শেষ আপডেট: 16th September 2023 14:12
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে থাকার সময় থেকেই অমিত শাহর পুত্র জয় শাহ-র সঙ্গে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourav Ganguly) যে বনিবনা হচ্ছিল না, তা বাইশ গজে অনেকেরই জানা। জয় শাহ (Jay Shah) তখন বোর্ড সচিব। সৌরভ বোর্ড প্রেসিডেন্ট। আমদাবাদ যে একাধিপত্য কায়েম করতে চাইছে তা আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল এক বছর আগে।
শুধু বাঙালিরা কেন, ভারতের ক্রিকেটমোদী বিপুল সংখ্যক দর্শকের আগ্রহ ছিল বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা তথা আইসিসি-তে মনোয়ন করা হোক সৌরভকে। কিন্তু মহারাজ হয়তো ভাবতেই পারেননি নিজের দেশেই তাঁকে ঘিরে চক্রান্তের জাল বিছনো চলছে। ২০২২ সালের অক্টোবর মাস। বোর্ডে সেই সময়ে একঘরে মহারাজ। আইসিসি চেয়ারম্যানের (ICC Chairman) জন্য তাঁর নাম প্রস্তাব করা দূর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড থেকে তাঁকে উৎখাত করার নীল নকশাও ততক্ষণে তৈরি।
বস্তুত সেই ঘটনার পর থেকেই সৌরভের সঙ্গে অমিত শাহদের দূরত্বটাও ধরা পড়তে থাকে। বিজেপির মুখে তারপর আর শোনা যায়নি তাঁর কথা। কিংবা বাংলায় এসে এরপর আর সৌরভের বাড়িমুখো হওয়ার কথা বলেননি অমিত শাহ।
কিন্তু বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার স্পেনের রাজধানী শহর মাদ্রিদে মমতা-সৌরভের (Mamata-Sourav) যে জুটি দেখা গেল, তা যেন ফের সতেজ করে দিল এক বছর পুরনো সেই স্মৃতি। মাদ্রিদের ছবিকে অনেকেই জুড়তে চাইলেন মহারাজের সেই অপমানের সঙ্গে। তাঁরা মনে করছেন, অমিত শাহ-জয় শাহদের প্রতি এ যেন মধুর প্রতিশোধ সৌরভের।
মহারাজের মনে কী রয়েছে, তা অবশ্য বলা মুশকিল। তবে পর্যবেক্ষকদের অধিকাংশই মনে করছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) স্পেন সফরে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যেন বাংলার পরিপূর্ণ ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর হয়ে সঙ্গত করলেন তাঁকে। দাদা ও দিদির এক অনবদ্য জুটি দেখা গেল আন্দুলেসিয়ায়। বাংলার রাজনীতিতে যার প্রভাবও হয়তো অনিবার্য।
আন্তর্জাতিক ক্রীড়া জগতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এখনও বড় একটি ব্র্যান্ড। ক্রিকেট তথা ক্রীড়া কূটনীতিতে তাঁর কথা এখনও মূল্যবান। বৃহস্পতিবার বাংলায় ফুটবল তথা স্পোর্টসের সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে লা লিগা মঞ্চে সৌরভ যেভাবে আবেগ ঢেলে দিয়েছিলেন, তা স্প্যানিশ কর্তাদের কনফিডেন্স দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। বণিক পরিবারের ছেলে সৌরভ লা লিগা মঞ্চে শুধু বাংলার ছেলেমেয়েদের খেলাধূলা নিয়ে উৎসাহর কথা বলেননি, তিনি বোঝাতে চেয়েছেন বাংলায় স্পোর্টসের বাজারও বহুমূল্য। স্প্যানিশ কর্তাদের কাছে পেশাদারিত্বই বড় কথা। সৌরভ তাঁদের সেই ভাষাতেই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।
এরপর এসেছে শুক্রবারের মধ্যাহ্ন। মাদ্রিদে বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটের (bengal global business summit) মঞ্চে দাঁড়িয়ে সৌরভ ঘোষণা করেছেন, বাংলায় তৃতীয় ইস্পাত কারখানা (sourav ganguly steel plant) গড়ে তুলবেন তিনি। বিনিয়োগ করবেন প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। তাতে ৬ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। সেই সঙ্গে এও জানিয়েছেন, মাত্র-চার পাঁচ মাসের মধ্যেই ওই কারখানা সংক্রান্ত যাবতীয় অনুমতিপত্র তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের থেকে পেয়ে গেছেন। এজন্য মঞ্চে দাঁড়িয়েই মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সৌরভ।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, এও কৌশলগত। স্পেনের বণিকসভা ও উদ্যোগপতিদের সৌরভ বার্তা দিতে চেয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনের উপর তাঁর আস্থা রয়েছে। তাই তিনি নির্দ্বিধায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চলেছেন। শুধু তা নয়, সৌরভ এও বুঝিয়ে দিয়েছেন। বাংলায় ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’ বলে একটা কথা রয়েছে। চার-মাসের মধ্যেই শিল্পের জন্য সবরকম অনুমোদন ও সরকারি সাহায্য পাওয়া যায়। বাংলার প্রতি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে এও কি কম কথা!
বিশ্ব মঞ্চে এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে এত বড় সার্টিফিকেট কে দিয়েছেন বলা মুশকিল। আবার এও ঠিক, মহারাজকেও বাণিজ্যের সুযোগ করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
চুম্বকে দাদাকে শিল্পের জন্য জমি দিলেন দিদি। আর আন্তর্জাতিক মঞ্চে (পড়ুন ঘরোয়া রাজনীতিতেও) দিদির জন্য ব্যাটিং করলেন দাদা। সন্দেহ নেই, এই যুগলবন্দি গেরুয়া শিবিরের অনেকেরই এদিন ভাল লাগেনি। তাঁরা সেই হতাশা চেপেও রাখতে পারেননি। সোশাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই তা ঢেলে দিতে শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন: বাংলায় আড়াই হাজার কোটি বিনিয়োগের ঘোষণা সৌরভের, জিন্দলদের ফেরত দেওয়া জমিতেই কারখানা