শেষ আপডেট: 12th April 2025 10:17
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ওয়াকফ (সংশোধিত) আইন বাতিলের (Waqf Bill) দাবিতে শুক্রবার দুপুর থেকে দফায় দফায় উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদের (Mursidabad) জঙ্গিপুর-সহ একাধিক এলাকা। অশান্তি থামাতে গিয়ে জখম হন ফারাক্কার এসডিপিও। তবে শনিবার সকাল থেকে নতুন করে কোনও অশান্তির ঘটনা ঘটেনি বলেই প্রশাসনের দাবি। পুলিশের পাশাপাশি উত্তেজনা প্রবণ এলাকায় টহল দিচ্ছে বিএসএফের জওয়ানরাও। সূত্রের খবর, শুক্রবারের অশান্তির ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ এখনও পর্যন্ত ১১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে।
এদিকে শুক্রবার অশান্তির মধ্যে পড়ে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। আক্রান্ত যুবকের নাম মোশারফ হোসেন। তাঁর বাবা জানান, গোলমালের সময় ছেলে রাস্তায় জিনিস কিনতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। তার বুকে গুলি লাগে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় শনিবার সকালে তাকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
ওয়াকফ সংশোধনী বিলের প্রতিবাদ মিছিলকে কেন্দ্র করে শুক্রবার দুপুরে মুর্শিদাবাদে অশান্তি চরমে পৌঁছয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথরবৃষ্টি চলে। পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানো, সাধারণ যানবাহন ও বাইক ভাঙচুর— একাধিক ঘটনায় অশান্তি ছড়িয়েছে শাজুরমোড় ও ধুলিয়ান সংলগ্ন এলাকায়।
পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গুজব ছড়ালে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পক্ষ থেকে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠিয়েছে বিএসএফও। বিএসএফের দাবি, রাজ্যের আবেদনেই তারা অতিরিক্ত ফোর্স পাঠিয়েছে। মুর্শিদাবাদের ঘটনায় কড়া বার্তা দিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও।
ভিডিয়ো বার্তায় রাজ্যপাল বলেন, "কিছু লোক আইনশৃঙ্খলা নিজেদের হাতে তুলে নিচ্ছে, এটা খুবই উদ্বেগের। তবে অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। সরকার দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।"
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওয়াকফ ইস্যুতে শুক্রবার জাতীয় সড়ক ১২ অবরোধ করে শতাধিক মানুষ বিক্ষোভে সামিল হন। পুলিশ অবরোধ সরাতে গেলে বিক্ষোভকারীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনে পাথর ছোড়া হয়। জখম হন ফারাক্কার এসডিপিও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটায়।
এই ঘটনার মাঝেই ধুলিয়ানে স্থানীয় তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমানের অফিসে হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা। ভাঙচুর করা হয় অফিসের মধ্যে। একপ্রকার প্রাণে বাঁচতে হয় সাংসদকে। তিনি জানান, “আমি তখন শাজুরমোড় পার হচ্ছিলাম। বিক্ষোভকারীরা আমাকে ঘিরে ধরে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করে। কোনও সংগঠনের পতাকা বা নেতা সেখানে ছিল না। পরে পুলিশ আমাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে।”
ঘটনার পর মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন অংশে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও। মুর্শিদাবাদের জেলা শাসক রাজর্ষি মিত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “অঞ্চলে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হচ্ছে।”
পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ধুলিয়ানগঙ্গা ও নিমতিতা স্টেশনের মাঝে ট্র্যাক অবরোধের জেরে অন্তত পাঁচটি ট্রেন আটকে পড়েছে। এর আগে, ৮ এপ্রিল একই ইস্যুতে জঙ্গিপুরের উমরপুরে জাতীয় সড়ক অবরোধ ও পুলিশের গাড়ি পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছিল। তবে শনিবার সকালে মোটের ওপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক। উত্তেজনা থাকায় পুলিশ ও বিএসএফ এলাকা টহল দিচ্ছে।
ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারকে নিশানা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অভিযোগ, “রাজ্য জুড়ে যেভাবে দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে, তা বন্ধ করতে ব্যর্থ রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ নিষ্ক্রিয়।” তিনি মুর্শিদাবাদ, দুই চব্বিশ পরগনা, হুগলি, মালদা ও বীরভূম জেলার একাধিক থানার আওতাভুক্ত এলাকায় সংবিধানের ৩৫৫ ধারা প্রয়োগের দাবি জানান।