শেষ আপডেট: 2nd September 2020 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সুশান্ত সিং রাজপুত তীব্র মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন এমন তথ্য বারে বারেই উঠে এসেছে। তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট ডক্টর সুজান মোফাট ওয়াকার দাবি করেছিলেন সুশান্তের বাইপোলার ডিসঅর্ডার ছিল। ভুগছিলেন হাইপোম্যানিয়াতেও। অভিনেতার চিকিৎসা করেছেন আরও দুই মনোরোগ বিশেষজ্ঞও সম্প্রতি এমন কথাই জানিয়েছেন পুলিশকে। তাঁদের দাবি, সুশান্তের গভীর মানসিক অবসাদ ছিল, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগতেন। বাইপোলার ডিসঅর্ডারের উপসর্গও দেখা দিয়েছিল। সিবিআইকে দেওয়া বয়ানে এক মনোবিদের দাবি, সুশান্তের মানসিক চাপ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে তিনি সময়ও ঠিক মতো বুঝতে পারতেন না। এক মিনিট সময়কে তাঁর মনে হত কয়েকদিন। ডাক্তারের বক্তব্য, প্রচণ্ড উৎকণ্ঠায় ভুগছিলেন সুশান্ত। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করতেন না। এমনকি ওষুধ খাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ডাক্তারদের দাবি, রিয়া চক্রবর্তী নাকি সবসময় তাঁর স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতেন। সুশান্ত ডাক্তারের কাছে কাউন্সেলিং করাচ্ছেন কিনা, ওষুধ ঠিকমতো খাচ্ছেন কিনা, তার সবটাই নজরে রাখতেন বান্ধবী রিয়া। মুম্বই পুলিশ এর আগে দাবি করেছিল অভিনেতার মৃত্যুর পর থেকে তাঁর আত্মীয় ও অনাত্মীয়, ঘনিষ্ঠ কর্মচারী, বান্ধবী ও তাঁর পরিবারের লোকজন সহ মোট ৫৬ জনের বয়ান রেকর্ড করে নাকি নিশ্চিত হওয়া গেছে সুশান্ত বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগছিলেন। তার জন্য চিকিৎসা চলছিল। তিনি নিয়মিত ওষুধও খেতেন। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে যন্ত্রণাহীন মৃত্যুর উপায়, বাইপোলার ডিসঅর্ডার নিয়ে গুগলে সার্চও করেছিলেন অভিনেতা। অথচ, সুশান্তের পরিবারের দাবি, তাঁরা জানতেনই না যে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন সুশান্ত। উল্টে তাঁদের অভিযোগ ছিল, রিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার পরেই মানসিক চাপ বেড়ে যায় সুশান্তের। তাঁর দিদি তদন্তকারী অফিসারদের জানিয়েছিলেন, ২০১৩ সাল নাগাদ সুশান্ত একবার বলেছিলেন তিনি নাকি অবসাদে ভুগছেন। সেই জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার কথা ভাবছেন। তবে ভেতরে ভেতরে তিনি কতটা যন্ত্রণার মধ্যে ছিলেন সেটা তখন স্পষ্ট করে কিছু জানাননি অভিনেতা। সিবিআইয়ের জেরায় সুশান্তের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেছেন, গত ৮ জুন সুশান্তের সঙ্গে তাঁর শেষবার কথা হয়। সেই দিনই নাকি রিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। সুশান্তের দিদি মিতু তাঁর ফ্ল্যাটে এসে থাকছিলেন। রিয়া ডাক্তারকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ করে জানান যে সুশান্তের মানসিক অবস্থা ফের খারাপ হয়েছে এবং তিনি ওষুধ খাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন। ডাক্তারের কথায়, “আমি সুশান্তকে জিজ্ঞেস করি তিনি কেন ওষুধ খাচ্ছেন না। তার কোনও জবাব না দিয়ে সুশান্ত শুধু হেসেছিলেন। আমি বারবার বলেছিলাম নিয়ম করে ওষুধ খাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি শোনেননি। রিয়াও বলেছিল তার কথাও নাকি শোনেন না সুশান্ত।” ডাক্তারের বক্তব্য, সুশান্তের মৃত্যুর জন্য তাঁর মনের গতিবিধি অনেকটাই দায়ী। অভিনেতা গভীর অবসাদে চলে গিয়েছিলেন, প্রচণ্ড উদ্বেগে ভুগছিলেন। ডাক্তারের দাবি, কোনও রোগী এমনভাবে অবসাদে চলে গেলে তাঁর মনে খারাপ চিন্তা বাসা বাঁধতে শুরু করে। রোগী মনে করেন তিনি অতীতে এমন কোনও কাজ করেছেন বা এমন কিছু হারিয়ে ফেলেছেন যা আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। নিজের একাধিক সিদ্ধান্তকে ভুল বলে মনে হতে থাকে রোগীর। এই ভাবনা থেকেই প্রচণ্ড মানসিক চাপ শুরু হয়, নিজেকে শেষ করে দেওয়ার ইচ্ছাও জাগে। ডাক্তার বলছেন, মৃত্যুর কয়েকদিন আগে সুশান্ত নাকি বলেছিলেন, গত দশ দিন ধরে এমনই সব চিন্তাভাবনা মাথায় আসছে তাঁর। খালি মনে হচ্ছে তিনি সবকিছু হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁর আর বাঁচতে ইচ্ছে করছে না। সবসময় একটা অজানা আতঙ্ক, ভয় তাঁকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিল। ডাক্তারের দাবি, ক্রমাগত অবসাদে ভুগতে ভুগতেই বাইপোলার ডিসঅর্ডারের উপসর্গও দেখা দিচ্ছিল তাঁর মধ্যে। বাইপোলার ডিসঅর্ডার হল এমন এক মানসিক স্থিতি যেখানে মেজাজ বদলে যেতে পারে যে কোনও অবস্থাতেই। কখনও হাসিখুশি আবার কখনও তীব্র অবসাদে আচ্ছন্ন হয়ে পড়তে পারে রোগী। এক দ্বৈত সত্তারও জন্ম হয়। নিজের ভেতরে সম্পূর্ণ অন্য একটা মানুষকে অনুভব করতে শুরু করে রোগী। একই সঙ্গে দুই বিপরীতধর্মী আচরণ দেখা যায় রোগীর মধ্যে। মন ও মেজাজের এই আকস্মিক বদল ধরতে পারেন না রোগীর কাছে থাকা মানুষজনও। সিবিআইকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন যে, থাইরয়েডের সমস্যা বা স্টেরাটোনিন হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে গেলেও এমন অবসাদে ভুগতে পারেন রোগী। স্টেরাটোনিন এমন এক হরমোন যার পরিমাণের তারতম্য হলে রোগী গভীর অবসাদে চলে যেতে পারে। সুশান্তের ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। তদন্তকারীরা বলেছেন সুশান্তের মানসির রোগের চিকিৎসা করছিলেন এমন আরও মনোবিদ জানিয়েছেন, অভিনেতা নাকি ২০ বছর বয়স থেকেই মানসিক রোগের শিকার ছিলেন। তাঁর দাবি, গত বছর অক্টোবরে সুশান্তের সঙ্গে কথা হয়। তখনই তিনি জানতে পারেন অভিনেতা খুব কম বয়স থেকেই নানা কারণে উদ্বেগে ভুগতেন। ২০১৩-১৪ সালেও নাকি এমনভাবেই মানসিক অবসাদ চেপে বসেছিল তাঁর। ডাক্তারের বক্তব্য, নিজের রোগ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন অভিনেতা, কিন্তু কোনওদিনই ঠিকঠাকভাবে চিকিৎসা করাননি তিনি। সেই রোগই বেড়ে একটা সময় চরম পর্যায়ে পৌঁছয়। তারই ফল বাইপোলার ডিসঅর্ডার।