শেষ আপডেট: 4th May 2020 02:00
কলকাতার ছাত্রী আটকে দিল্লিতে, নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে যত্নে রেখেছেন পুলিশ, কৃতজ্ঞ পরিবার
দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করার জন্য দেশজুড়ে জারি লকডাউন। তা সফল করতে শক্ত হাতে লড়ছেন সারা দেশের পুলিশকর্মীরা। সেই লড়াই ঠিক যতটা কঠিন, ততটাই বোধহয় কোমল। সে জন্যই বারবারই দেশের করোনা লড়াইয়ে মানবতার নজির গড়েছেন পুলিশকর্মীরা। নিয়েছেন নানা দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগও। আদায় করে নিয়েছেন দেশবাসীর কুর্নিশ। এবার তেমনই এক কাজ করে আত্মীয়তার বন্ধন গড়লেন দিল্লির এক পুলিশকর্মী অরবিন্দ কুমার। পশ্চিমবঙ্গ থেকে পরীক্ষা দিতে গিয়ে আঠকে পড়া ছাত্রী সুস্মিতাকে আশ্রয় দিলেন নিজের বাড়িতে। দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষিত হওয়ার পরে নানা রাজ্যে শ্রমিক, ছাত্র-ছাত্রী সহ বহু মানুষ আটকে পড়েন নানা কারণে। কোথাও আটকে পড়েন শয়ে শয়ে অভিবাসী শ্রমিক, কোথাও আবার তীর্থযাত্রীরা। কোথাও বাড়ি ছেড়ে নিরুপায় ছাত্রছাত্রীরা। এই আটকে পড়ার মধ্যেই কোথাও খাবারের সমস্যা, কোথাও বা জলের সমস্যা। কোথাও আবার নিরাপত্তার অভাব-- সবই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনই সমস্যায় পড়েন বাংলার ছাত্রী ২১ বছরের সুস্মিতা সাউ। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন তাঁর দু’চোখে। দিল্লিতে তারই প্রস্তুতির জন্য পড়াশুনা করতে গেছিলেন। জানকীপুরের আকাশ ইনস্টিটিউটে পড়তেন। সামনেই নিট পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছিল তুঙ্গে। কিন্তু লকডাউনের ফলে আচমকা সব বন্ধ। মাথায় হাত পড়ল তাঁর। খালি হয়ে গেল হস্টেল, পরীক্ষাও পিছিয়ে গেল, এদিকে বাড়ি ফেরার আর কোনও উপায় নেই। একা পড়ে যান সুস্মিতা। দিল্লিতে তাঁর চেনাজানা আত্মীয়-বন্ধুও কেউ নেই। এমন সময়ে তাঁর এই বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন দিল্লি পুলিশের একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর অরবিন্দ কুমার। অরবিন্দের নিজের মেয়েও থাকতেন সুস্মিতার ওই একই হস্টেলে। লকডাউন হয়ে যাওয়ার পরে নিজের মেয়েকেই বাড়ি ফিরিয়ে আনতে গিয়েছিলেন অরবিন্দ। সেখানেই মেয়ের বন্ধু সুস্মিতার এই সমস্যার কথা শোনেন। কোনও দ্বিধা না করে নিজের মেয়ের সঙ্গেই সুস্মিতাকেও বাড়িতে নিয়ে আসেন অরবিন্দ। আশ্বাস দেন, যত দিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে তত দিন যেন সুস্মিতা সেখানেই থাকেন। তাই হয়েছে। দিল্লির ওই পুলিশের পরিবারে নিরাপদেই আছেন সুস্মিতা। এই ঘটনা জানতে পেরে আপ্লুত সুস্মিতার পরিবারও। তাঁরা আলাদা করে দিল্লি পুলিশকে চিঠি দিয়ে এএসআই অরবিন্দ কুমারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সুস্মিতার মা সঙ্গীতা সাউ লিখেছেন, তাঁর মেয়ে কুমার পরিবারের কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত। তবুও তাঁরা মেয়েকে আশ্রয় দিয়েছেন। যত্ন করছেন। পুলিশের এই ভূমিকা তাঁর কল্পনার বাইরে ছিল। তিনি পুলিশের এই অবদান ভুলবেন না। সঙ্গীতাদেবী সংবাদমাধ্যমকে আরও জানান, ২৪ মার্চের পরে মেয়ের জন্য তাঁর অসহায় লাগছিল। মেয়ে ফোনে কান্নাকাটি করছিল, একা কীভাবে থাকবে। কিন্তু কোনও উপায় ভেবে পাচ্ছিলেন না তাঁরা। মেয়ের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তা করছিলেন। সে সময় অরবিন্দ কুমারের মতো মানুষ পাশে এসে দাঁড়িয়ে যেভাবে তাঁর সন্তানের খেয়াল রেখেছেন, তাতে তিনি চিরকৃতজ্ঞ। দিল্লী পুলিশের কাছে সঙ্গীতার লেখা চিঠি পৌঁছনোর পরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশংসিত হয়েছেন অরবিন্দ। পুলিশ কমিশনার এসএন শ্রীবাস্তব নিজে অরবিন্দ কুমারের নামে দশ হাজার টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। কমিশনার বলেছেন, তাঁরাও অভিভূত এই চিঠি পেয়ে। তাঁদেরই কর্মী এমন সুন্দর কাজ করেছেন দেশের এই দুঃসময়ে, ভিন্ রাজ্যের ছাত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছেন, এ তাঁদেরই গর্ব। শ্রীবাস্তববাবু সুস্মিতার মাকেও আলাদা করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এই ধরনের চিঠি এবং স্বীকৃতি পুলিশকে আরও ভাল কাজ করার অনুপ্রেরণা দেবে বলে তিনি জানিয়েছেন।