গ্রাফিক্স। দ্য ওয়াল।
শেষ আপডেট: 3 May 2025 11:35
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাজনীতিতে অনেক সময়েই ঘটমান বর্তমানের সঙ্গে অতীতের মিল খোঁজার চেষ্টা হয়। সব সময়েই যে হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়, তা নয়। তবু নতুন ঘটনা প্রসঙ্গে পুরনো কিছু কথা চলেই আসে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) আমন্ত্রণে দিঘায় গিয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। তাঁর জগন্নাথ-দর্শনকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক ও জল্পনা তৈরি হয়েছে, তাও যেন উস্কে দিয়েছে অতীতের স্মৃতি। কেউ কেউ এও অনুমান করছেন, দিলীপ হয়তো দলও ছেড়ে দিতে পারেন।
দলেরই সহকর্মী রিঙ্কু মজুমদারকে সদ্য বিয়ে করেছেন দিলীপ। ষাট পেরিয়ে এভাবে সাত পাকে বাঁধা পড়ার সময়েই সোমেন মিত্র, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সঙ্গে তাঁকে তুলনা করা শুরু হয়েছিল। কারণ, সোমেন-প্রিয়ও বেশি বয়সে বিয়ে করেছিলেন। এখন, দিলীপের দল বদলের সম্ভাবনা নিয়ে ঘুড়ি ওড়ানো শুরু হতেই শিখা মিত্রর (Shikha Mitra) কথাও উঠে আসছে রাজনীতির চর্চায়।
কংগ্রেসের প্রবীণ নেতারাই বলেন, শিখা মিত্রর কারণেই দু’বার দল ছেড়েছিলেন সোমেন মিত্র। একবার ২০০৮ সালে। সেবার কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন সোমেন। তার পর আবার ২০১৪ সালে তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে ফিরে আসেন তিনি। এবং এই দু’বারই নারদের ভূমিকায় ছিলেন কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)।
গত বুধবার দিলীপ ঘোষ যখন দিঘার জগন্নাথ মন্দির দর্শন করছেন তখন গর্ভগৃহে তাঁর পিছনেই ছিলেন কুণাল। মোবাইল ক্যামেরা বের করে দিলীপের পটাপট ছবিও তুলে রাখেন কুণাল ঘোষ। সেদিক থেকে সোমেন পর্ব থেকে দিলীপ—কুণাল ঘোষ চরিত্রটি কিন্তু কনস্ট্যান্ট।
২০০৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে সোমেন মিত্রকে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে আনার নেপথ্যে অন্যতম কারিগর ছিলেন কুণাল। সোমেন মিত্রর সঙ্গে বরাবরই তাঁর ভাল সম্পর্ক ছিল। শুক্রবার রাতে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে দ্য ওয়ালকে কুণাল বলেন, “সোমেন মিত্রকে তৃণমূলে আনতে যে মানুষটা আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছিলেন, তিনি হলেন শিখা মিত্র। শিখা দি সোমেন দা-কে না ঠেললে কাজটা সহজ ছিল না। কারণ, সোমেন দার মনে কংগ্রেস ছাড়ার ব্যাপারে ইতস্তত ভাব ছিল। কিন্তু শিখা দি বুঝতে পারছিলেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিরা যেভাবে কোণঠাসা করছেন সোমেনকে, তাতে এই দলে ওঁর আর ভবিষ্যৎ নেই।”
২০০৯ সালে সোমেন মিত্র তৃণমূলের টিকিটে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা আসনে জিতে প্রথম বার সাংসদ হয়েছিলেন। সোমেন ঘনিষ্ঠরা অনেকে বলেন, সোমেন মিত্র অন্যতম প্রবীণ নেতা হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রে তাঁকে মন্ত্রী করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁ নিয়ে সোমেন-শিখার অসন্তোষ ছিল।
কুণাল ঘোষ অবশ্য এদিন বলেন, ‘এটা বাজে কথা। সোমেন মিত্র ২০০৯ সালে মন্ত্রী হতে চাননি। দিদি তাঁকে প্রতিমন্ত্রী করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সোমেন সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে দলের জন্য কাজ করার কথা বলেন। ’
সোমেন মিত্র সাংসদ হওয়ার পর ২০১১ সালে চৌরঙ্গী বিধানসভা আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হন শিখা মিত্র। প্রায় ৫৮ হাজার ভোটে জিতে যান তিনি। তৎকালীন সোমেন ঘনিষ্ঠদের অনেকের মতে, ছোড়দা বা শিখা ভেবেছিলেন রাজ্যে সোমেন পত্নীকে মন্ত্রী করা হবে। কিন্তু শিখাকে মন্ত্রী না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রী পদে বসান চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে।
এর পর থেকেই হতাশা শুরু হয় সোমেন মিত্র ও শিখা মিত্রর। সেই অসম্তোষের আগুনে কৌশলগত ভাবে ঘি দিয়ে যান কুণাল। তার পর ২০১৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর শিয়ালদহর বৌবাজারে একটি রক্তদান শিবিরে এক হন সোমেন-শিখাও- কুণাল। সেই সভা থেকেই ঠারেঠোরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের সমালোচনা শুরু করে দেন তাঁরা। তার ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে কংগ্রেস ছাড়েন সোমেন।
দিলীপ ঘোষ ও সোমেন মিত্রর রাজনৈতিক দল আলাদা। কিন্তু অনেকে মনে করছেন, তাঁদের দুজনের পরিস্থিতিতে বিশেষ ফারাক নেই। কংগ্রেস ছাড়ার সময়ে সোমেনের প্রাসঙ্গিকতা তলানিতে ঠেকেছিল। দিলীপ ঘোষও এখন কোণঠাসা। বিশেষ করে দিঘা পর্বের পর তাঁকে একঘরে করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরএসএস-বিজেপি। তার পরেও দিলীপ ঘোষ কখনও দল ছাড়বেন না বলে মনে করেন তাঁর প্রায় সব অনুগামী।
তবে সে নিতান্তই আস্থার কথা। রাজনীতিতে তো কত অসম্ভব ঘটনাই ঘটে যায়।