শেষ আপডেট: 20th November 2023 19:08
দ্য ওয়াল ব্যুরো, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: খেতে পেকে গেছে ফসল। কিন্তু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ফসল কাটার লোক। সমস্যায় পড়ছেন খেতের মালিকরা।
খেত মজুর খুঁজে না পাওয়ার কারণ কী? জমির মালিকদের দাবি, বাংলার বেশির ভাগে চাষি ভাল উপার্জন করতে পাড়ি দিচ্ছেন বাইরে। তাঁরা অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাত, তামিলনাড়ুতে যাচ্ছেন। তাই গ্রামের মাঠে পড়ে থাকছে পাকা ধান।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা বিশেষ করে সুন্দরবন এলাকার বাসন্তী, ক্যানিং, জীবনতলা, গোসাবা, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, কুলতলি ও জয়নগর সহ একাধিক এলাকা থেকে অনেকেই কাজের জন্য চলে যাচ্ছেন গুজরাত, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, বেঙ্গালুরু, কেরালায়।
স্থানীয়রা বলছেন, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুতে বাংলার চাষিদের কদর বেশি। মোটা টাকাও মেলে। তাই গ্রামের বেশিরভাগে খেতমজুর বাইরেই চলে যাচ্ছেন। প্রতিদিন ক্যানিং থেকে খেত মজুররা দল বেঁধে লোকাল ট্রেনে শিয়ালদহ কিংবা হাওড়া যাচ্ছেন দূরপাল্লার ট্রেন ধরতে। শুধু পুরুষরা নয়, মহিলা খেত মজুররাও কাজ করতে ভিন দেশে পাড়ি দিচ্ছেন।
গোসাবার কামাক্ষাপুরের ষাটোর্ধ্ব মহিলা চাষি কাননবালা মুণ্ডা খেত মজুরের কাজ করেন। তাঁর দাবি, ভিন রাজ্যে দেড় মাস কাজ করলেও প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা বাড়িতে আনা যাবে। কিন্তু এলাকায় দেড় মাস কাজ করলে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকার বেশি পাওয়া সম্ভব নয়। একই সঙ্গে ওখানে থাকা খাওয়ার সব ব্যবস্থা জমির মালিকরাই করে দেন। এখানে বাড়ির খেয়ে সব কাজ করতে হবে। এখানে ঠিকমতো কাজ নেই। সংসার কী ভাবে চলবে? কাননবালার দাবি, এখানে এই সমস্ত সুবিধা পেলে বাইরে যেতে হত না।
সন্ন্যাসী সর্দার বলেন, ''আমরা আদিবাসী। ১৯৯৩ সালে মাধ্যমিক পাশ করেছি। কোনও চাকরি পাইনি। তাই পেটের জ্বালা মেটাতে দিনমজুরের কাজ করতে হয়। গ্রামে কোনও কাজ নেই। সংসার কীভাবে চালাব?''
সুন্দরবনের এক মহিলা খেতমজুর অন্তা সর্দার জানিয়েছেন, ''সুন্দরবনে মহিলা চাষিদের ২০০-২৫০ টাকার বেশি রোজ দিতেই চায় না জমির মালিকরা। কিন্তু অন্ধ্রপ্রদেশ কিংবা তামিলনাড়ুতে গিয়ে ধান রোয়ার কাজ করলে পুরুষদের সমতুল্য মহিলারাও প্রায় হাজার বারশো টাকা রোজ পান।''
সুন্দরবনের জমি বেশির ভাগেই এক ফসলি। শ্রাবণ, ভাদ্র মাসে ধান রোয়ার পর তা অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসের মধ্যে কাটা হয়ে যায়। সেই ধান এখন পাকতে শুরু করেছে। সেই ধান কাটার জন্য এখন খেত মজুর পাওয়া দুষ্কর হয়ে গেছে। তাই ধান কেটে ঝাড়ায় মাড়াই করে ঘরে তুলতে পারছেন না সুন্দরবনের জমির মালিকরা।