শেষ আপডেট: 22nd January 2025 18:23
দ্য ওয়াল ব্যুরো: গত ডিসেম্বরের শেষ ১০ দিন কর্তা থেকে কর্মী, বন দফতরের সকলকে নাস্তানাবুদ করেছিল বাঘিনি জিনাত। সেই ক্ষত শুকানোর আগেই একাধিকবার পুরুলিয়া সীমান্তে উঁকি দিচ্ছে জিনাতের সঙ্গী! এদিকে কম যায় না হাতির দলও। উত্তর থেকে দক্ষিণ, হাতির হামলা যেন বেড়েই চলেছে।
বাড়ছে জঙ্গল! সেই সূত্রে বাঘ-হাতির আনাগোনাও বেড়েছে বাংলার জঙ্গলমহলে। তাই বাঘ, হাতির গতিবিধির ওপর বাড়তি নজরদারির জন্য এবার জঙ্গল এলাকার স্থানীয় ছেলেদের যুক্ত করতে চলেছে রাজ্য।
বুধবার আলিপুরদুয়ারের প্রশাসনিক সভা থেকে এই ইঙ্গিত দিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যসচিবের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "এবার বাঘ, হাতির মুভমেন্ট দেখার জন্য লোকাল ট্রাইবাল ছেলেদের ইনভলভ করো।"
প্রসঙ্গত, একটা সময় রাজ্যে হাতির সংখ্যা কমতে কমতে পঁচাত্তরে এসে ঠেকেছিল। বন দফতরের হিসেব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সেই সংখ্যাটা প্রায় ৮০০! শুধু তাই নয়, যেভাবে চক্রাকারে হাতির সংখ্যা বাড়ছে তাতে হস্তীকূলের প্রজননে এখনই লাগাম না টানতে পারলে আগামীদিনে সংখ্যাটা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে যাবে বলে মনে করছেন বন দফতরের কর্তারা। এ ব্যাপারে কেন্দ্রকে চিঠিও দিয়েছে রাজ্য। তবে কেন্দ্রের তরফে এখনও কোনও উত্তর আসেনি।
এর পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গেও রয়েছে 'রেসিডেন্সিয়াল' হাতির উপদ্রব। একবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে ফি শীতের সময় খাবারের খোঁজে ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড থেকে বাংলার জঙ্গলমহলে পাড়়ি দিত হাতির দল। পরবর্তী কালে সেই হাতিরই একাংশ মানুষের সংস্পর্শে চলে এলে দল নিতে অস্বীকার করে। বন দফতরের পরিভাষায়, দলছুট এই হাতিকে বলা হয় 'রেসিডেন্সিয়াল'। এই মুহূর্তে দক্ষিণবঙ্গের জঙ্গলমহলে প্রায় শতাধিক 'রেসিডেন্সিয়াল' হাতি রয়েছে। এর পাশাপাশি প্রতি শীতে ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড থেকে আসে হাতির দল।
বাড়তি বিড়ম্বনা তৈরি করেছে বাঘের উপস্থিতি! বন দফতর সূত্রের খবর, জিনাত পরবর্তী সময়ে রাজ্যে বাঘের আনাগোনা বেড়েছে। যা নিয়ে সম্প্রতি এক বনকর্তা রসিকতা করে দ্য ওয়ালকে বলেছিলেন, "বাঘের আর কী দোষ! ভাল রেস্তোরাঁয় কে বা খেয়ে না চায়!"
এখানে উল্লেখ করা দরকার, একসময় কাঠ পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য এবং প্রচণ্ড গরমে জঙ্গলে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনায় জঙ্গলমহলের বনাঞ্চল অনেকখানি খালি হয়ে গিয়েছিল। এরপরই গত কয়েক বছরে বন দফতরের তরফে রাজ্যে জঙ্গলবৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়। যার নিটফল, শাল, অর্জুনের ঘন বনাঞ্চল এখন জঙ্গলমহল জুড়ে। শুধু জঙ্গলের ঘনত্ব বেড়েছে তাই নয়, ইদানীং সেখানে বন্য জীবজন্তুর সংখ্যাও বেড়েছে। ফরেস্ট সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ রাজ্যে শতকরা .৭ শতাংশ বনাঞ্চল বৃদ্ধি পেয়েছে।
বনকর্তাদের কথায়, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রামের এই ঘন জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে ছোট ছোট জলাশয়ও। গভীর জঙ্গল আর জল হল বাঘের জন্য আদর্শ জায়গা। ফলে হাতির পর এবার বছর বছর বাঘ-বাঘিনির আগমনও অস্বাভাবিক নয়। আর সেই হাতি-বাঘের আগমন ঘিরেই নতুন করে কর্ম সংস্থানের সুযোগ পেতে চলেছে জঙ্গল এলাকার তরুণেরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বনকর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় তরুণদের বাঘ-হাতির নজরদারির কাজে লাগানোর এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এতে করে জঙ্গল এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তা আরও সুরক্ষিত হবে।