শেষ আপডেট: 2nd August 2020 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সুশান্ত সিং রাজপুতের বাইপোলার ডিসঅর্ডার ছিল। মানসিক রোগের ওষুধও খাচ্ছিলেন তিনি। এখনও অবধি ৫৬ জনকে জেরা করে এই তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এমনটাই দাবি করেছেন মুম্বই পুলিশের কমিশনার পরম বীর সিং। তাঁর আরও দাবি, মৃত্যুর দিনকয়েক আগে নিজের নাম গুগলে খুঁজেছিলেন অভিনেতা। বিশেষত তাঁর ম্যানেজার দিশা স্যালিয়ানের আত্মহত্যার ঘটনার সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে মিডিয়াতে কোনও খবর রটছে কিনা, এই বিষয়ে সার্চ করেছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, যন্ত্রণাহীন মৃত্যুর উপায়, স্কিৎজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিসঅর্ডার নিয়েও গুগলে খোঁজাখুঁজি করেছিলেন সুশান্ত। তাঁর মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ ঘেঁটে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। মুম্বই পুলিশ কমিশনারের বক্তব্য, অভিনেতার মৃত্যুর পর থেকে তাঁর আত্মীয় ও অনাত্মীয়, ঘনিষ্ঠ কর্মচারী, বান্ধবী ও তাঁর পরিবারের লোকজন সহ মোট ৫৬ জনের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। প্রত্যেকের জবানবন্দি নিয়েই নাকি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে সুশান্ত বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগছিলেন। তার জন্য চিকিৎসা চলছিল। তিনি নিয়মিত ওষুধও খেতেন। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে যন্ত্রণাহীন মৃত্যুর উপায়, বাইপোলার ডিসঅর্ডার নিয়ে গুগলে কেন সার্চ করছিলেন সুশান্ত, সেটাই ভাবাচ্ছে। কমিশনার পরমবীর বলেছেন, ঠিক কী পরিস্থিতিতে অভিনেতার মৃত্যু হয়েছে, এই মৃত্যুর সঙ্গে কোন কোন ঘটনা জড়িয়ে রয়েছে সেটাই এখন তদন্তের মূল লক্ষ্য। https://twitter.com/ANI/status/1290193617336688640 সুশান্ত সিং রাজপুত তীব্র মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন, তাঁর বাইপোলার ডিসঅর্ডার ছিল, সম্প্রতি এমন দাবি করেছেন তাঁর থেরাপিস্ট ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট ডক্টর সুজান মোফাট ওয়াকার। সংবাদমাধ্যমের সামনে সুজান জানান, মানসিক স্থিতি ঠিক ছিল না সুশান্তের। বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগছিলেন তিনি। বাইপোলার ডিসঅর্ডার হল এমন এক মানসিক স্থিতি যেখানে মেজাজ বদলে যেতে পারে যে কোনও অবস্থাতেই। কখনও হাসিখুশি আবার কখনও তীব্র অবসাদে আচ্ছন্ন হয়ে পড়তে পারে রোগী। এক দ্বৈত সত্তারও জন্ম হয়। নিজের ভেতরে সম্পূর্ণ অন্য একটা মানুষকে অনুভব করতে শুরু করে রোগী। একই সঙ্গে দুই বিপরীতধর্মী আচরণ দেখা যায় রোগীর মধ্যে। মন ও মেজাজের এই আকস্মিক বদল ধরতে পারেন না রোগীর কাছে থাকা মানুষজনও। সুজান বলছেন, বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার যাদের হয় তারা তীব্র উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগে ভোগেন। সবসময়েই একটা মানসিক চাপ থাকে যেটা কাটিয়ে উঠতে পারেন না রোগী। সুশান্তের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই হয়েছিল। বাইপোলারের ডিসঅর্ডারের সঙ্গেই হাইপোম্যানিয়ারও শিকার হয়েছিলেন তিনি। সুজানের আরও দাবি ছিল, চরমতম মানসিক চাপে রিয়াই ছিলেন সুশান্তের সবচেয়ে বড় শক্তি। একদিকে বান্ধবী অন্যদিকে মায়ের মতো আগলে রেখেছিলেন সুশান্তকে। মিডিয়াতে রিয়াকে নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন সুজান। মানসিক অবসাদের প্রসঙ্গ তুলে এনে সুশান্তের মৃত্যু রহস্যকে অন্যদিকে ঘোরানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে নানা মহলেই। সুশান্তের থেরাপিস্টের বক্তব্য নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। অভিনেতার জামাইবাবু বিশাল কির্তী বলেছেন, বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মতো জটিল মানসিক রোগের চিকিৎসা করতে হলে রোগীকে দীর্ঘসময় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। বাইপোলার ডিসঅর্ডার-১ নাকি বাইপোলার ডিসঅর্ডার-২ বা তারও উপরে রোগী ঠিক কোন স্টেজে রয়েছে সেটা জানার জন্য খুব কাছে থেকে কাউন্সেলিং করার প্রয়োজন হয়। বিশালের দাবি, অন্তত ৬ বছর লাগে এই ধরনের রোগের চিকিৎসার সঠিক ফলাফল পেতে। সুজান সেখানে দু’মাসেরও কম সুশান্তের কাউন্সেলিং করছিলেন। মাত্র কয়েকটাই সিটিং হয়েছিল সুশান্তের সঙ্গে। এরমধ্যেই তিনি এতটা গভীর ভাবে সব বুঝে গেলেন কীভাবে, প্রশ্ন তুলেছেন বিশাল। এদিকে সুশান্তের মৃত্যুর তদন্ত নিয়ে চরম টানাপড়েন চলছে বিহার ও মুম্বই পুলিশের মধ্যে। বিহার পুলিশ দাবি করেছে, তদন্তে সঠিকভাবে সহযোগিতা করছে না মুম্বই পুলিশ। সুশান্তের বাবা বিহার পুলিশের কাছে রিয়ার নামে এফআইআর দায়ের করেছেন। বিশ্বাসঘাতকতা, সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়া সহ বিভিন্ন ধারায় রিয়া ও তাঁর পরিবারের কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। বিহারের ডিজিপি গুপ্তেশ্বর পাণ্ডে দাবি করেছেন, তদন্তের জন্য বিহার পুলিশের আইপিএস বিনয় তিওয়ারি মুম্বই গেলে তাঁকে একরকম জোর করেই কোয়ারেন্টাইনে ঢুকিয়ে দেন বৃহন্মুম্বই পুরসভার আধিকারিকরা। তদন্তে বাধা দিতেই এই কাজ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। এর জবাবে মুম্বই পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, তারা সব রকমভাবে সাহায্য করছে। কিন্তু বিহার পুলিশই কোনও নিয়ম মানছে না। মুম্বই পুলিশের আরও দাবি, সুশান্তের বান্ধবী রিয়ার নামে অভিনেতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে। কিন্তু সুশান্তের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখা গেছে সেখানে ১৮ কোটি টাকা ছিল। এখনও সাড়ে চার কোটি টাকা রয়েছে অ্যাকাউন্টে। সুশান্তের অ্যাকাউন্ট থেকে রিয়ার অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা ট্রান্সফারের কোনও প্রমাণও নেই।