শেষ আপডেট: 31st December 2023 17:03
দ্য ওয়াল ব্যুরো, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে দত্তপশুর নদী। এই নদীর এক তীরে ঘন জঙ্গল। এলাকায় রয়েছে রয়্যাল বেঙ্গলের আস্তানা। অপর তীরে জনবসতি গড়ে উঠেছে। রজতজুবিলির ১৩ নম্বর অ্যানপুর গ্রামও এই এলাকারই অন্তর্গত। এক সময়ে বাঘের হানায় কাঁপত গোটা গ্রাম। তৎকালীন জমিদার পরেশ মণ্ডল পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে বাঘ শিকার করেন। সেই জমিদারবাড়ির বংশধর হয়েও এখন জীর্ণদশায় দিন কাটছে প্রফুল্ল মণ্ডলের।
চাঁচাড়ি ঘেরা খড়ের ছাউনির ঘরে পরিবার নিয়ে বাস প্রফুল্লবাবুর। ৮৩ বছরের এই বৃদ্ধের তিন ছেলেই অকালে মারা গিয়েছেন। বর্তমানে স্ত্রী বিশাখা, পুত্রবধূ রূপা ও এক নাতিকে নিয়ে তাঁর সংসার। অভাব অনটনে কাটছে তাঁদের। জমিদার বাড়ির বংশধর হয়েও এখন তাঁরা নিঃস্ব। কোনও রকম সরকারি সাহায্য পাননি বলেই তাঁদের অভিযোগ। প্রফুল্লবাবুর এখন দিন কাটে বাবা-কাকাদের বাঘ শিকারের স্মৃতির ছবি আঁকড়ে।
তাঁর কথায়, ''বাবা ও তাঁর সঙ্গীরা বাঘ মেরে বীরত্ব দেখিয়েছিলেন, পুরষ্কার জুটেছিল। সেটা ছিল খুব আনন্দের। আমিও একজন দক্ষ শিকারি হয়ে বিখ্যাত হতে চেয়েছিলাম। সেটা সম্ভব হয়নি। অকালে তিন সন্তানকে হারিয়েছি। শোকে পাথর হয়ে গিয়েছি। মাঝে মধ্যে সেই দুঃখ যন্ত্রণা ভুলতে বাবার স্মৃতি আঁকড়ে ধরি।”
প্রফুল্লবাবু জানিয়েছেন, তিনি ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। বাংলা, ইংরাজি ভাষায় সমান দখল থাকলেও সরকারি চাকরি তিনি পাননি। পরে বাবার দেখানো পথই বেছে নেন। শিকারি হওয়ার প্রশিক্ষণ শুরু করেন। তাতে অবশ্য কাজ জোটেনি। গ্রামে বাঘ পড়লে তাড়িয়ে গভীর জঙ্গলে পাঠিয়েছেন। এই কাজের জন্য কোনও স্বীকৃতি মেলেনি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সুন্দরবনে লোকালয়ের গোড়াপত্তনকারী স্যার ডেনিয়্যাল হ্যামিলটন সাহেব সুন্দরবনকে বাসযোগ্য করে তোলার ব্যবস্থা নিতে শুরু করলে গোসাবার বিভিন্ন এলাকার জমিদারদের সঙ্গে তাঁর সখ্যতা গড়ে ওঠে। প্রায় ৭৭ বছর আগে শীতের মরশুমে দত্তপশুর নদী সাঁতরে ১৩ নম্বর অ্যানপুর গ্রামে ঢুকে পড়েছিল বাঘ। ভয়ে কাঁপতে থাকে গোটা গ্রাম। এই ঘটনার কিছুদিন আগেই হরিণ শিকার করার জন্য গ্রামের জমিদার পরেশ মণ্ডল একটি বন্দুক কিনেছিলেন। পরিত্রাণ পেতে তাই গ্রামের মানুষজন জমিদারের শরণাপন্ন হন। গ্রামবাসীরা দাবি করেন, বাঘের হাত থেকে গ্রাম বাঁচাবার উপায় বের করতে হবে।
বাঘের কবল থেকে গ্রামবাসীদের জীবন রক্ষা করার জন্য পরেশ মণ্ডলের নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয় একটি দল। সেই দলেই ছিলেন প্রফুল্লবাবুর বাবা সুরেন্দ্রনাথ মণ্ডলও। দলের ৭ জনই বন্দুক নিয়ে বাঘ শিকারে বেরিয়ে পড়েন। ধানখেতে শুরু হয় বাঘে মানুষের লুকোচুরি খেলা। এমন ভাবে কয়েকদিন চলার পর ধানখেতের মধ্যে বাঘটিকে শিকার করেন তারা। এই কাজে খুশি হয়ে হ্যামিলটন সাহেব তাঁদের পুরস্কার হিসাবে পাঁচ বিঘা জমি দিয়েছিলেন।