রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার ও এএসআই ধনঞ্জয় কুমার শাহ
শেষ আপডেট: 22nd February 2025 14:40
"ভুঁড়ি আমার মনের মতো
শক্ত এবং নধর,
ডাগর ভুঁড়ির আমার মতো
কেউ করে না কদর।"
ভুঁড়িধারী পুলিশ দেখলে কদর করতেন না রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ও। যখনই কোনও আনফিট পুলিশ (Unfit Police) তাঁর নজরে আসত তাঁর তলপেটে হাত বুলিয়ে ভুঁড়ি কমানোর পরামর্শ দিতেন। সিদ্ধার্থবাবু মনে করতেন, পুলিশের চেহারা হবে চাবুকের মতো। কিন্তু, সেকাল-একালের পরিবৃত্তে ভূরি ভূরি পুলিশ রয়েছেন আর রয়েছে তাঁদের ভুঁড়ি।
গত বছর উত্তরবঙ্গের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে ভারী চেহারার এক পুলিশ কর্তার উদ্দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) পরামর্শ ছিল, "এবার একটু শরীরচর্চা করুন"। "হ্যাঁ, ম্যাডাম করি তো" জবাব শুনে রেগে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরক্তির সুরে বলেছিলেন, "কী হাঁটাহাঁটি করেন সেটা তো আপনার মধ্যপ্রদেশ দেখেই বোঝা যাচ্ছে!"
বহু পুলিশ কর্মীকে মধ্যবয়সেই দেখা যায় দৌড়ানো তো দূরে থাক হনহনিয়ে হাঁটতেও পারেন না। মুখ্যমন্ত্রীর ঠাট্টার পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে কলকাতা পুলিশের খেলার অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে অফিসার-কনস্টেবলদের সতর্কও করেন নগরপাল।
কিছু কি পাল্টেছে তাতে? রাজ্য পুলিশ (West Bengal Police) গতে বাঁধা সেই ছবিটাই ভাঙতে চাইছে সম্ভবত। তার কারণ, ক'দিন ধরে রাজ্য পুলিশের এক্স হ্যান্ডেলে তারা 'ফিট কপ' (Fit Cop) নামে একটা সিরিজ শুরু করেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে সুঠাম, মেদহীন পুলিশ অফিসাররা শরীরী কসরত করছেন। যেমন বারুইপুর পুলিশ ডিভিশনের এএসআই ধনঞ্জয় কুমার শাহ। শরীরের সঙ্গে আঁট হয়ে থাকা উর্দির মধ্যে থেকেই বেরিয়ে আসছে মাংসপেশি।
#FitCop pic.twitter.com/FN1JDpdasf
— West Bengal Police (@WBPolice) February 22, 2025
এসপি বনগাঁ ডিভিশনের পেজ থেকেও আরও দুই পুলিশকর্মীর শরীরী ট্রান্সফরমেশন অবাক করেছে অনেককেই। কনস্টেবল মিঠুন ঘোষ ও রমেন দাসদের আগে পরের ছবি পাশাপাশি রেখে তুলে ধরা হয়েছে তাঁদের শারীরিক বদল। ৫০ জন পুলিশকর্মীর মধ্যে থেকে এই দু'জনের একজন ১৩ কেজি এবং অন্যজন ১২ কেজি ওজন ঝরিয়েছেন মাত্র এক মাসে। যা তারিফ করার মতোই।
Project #FITCOP Success Story!
— SP BONGAON PD (@SP_Bongaon_PD) January 11, 2025
Constables Mithun Ghosh & Ramen Das achieved impressive weight loss of 13kg & 12kg in just 1 month,out of 50 police personnel under this project! They were rewarded by DIG Barasat Range Sir on Bongaon PD's Annual Sports Day. #PoliceFitness @WBPolice pic.twitter.com/TgpL7I0BLY
পুলিশের ভুঁড়ি কিংবা ওজন নিয়ে তামাশা থাকলেও ভুলে গেলে চলবে না অনেক 'ওজনদার' পুলিশ অফিসারের কীর্তিও বেশ প্রসংশিত হয়েছে।
'২৩ সালের একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে সুবিধা হবে। বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতিতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে গুন্ডা শায়েস্তা করতে এগিয়ে যেতে দু'বার ভাবেননি মালদহের ডিএসপি আজহারউদ্দিন খান ও নদিয়ার রানাঘাট থানার এএসআই রতন রায়। স্কুলে 'বন্দুকবাজ' ঢুকে গিয়েছে শুনে ছুটে গিয়েছিলেন দুই ওজনদার অফিসার। একজন ঝাঁপ দিয়ে পাকড়াও করেছিলেন, অন্যজন রিভলভার উঁচিয়ে অত্যাধুনিক অস্ত্রধারী ডাকাতদলকে ঘায়েল করেন।
ডিএসপি আজহারের ওজন ছিল ৯০ কেজি। এএসআই রতনের ১০২। কয়েক মিনিটের অপারেশনে ডাকাতদলের দু'জনকে ধরাশায়ী করে আলোচনায় উঠে আসেন এই দুই ভুঁড়িধারী অফিসার। দু'জনেই প্রমাণ করেছিলেন, সিঙ্ঘম কিংবা চুলবুল পান্ডের মতো পেশিবহুল চেহারা তো বটেই, বিপদের সময় অকুতোভয় হয়ে তার মোকাবিলায় দরকার বুকের পাটা আর মগজাস্ত্রও দরকারি। তবে সে হয়তো ব্যতিক্রম মাত্র। আসলে তো ফিট কপই জরুরি।