শেষ আপডেট: 15th April 2019 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ঋণের বোঝা প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটির। ধুঁকতে থাকা জেটকে বাঁচাতে আগ্রহী লগ্নিকারীরা আসবে কিনা তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ ঋণদাতারা ১,৫০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে বলে গলা ফাটালেও সেই টাকা কবে আসবে তাও অস্পষ্ট। অন্যদিকে, লিজের টাকা চোকাতে না পারায় প্রায় রোজই আসছে বিমান বসে যাওয়ার খবর। আন্তর্জাতিক কয়েকটি রুট সম্পূর্ণ বন্ধ, চালু বিমানের সংখ্যা কখনও জানানো হচ্ছে ১১, কখনও ৯। সব মিলিয়ে তালা পড়তে চলল জেটে। পাশাপাশি, জেটের প্রতিষ্ঠাতা নরেশ গয়ালের ফের ককপিটে ফেরার সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে গেল। জেট সূত্রে খবর, সংস্থার পুনর্গঠনের জন্য দরকার ৯,৫৩৫ কোটি টাকা। গত তিন মাসের বেশি বেতন পাচ্ছেন না সংস্থার পাইলট ও ইঞ্জিনিয়াররা। ঋণের কিস্তি মেটাতে না পারা, নগদের সমস্যা, কর্মীদের বকেয়া— এই দুর্দশা মেটানোর জন্য স্টেট ব্যাঙ্কের নেতৃত্বাধীন ঋণদাতাদের গোষ্ঠী (এসবিআই, পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, কানাড়া ব্যাঙ্ক, ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক, ইলাহাবাদ ব্যাঙ্ক) এগিয়ে এলেও নতুন লগ্নিকারীর অভাবে থমকে গেছে সমস্ত পরিষেবা। জেট জানিয়েছে, নতুন মালিকের খোঁজ না পাওয়া পর্যন্ত ঋণদাতারা প্রাথমিক ভাবে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছিল জেটকে। কিন্তু, কোনও সংস্থা উৎসাহ নিয়ে লিখিত ভাবে আগ্রহের কথা জানায়নি। তাই নতুন লগ্নিকারীদের খোঁজে একপ্রকার বাধ্য হয়েই সময়সীমা বাড়াতে হয়েছে। জানানো হয়েছে, ১১ এপ্রিল পর্যন্ত জেটের বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রশ্ন পাঠিয়ে খোঁজখবর নিতে পারবেন আগ্রহী লগ্নিকারী। আর প্রাথমিক আগ্রহপত্র জমা দেওয়ার সময় বেড়ে হচ্ছে ১২ এপ্রিল। চূড়ান্ত দর জমা দিতে হবে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে। একসময় ভারতে বিমান পরিবহণ ব্যবসার ১৩.৯ শতাংশ ছিল জেটের দখলে। এই সংস্থা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বিকাশশীল কোম্পানিগুলির মধ্যে একটি। জেট দেশের অভ্যন্তরে ছাড়াও লন্ডন ও সিঙ্গাপুরেও বিমান চালাত। একুশ শতকের প্রথম দশকের মাঝামাঝি দেশে আরও কয়েকটি সস্তার এয়ারলাইনস চালু হয়। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে জেট। ক্রমশ ঋণে ডুবে যায় সংস্থা। পদত্যাগ করেন নরেশ গয়াল, তাঁর অনীতা গয়াল ও এতিহাদ এয়ারওয়েজের এক প্রতিনিধি। প্রবল অনিশ্চয়তার মধ্যে খবর মেলে ফের দায়িত্বে ফিরতে পারেন নরেশ। নোটিশে বলা হয়, ৭৫% পর্যন্ত অংশীদারির জন্য আগ্রহ দেখাতে পারেন লগ্নিকারীরা। ঋণদাতাদের হাতে শেয়ার রয়েছে ৫১%। বাকি ২৪ শতাংশ কে দেবেন নরেশ না এতিহাদ, তাই নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এই অবস্থায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয় সোমবার ঋণদাতারা জেটকে আপৎকালীন তহবিল জোগানোর সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দেওয়ায়। এ দিন সংস্থার পাইলটদের সংগঠন ন্যাশনাল এভিয়েটর্স গিল্ড (ন্যাগ) স্টেট ব্যাঙ্কের কাছে আর্জি জানায়, প্রতিশ্রুতি মতো অবিলম্বে ঋণদাতারা ১,৫০০ কোটি টাকা ঢালুক। যে টাকার প্রতিশ্রুতি থাকলেও, তা এখনও এসে পৌঁছয়নি। তার উপর সংস্থা জানিয়েছে, আপাতত ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে আন্তর্জাতিক উড়ান পরিষেবা। ঋণদাতাদের ওই তহবিল তাদের হাতে না আসাই যার প্রধান কারণ।