শেষ আপডেট: 11th April 2025 18:26
দ্য ওয়াল ব্যুরো: গত ৩ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) জানিয়ে দিয়েছিলেন, ৩০ এপ্রিল থেকে রাজ্যের স্কুলগুলিতে (School Summer Vacation) গরমের ছুটি শুরু হবে। এদিন এ ব্যাপারে পর্ষদের তরফে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, সরকারি নির্দেশিকায় গরমের ছুটি শুরুর কথা জানানো হলেও কবে এই ছুটি শেষ হবে তা জানানো হয়নি। যা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি। একই সঙ্গে গোটা ঘটনার নেপথ্যে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার প্রয়াসও দেখছেন শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠন।
প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন 'অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস'-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতির বক্তব্য, "গরমের ছুটি পড়ার তারিখ জানালে কবে গরম কমবে বা কবে থেকে স্কুল খুলবে সেটাও তো জানানো দরকার। কিন্তু কোথায় কী! বিজ্ঞপ্তিতে তো কবে থেকে স্কুল খুলবে তার কোনও উল্লেখ নেই। শুধু তাই নয়, নির্দেশিকায় বেসরকারি স্কুলের নামও নেই। এর থেকেই তো পরিষ্কার, সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার চেষ্টা হচ্ছে।"
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকদের সংগঠনের তরফে পর্ষদকে চিঠিও লেখা হয়েছে। তাতে পর্ষদের ছুটির নোটিসের তীব্র সমালোচনা করে লেখা হয়েছে, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ছুটির তালিকায় গরমের জন্য মাত্র ১১ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ পরিকল্পিতভাবে প্রতিবারই সেই ছুটিকে দেড় থেকে দু'মাসে টানা হয়। এর ফলে আদতে সরকারি স্কুলগুলির পঠন পাঠন ব্যাহত হচ্ছে।
শিক্ষা দফতরের সূচি জানিয়েছিল, এ বছর গরমের ছুটি ১২ মে থেকে শুরু হয়ে ২৩ মে পর্যন্ত চলবে। অর্থাৎ, মাত্র ১১ দিনের জন্য স্কুল বন্ধ থাকবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মতো গ্রীষ্মপ্রধান রাজ্যে এত কম সময়ের ছুটি যথেষ্ট কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন শিক্ষকরা। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী ওই ছুটির মেয়াদ আরও ১৩ দিন এগিয়ে আনার কথা ঘোষমা করেছিলেন।
কালবৈশাখীর দাপটে ইতিমধ্যে গরম বেশ কিছুটা কমেছে। চন্দনবাবু বলেন, "উত্তরবঙ্গে তো এখনও গরমই পড়েনি। এভাবে সময়ের আগে থেকে স্কুল ছুটি দিয়ে দিলে মে, জুন মাসে কী হবে? সেপ্টেম্বরে উচ্চ মাধ্যমিকের সেমিস্টার রয়েছে, তার কী হবে? দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকলে সিলেবাস কীভাবে শেষ হবে?"
খানিক থেমে জবাবও দিয়েছেন নিজেই। চন্দনবাবু বলেন, "এমনিতেই বহু স্কুলে শিক্ষক নেই। তার ওপর নতুন করে চাকরিহারা হয়েছেন হাজার হাজার শিক্ষক। স্কুলের পঠনপাঠন কীভাবে চলবে, সেই নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই কি আগাম স্কুলের গরমের ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হল?"
এ ব্যাপারে সরাসরি পর্ষদের কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে পর্ষদের একটি সূত্রের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী ৩ এপ্রিল যখন গরমের ছুটির কথা ঘোষণা করেছিলেন, তখন রাজ্যজুড়ে তীব্র গরম ছিল। এই মুহূর্তে কালবৈশাখীর জন্য গরম কিছুটা কমলেও আবহাওয়া দফতরও জানিয়েছে, শীঘ্রই রাজ্য জুড়ে তাপদাহের পরিস্থিতি তৈরি হবে। তাই ৩০ এপ্রিল থেকে গরমের ছুটি ঘোষণার মধ্যে কোনও ভুল দেখছেন না পর্ষদের কর্তারা।
পর্ষদের এক আধিকারিকের কথায়, "গরমের ছুটি কবে শেষ হচ্ছে, বিজ্ঞপ্তিতে সেটিও উল্লেখ করা উচিত ছিল। কী কারণে তা বাদ গেল, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।"
তবে শিক্ষকদের বড় অংশ গরমের ছুটির সময় বাড়ানোর বদলে স্কুলের সময় বদলের পক্ষপাতী। তাঁদের মতে, সকাল সকাল ক্লাস শুরু হলে গরমের কষ্টও কমবে, আবার পড়াশোনাতেও বাধা হবে না। কারণ টানা এক-দেড় মাস স্কুল বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে। বিশেষত, যারা প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী, তারা স্কুলেই মূলত পড়াশোনা শেখে। দীর্ঘ বিরতির পর স্কুল খুললে দেখা যায়, অনেক ছাত্র আগের শেখা বিষয় ভুলে গেছে। এছাড়া, দীর্ঘ ছুটির আর একটি বড় সমস্যা হল মিড-ডে মিল প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়া