শেষ আপডেট: 7th May 2024 17:36
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের পর যে বড় প্রশ্ন উঠেছিল, তার উত্তর সন্ধানের একটা দিশা দেখাল সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার শুনানির পর সংক্ষিপ্ত রায়ে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জানিয়ে দিলেন, মূল বিষয় হল, নিয়োগের তালিকা থেকে কি যোগ্য ও অযোগ্য আলাদা করে বাছাই করা সম্ভব? তা যদি সম্ভব হয় তাহলে গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া তথা প্যানেল বাতিল করে দেওয়া ভুল হবে।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, আদালতকে আরও মাথায় রাখতে হবে যে নবম-দশম শ্রেণির এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল করলে পঠনপাঠনও ব্যহত হবে। তাই যোগ্য ও অযোগ্য বাছাই করা সম্ভব ধরে নিয়ে এই আদালতের সামনে এখন দায়িত্ব হল, তার মাপকাঠি স্থির করা।
এদিন দীর্ঘ শুনানির শেষে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় আরও বলেন, “সুবিচারের জন্য এই মামলায় দ্রুত শুনানি প্রয়োজন বলে শীর্ষ আদালত মনে করছে। সেই কারণে মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ১৬ জুলাই ধার্য করা হচ্ছে।”
শীর্ষ আদালত এদিনের শুনানিতে পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছে, কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ যে নির্দেশ দিয়েছে তার উপর এখনই পুরোপুরি স্থগিতাদেশ দেওয়া হচ্ছে না। তবে হ্যাঁ অন্তর্বতী স্থগিতাদেশ দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ ১৬ জুলাই পর্যন্ত আপাতত কারও চাকরি যাচ্ছে না। বা কাউকে বেতনের টাকা ফেরত দিতে হবে না। শুধু তা নয়, সুপার নিউমারেরি পোস্ট তৈরির জন্য কলকাতা হাইকোর্ট যে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল, তার উপরেও অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ রইল।
কিন্তু শীর্ষ আদালত এও পষ্টাপষ্টি জানিয়ে দিয়েছে যে, যদি দেখা যায় কোনও ব্যক্তি বেআইনি ভাবে চাকরি পেয়েছেন, তাহলে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী অবশ্যই বেতনের টাকা ফেরত দিতে হবে। প্রসঙ্গত, উচ্চ আদালত জানিয়ে দিয়েছিল যে ১২ শতাংশ সুদ সহ বেতনের টাকা ফেরত দিতে হবে।
যোগ্যদের জন্য আশা বাঁচিয়ে রাখলেও শীর্ষ আদালত এদিন রাজ্য সরকারের আইনজীবী ও স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবীদের উদ্দেশে ধারাবাহিক প্রশ্ন তুলেছে?
কেন সুপার নিউমেরারি পোস্ট তৈরি করা হল, কেন প্যানেলের বাইরে অতিরিক্ত নিয়োগ করা হল, স্কুল সার্ভিস কমিশনের সুপারিশের অতিরিক্ত সংখ্যা শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ করল বোর্ড সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রধান বিচারপতি। সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন, “এটা পরিকল্পিত জালিয়াতি। সরকারি চাকরি বর্তমান সময়ে খুবই অপ্রতুল এবং তা সামাজিক নিশ্চয়তার আঙ্গিকে দেখা হয়। নিয়োগ প্রক্রিয়াই যদি কালিমালিপ্ত হয়, তাহলে গোটা ব্যবস্থায় আর অবশিষ্ট কী থাকে? মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলবে। সেটা ফেরাবেন কী করে!”
প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, “ওএমআর শিট এবং স্ক্যান কপিগুলো কি নষ্ট করে ফেলা হয়েছে? এত স্পর্শকাতর একটা বিষয়। তার পরেও ওএমআর শিট স্ক্যান করাতে টেন্ডার ডাকেননি কেন? কেনই বা ডিজিটাল মিরর কপি রাখা হয়নি?” এমনকি আরটিআইয়ের প্রশ্নের জবাবে যে স্কুল সার্ভিস কমিশন মিথ্যে কথা বলেছিল, তাও এদিন প্রধান বিচারপতির প্রশ্নের মুখে স্বীকার করে নেন কমিশনের আইনজীবী।
মঙ্গলবার সকাল থেকে সুপ্রিম কোর্টে তিন দফায় শুনানি হয়। বিকেলে স্বল্প অবসর নেওয়ার আগে প্রধান বিচারপতি বলেন, সওয়াল জবাব থেকে বোঝা যাচ্ছে মোটামুটি ভাবে ৮০০০ জনের নিয়োগ বেআইনি ছিল। আরও স্পষ্ট করে বললে ৮৩২৪ জনের নিয়োগ বেআইনি ভাবে হয়েছে। তাহলে গোটা প্যানেল বাতিল করে দেওয়ার ভিত্তি কী?
সেই ভিতের উপর দাঁড়িয়ে এদিনের রায় ঘোষণা করে প্রধান বিচারপতি। যোগ্য ও অযোগ্যদের আলাদা করে বেছে নেওয়ার পক্ষে আপাতত রায় দেয় শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টে ২০ মে থেকে গরমের ছুটি পড়ছে। আদালত খুলবে ৭ জুলাই। তার পর পরবর্তী শুনানি হবে।