মহম্মদ সেলিম ও মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়।
শেষ আপডেট: 3 April 2025 08:48
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ২০১৬ এসএসসি-র শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের রায়ই বহাল রেখে পুরো প্যানেলটাই বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট। বৃহস্পতিবার সকালে আদালতের রায় সামনে আসতেই হাহাকার নেমে এসেছে চাকরিহারা ২৫ হাজার ৭৫৩ জন এবং তাঁদের পরিবারের মধ্যে (পরিবার ধরে সংখ্যাটা প্রায় ১ লাখ)।
বিষয়টির গুরুত্ব বিচার করে মাদুরাইয়ে দলের পার্টি কংগ্রেসের মধ্যেই ফেসবুক লাইভে এসেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ও ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। ডিওয়াইএফআইয়ের ফেসবুক পেজ থেকে ৯ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের কথোপকথনে সেলিম-মীনাক্ষীরা স্পষ্ট করেছেন, চাকরিহারা ইস্যুকে সামনে রেখে ফের আন্দোলনে ফিরতে চাইছে সিপিএম।
সেলিমের কথায়, "হতাশ হওয়ার জায়গা নেই। চাকরিপ্রার্থীরা বছরের পর বছর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজ্যের দুর্নীতির ফলে যোগ্যদেরও চাকরি গেল। চাকরি প্রার্থী, যাদের চাকরি গেল, সকলকে একসঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে হবে, না হলে আবার যে নিয়োগ হবে সেখানেও দুর্নীতি হবে।"
২০১১ সালের পর থেকে বাংলায় ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু বামেরা। কৌশলে সেই প্রসঙ্গেরও অবতারণা করেছেন সেলিম নিজেই। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের কথায়, "আসলে গরিব মানুষকে পঞ্চায়েত, বিধানসভা, পুরসভা, লোকসভা সব জায়গা থেকে সরিয়ে দিলে যা হওয়ার তাই হয়েছে! তবে এই দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে উৎখাত না করলে দুর্নীতি বন্ধ হবে না!"
অর্থাৎ পরোক্ষে রাজ্যবাসীর উদ্দেশে সেলিম এই বার্তাও দিতে চেয়েছেন যে জনতাকেও সরব হতে হবে। 'আলি বাবা চল্লিশ চোরে'র প্রসঙ্গ টেনে সেলিম বলেন, "দুর্নীতি করল সরকার অথচ যোগ্যরাও চাকরি হারা হলেন। ২৬ হাজারের বাইরেও যারা রয়েছেন, তাদেরও শুনতে হবে, কবে আপনারা নিয়োগ পেয়েছেন। পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হল।" অর্থাৎ এই ইস্যুতে শুধু চাকরিহারারা নয়, অন্য শিক্ষকদের সমর্থনও পেতে চাইছে বামেরা।
বছর ঘুরলেই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। চাকরিহারা ইস্যুকে সামনে রেখে বিজেপি যে জোরদার আন্দোলন সংগঠিত করার চেষ্টা করবে তা বিলকুল জানা আছে সেলিমের। তাই বিজেপি-তৃণমূলকে এক বন্ধনীতে রেখে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, "বিজেপি বলবে, স্বচ্ছ নিয়োগ করব। তাতো নয়। অন্য রাজ্যেও হয়েছে। মধ্যপ্রদেশে সবার প্রথম এই দুর্নীতি হয়েছে। ওখানে আরএসএসের কাছ থেকে তৃণমূল দুর্নীতির পাঠ নিয়েছে। ফলে তৃণমূল আর বিজেপি মুদ্রার ওপিঠ ওপিঠ। দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ ক্ষমতায় থাকলে কখনও স্বচ্ছ নিয়োগ হতে পারে না। তাই মূল বিষয় থেকে নজর ঘোরাতে এরা মন্দির মসজিদের রাজনীতি করছে। রাম মন্দির নিয়ে মানুষকে মাতিয়ে রাখতে চাইছে। এটা মানুষকে বুঝতে হবে।"
দলের বর্ষীয়ান নেতা, আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যও বলেন, "কোর্ট তো আর কোনও নির্বাচিত সরকারকে শাস্তি দিতে পারে না। আশা করব, যারা ভোট দিয়েছেন তারা এই দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে শাস্তি দেবেন।" মীনাক্ষীর মতে, "আমরা শুরু থেকে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছি। এবার মানুষকেও আওয়াজ তুলতে হবে।"
অর্থাৎ এবার সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষকে সংগঠিতভাবে পথে নামার আহ্বান জানাচ্ছেন সিপিএমের বঙ্গ নেতারা। ২ থেকে ৬ এপ্রিল মাদুরাইয়ে দলের পার্টি কংগ্রেস চলবে। সেখান থেকে ফিরে দুর্নীতি ইস্যুতে বাংলায় যে বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত করা হবে তাও স্পষ্ট করেছেন সেলিম।
স্বভাবতই বিভিন্ন মহলে এই কৌতূহলও তৈরি হচ্ছে যে ২৬ হাজার চাকরি বাতিল ইস্যুকে সামনে রেখে বাংলায় নিজেদের ভোট ব্যাঙ্ক কে কি চাঙ্গা করতে পারবে বামেরা? রাজ্যের এক নেতার কথায়, "অবশ্যই আমরা আন্দোলন তীব্রতর করব, বাকিটা জনতার হাতে!"