তি করতে পারলেন না?
লোকসভা ভোটের পর পুরসভা স্তরে ঢালাও রদবদল হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছর একুশ জুলাইয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি সে কথা বলেছিলেন। অভিষেকের কথার যুক্তি ছিল। লোকসভা ভোটে বহু পুর এলাকায় বিজেপির থেকে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। অভিষেকের সাফ কথা ছিল, পুরসভার দায়িত্বে যাঁরা রয়েছেন তাঁদেরই এই দায় নিতে হবে। পরে শোনা যায়, প্রায় একশ পুরসভায় চেয়ারম্যান বদল হতে পারে। এর পর থেকেই বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু পুরসভায় গণ্ডগোল শুরু হয়েছে। পুরসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়ে বিক্ষুব্ধ রাজনীতিতে শান দিচ্ছেন কিছু কাউন্সিলর।
কালীঘাটের এক ঘনিষ্ঠ নেতার মতে, গয়েশপুর একটা ‘আইসোলেটেড’ ঘটনা। তবে এ সব ক্ষেত্রে একটা প্রবণতা কাজ করে। বিক্ষোভের রাজনীতি বড় সংক্রামক। তা অন্য পুরসভায় ছড়াতে পারে। তাই আগেই রাশ টানা প্রয়োজন। কিন্তু সন্দেহ নেই সেই অশান্তি ঠেকাতে জেলা সভাপতি থেকে শুরু করে পুরমন্ত্রীর ব্যর্থতা হতাশাজনক। গয়েশপুরের গণ্ডগোল থামাতেও যদি মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করতে হয়, তাহলে চিন্তার বইকি।
সূত্রের দাবি, কদিন আগে গয়েশপুরের ঘটনা নিয়ে ববি হাকিমকে ডেকেও প্রশ্ন করেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন পুরমন্ত্রী তা থামাতে পারেননি সেই প্রশ্ন তোলেন। এ ব্যাপারে ববির ভূমিকায় দিদি হতাশ ও অসন্তুষ্ট বলেও খবর।
কালীঘাটের ঘনিষ্ঠ সূত্রের মতে, গয়েশপুর কাণ্ডের পর রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বদল অনিবার্য। একটাই মুশকিল বিকল্প মুখ পাওয়া যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে শঙ্কর সিংকে রানাঘাটের দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।