শেষ আপডেট: 31st May 2024 15:20
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কলকাতা আরও একবার নজির গড়ল বিরল অস্ত্রোপচারে। প্রতি ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে এমনটা হয়ে থাকে। সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে বুধবার এই অস্ত্রোপচার হয়েছে। কঠিন হলেও সফল অস্ত্রোপচার শেষে খুশি চিকিৎসকরা। হার্ট বাঁদিকের বদলে ছিল ডানদিকে। আর তাতেই ছিল সঙ্কটের কারণ!
মধ্যবয়সি এই মহিলার প্রথমে শুরু হয় বুকের ডানদিকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট। কিন্তু কে বুঝবে ডানদিকে ব্যথা হলেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে! এমন অনেকেই আছেন যাঁদের হার্ট থাকে ডানদিকে। তাই এই মহিলার রোগ নির্ণয়ে দেরি হয়। হাসপাতালে এলে ইসিজি করে ধরা পড়ে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে ও রোগীর ‘ডেক্সট্রোকার্ডিয়া’ রয়েছে। এই বিশেষ পরিস্থিতি নিয়ে যদি কেউ জন্মান, তাঁর শরীরে ‘সাইটাস ইনভার্সাস’ অর্থাৎ, বেশির ভাগ অঙ্গপ্রত্যঙ্গই শরীরের উলটো দিকে থাকে। এক্ষেত্রে হার্টের পাশাপাশি যকৃৎ, প্লীহা, ফুসফুসের অবস্থানও উলটো হয়।
মহিলার নাম মোনারানি দাস। বাড়ি বাংলাদেশের খুলনা জেলার সাতক্ষীরায়। বয়স ৫৪ বছর। বছর দুই আগে হঠাৎ বুকের ডানদিকে ব্যথা শুরু হয়। তাই কেউ তেমন গুরুত্ব না দিয়ে অ্যাসিডিটির সমস্যা ভেবে ওষুধপত্র দেওয়া হয়। এরপর বুকে ব্যথার সঙ্গে শুরু হল শ্বাসকষ্ট। তারপরে একদিন হৃদরোগে আক্রান্ত হন মোনারানি। প্রায় দেড় বছর ধরে বাংলাদেশে নানা পরীক্ষা হয়। তখনই রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকদের মাথায় হাত। তাঁর হৃদপিণ্ড তো বুকের ডান দিকে!
দেখা যায়, শুধু হার্ট নয়, তাঁর যকৃত, প্লীহা, ফুসফুস এবং পাকস্থলীও যেদিকে থাকার কথা তার উল্টোদিকে। অর্থাৎ তিনি শুধু ডেক্সট্রোকার্ডিয়াই ছিল না, তাঁর সিটাস ইনভারসাসও ছিল। অর্থাৎ তাঁর দেহের প্রধান অঙ্গগুলি, স্বাভাবিকভাবে যেদিকে থাকার কথা, ঠিক তার উল্টো দিকে ছিল। এটাই ছিল ডাক্তারদের কাছে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ।
কলকাতার মনিপাল হাসপাতাল ব্রডওয়েতে সফলভাবে করা হয় অস্ত্রোপচার। হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জন সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, এমন রোগীর সংখ্যা বিরল। কয়েক লাখে একজনের হয়। অপারেশন করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকে। যে পদ্ধতিতে বাইপাস করা হয় সেটা পুরোটাই উলটোভাবে করা, শিরা-ধমনীর অবস্থান, রাইট অর্টিকল, লেফট ভেন্ট্রিকল সব বুঝে করতে হয়। তবে এসব পরিস্থিতিকে জয় করেই অপারেশন খুবই সফলভাবে করা সম্ভব হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে মোনারানিকে দেখানো হয়, কল্যাণীর একজন চিকিৎসককে। কারণ, তাঁর মেয়ে-জামাইয়ের বাড়ি নদিয়াতে। ওই ডাক্তার পরামর্শ দেন কলকাতায় যাওয়ার জন্য। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, তিনি গুরুতর করোনারি আর্টারির অসুখে আক্রান্ত। তারপর নিয়ে আসা হয় কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে। তবে কী কারণে এই সমস্যা হয়? সেটা এখনও জানা যায়নি। এই বিরল রোগ আগে থেকে প্রতিরোধ করাও সম্ভব নয়।