প্রধান বিচারপতি।
শেষ আপডেট: 19th December 2024 20:51
দ্য ওয়াল ব্যুরো: চাকরি বাতিলের মামলায় যোগ্য অযোগ্য বাছাইয়ের মাপকাঠি হিসেবে যে ওমআরশিটের কথা বলা হচ্ছে, তার সত্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, ওএমআর শিটের ‘মিরর ইমেজ’ও সংরক্ষণ করে রাখেনি কেউ। ফলে যোগ্য এবং অযোগ্য চাকরিপ্রাপকদের বাছাইয়ের ভরসা বলতে মেটা ডেটা!
আর সেই মেটা ডেটা খুঁজে বার করতে না পারলে যোগ্য এবং অযোগ্য তালিকা বাছাই করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে গত ২২ এপ্রিল স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট পুরো প্যানেল বাতিলের যে নির্দেশ দিয়েছিল, তাই বহাল রাখা হতে পারে বলে এদিন জানাল সুপ্রিমকোর্ট।
প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার এজলাসে চলছে চাকরি বাতিল মামলার শুনানি। ওই মামলায় এদিন দিনভর সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালতের পর্যবেক্ষণ, যোগ্য অযোগ্য বাছা না গেলে পুরো প্যানেলটাই বাতিল করা হতে পারে। আদালত জানিয়েছে, মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। তার আগে মেটা ডেটা খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এদিন মামলার শুনানির শুরুতেই সুপারনিউমেরি পোস্ট বা অতিরিক্ত পদের বিষয় নিয়ে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের প্রশ্নের মুখে রাজ্য সরকার। প্রধান বিচারপতির বক্তব্য ছিল, অযোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করে বের না করে সুপারনিউমেরি পোস্ট তৈরি করা হল। এতে এটা নিশ্চিত করা গেল যে কেউই বাদ যাবে না। যদিও এই প্রসঙ্গে রাজ্যের আইনজীবী জানান, তাঁরা কাউকে নিয়োগ করেননি, কলকাতা হাইকোর্টের সম্মতি ছাড়া নিয়োগ সম্ভব নয়। একই সঙ্গে যোগ্য এবং অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের বাছাই করতে রাজ্যের সম্মতি রয়েছে কিনা, সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, অযোগ্য প্রার্থীদের বাছাইয়ে তাঁদের সমর্থন রয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এই বিষয়ে আলাদা করে তথ্য দিয়েছে।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমে যে ওএমআর সিট উদ্ধার করেছিল সিবিআই তা নিয়ে চাকরিহারাদের আইনজীবী প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর দাবি, ওই সমস্ত ওএমআর সিটের বৈদ্যুতিন তথ্যের ৬৫বি এভিডেন্স আইন অনুযায়ী যাচাই করার কোনও শংসাপত্রও নেই। এদিকে এসএসসির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আদালতে বলা হয়েছে, কোনও টেন্ডার ছাড়াই নাইসাকে দায়িত্ব দিয়েছিল এসএসসি। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি বক্তব্য, একটা জিনিস পরিষ্কার, আসল এবং স্ক্যান ওএমআর সিট এক নয়। অনেক কিছু গোপন করা হয়েছে। তিনি স্পষ্ট বলেন, ৬৫বি করলে বোঝা সম্ভব হার্ডডিস্ক থেকে কী ডাউনলোড করা হয়েছে আর কী আপলোড করা হয়েছে। তার সঙ্গে প্রমাণের কোনও সম্পর্ক আছে কি, প্রশ্ন তাঁর।
এসএসসি-র বিরুদ্ধে আবার ওএমআর শিটের 'মিরর ইমেজ' সংরক্ষণ না করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। তারা দায়িত্ব দিয়েছিল নাইসাকে। তারাও না করে স্ক্যানটেককে তথ্য দেয়। তারাও সংরক্ষণ করেনি, শুধু স্ক্যান করে ছেড়েছিল। এই প্রেক্ষিতে এসএসসি-র আইনজীবী বলেন, ধাপে ধাপে পরীক্ষা হয়েছে। তাই সব ওএমআর সিট সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব ছিল না। ২০২১ সাল পর্যন্ত কোনও অনিয়মের অভিযোগ আসেওনি। তবে ২৬ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষা দেওয়ার পর কিছু নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে বলে কার্যত স্বীকার করে নেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টে এও উঠে এসেছে যে, ওএমআর সিটের স্ক্যান কপির সঙ্গে এসএসসির তথ্য আলাদা। এমনকি স্ক্যানিংয়েও অনিয়ম করা হয়েছে। 'মিরর ইমেজ' যেহেতু এসএসসি রাখেনি, শুধু স্ক্যান কপি রয়েছে তাই যোগ্য-অযোগ্য আলাদা করতে হলে মেটা ডেটা খুঁজে পাওয়াটা জরুরি। এখন দেখার, আদৌ সেটা পাওয়া যায় কিনা।