পূর্ব মেদিনীপুর জেলা উপকুলের লক্ষাধিক মৎস্যজীবী সেই ভাতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠল।
শেষ আপডেট: 21 May 2025 14:30
১৫ ই এপ্রিল থেকে ১৪ ই জুন, দু'মাসের এই ব্যান পিরিয়ডে মৎস্যজীবীদের সংসার চালাতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তারজন্য "সমুদ্রসাথী" প্রকল্প ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পে ১০ হাজার টাকা করে এককালীন ভাতা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। বাস্তবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা উপকুলের লক্ষাধিক মৎস্যজীবী সেই ভাতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠল।
সাধারণভাবে সমুদ্রে ৮০ থেকে ১২০ নটিক্যাল মাইল দূরে ইলিশের ঝাঁক ঘোরাফেরা করলেও গ্রীষ্ম শুরু হতেই উপকূলের দিকে চলে আসে তারা। পরবর্তীতে শুরু হয় হালকা বৃষ্টি। এই ইলশেগুড়ি বৃষ্টিতে ইলিশ ডিম ছাড়ে। ছোট ইলিশ রক্ষার জন্য ১৫ ই এপ্রিল থেকে ১৪ ই জুন সমুদ্রে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা থাকে মৎস্যজীবীদের। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম থেকে হয় ছোট মৎস্যজীবীদের। তাঁদের কথা বিবেচনা করেই ২০২৪ সালে "সমুদ্রসাথী" প্রকল্প ঘোষণা করে মৎস্যজীবীদের ১০ হাজার টাকা করে এককালীন ভাতা দেওয়ার ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। বাস্তবে সেই ভাতা মিলছে না বলে অভিযোগ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা উপকুলের মৎস্যজীবীদের।
ব্যান পিরিয়ড চলায় উপকূল এলাকার হাজার হাজার মৎস্যজীবীর আয় পুরোপুরি বন্ধ। মৎস্যজীবী কবিতা লালা বলেন, আমার স্বামী মাছ ধরে যে রোজগার করেন তা দিয়েই চলে আমাদের। আর তো কোনও বাড়তি রোজগার নেই। এই দু'মাস আমাদের কীভাবে চলে আমরাই শুধু জানি। ভাতা পাব বলে শুনেছিলাম, তাও পেলাম না।" আরেক মৎস্যজীবী দেবদুলাল বর বলেন, সমুদ্রের ধারে আমাদের ঘর। মাছ ধরা ছাড়া আর কীই বা পারি আমরা। তাও বছরে দু'মাস কোনও কাজ থাকে না। সরকার ভাতা দেবে বলেছিল, সেটাও পাচ্ছি না।"
মৎস্যজীবী সংগঠনের দাবি, উপকূলের প্রায় কুড়ি শতাংশ অর্থাৎ লক্ষাধিক মৎস্যজীবী দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করেন। যারা ছোট নৌকা নিয়ে সমুদ্রে যান, তাদের জীবন জীবিকা কেবলই মাছ ধরা। তাঁদের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। সংগঠনের পদাধিকারী দেবাশিস শ্যামল বলেন, ভাতার টাকা না মেলায় কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে উঠেছে। অথচ রাজ্যের বাজেট বা প্রশাসনিক স্তরে এখনও পর্যন্ত এই ভাতা প্রদানের কোনও উল্লেখ নেই।"
তাঁদের আরও অভিযোগ, কেন্দ্র সরকারের তরফে যে ভাতা প্রকল্প ছিল, সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার কারণে। ফলে এই ব্যান পিরিয়ডে রাজ্য ও কেন্দ্র—দুই দিকের সাহায্যই থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা। দেশের অন্যান্য উপকূলীয় রাজ্যগুলিতে ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীদের ব্যান পিরিয়ডের আওতার বাইরে রাখা হলেও পশ্চিমবঙ্গে তাঁদের উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে, এটাও সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এই পরিস্থিতিতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জুনপুট, জলধা, বাঁকিপুট, হরিপুর-সহ একাধিক এলাকায় মৎস্যজীবীদের প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। প্রতিশ্রুত ভাতা না দেওয়া হলে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। তবে এ ব্য়াপারে কিছু বলতে চাননি মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী।