শেষ আপডেট: 28 April 2023 05:39
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বধিরতা বাড়ছে। কানের সমস্যা প্রাপ্তবয়স্কদের শুধু নয়, শিশুদের মধ্যেও বেড়ে চলেছে। জন্মগত ত্রুটি, জটিল রোগ, সংক্রমণ জনিত রোগ, শব্দদূষণ থেকে লাইফস্টাইল ডিজিজ—এর ভয়ঙ্কর পরিণতি দেখে রীতিমতো উদ্বেগে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) (WHO) বলছে, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে বিশ্বের প্রায় ৯০ কোটির বেশি মানুষ কানের সমস্যায় ভুগবেন। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রক বোর্ড ও পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে শব্দের মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে (Noise Pollution)। বায়ু দূষণের পাশাপাশি শব্দ দূষণের তাণ্ডবেও নাজেহাল অবস্থা। শব্দের দাপট কমাতে ও সচেতনতার প্রচার করতে এবার কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) সঙ্গে হাত মেলাল সিএমআরআই (CMRI) হাসপাতাল। নতুন মিশন--সাইলেন্স হিলস (Silence Heals)
সিএমআরআই-সিকে বিড়লা হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ওটোলজিস্ট ডা. এনভিকে মোহন বলছেন, এখনকার দিনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল শব্দ দূষণ। পাড়ার ক্লাব হোক, উৎসব অনুষ্ঠান হোক, নাইট পার্টি থেকে জিম, ট্রাফিক--শব্দের দাপট মারাত্মক হয়ে উঠছে। তার উপর ইয়ারফোন, হেডফোনে তারস্বরে গান শুনছেন কমবয়সিরা। শব্দের মাত্রা সহনশীলতার বেড়া টপকে যাচ্ছে। কখনও শব্দের মাত্রা ৮৫ ডেসিবেলের বেশি, আবার কখনও এই শহরেই ১৪০ ডেসিবেল ছাড়িয়ে যাচ্ছে যা বিপজ্জনক। দেখা গেছে, প্রতি ৯ জন তরুণ-তরুণীর মধ্যে অন্তত ১ জন বধিরতা বা কানের সমস্যার শিকার। বাচ্চারাও নিরাপদে নেই।
বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব বা শোভাযাত্রায়, পিকনিকে মাইকের অত্যাচারে জেরবার হন মানুষ। রেহাই নেই বিভিন্ন জীবজন্তু, পশুপাখিদেরও। এক কথায় সমগ্র প্রাণিকুল আক্রান্ত এই শব্দদানবদের হাতে। ডিজে নামের নতুন এক অসুরের হাতে উৎপীড়িত জনগণ। ডাক্তারবাবুরা বলছেন, বেশির ভাগ বাড়িতেই বয়স্ক মানুষ আছেন। আবার আনেক বাড়িতেই রয়েছে শিশুরা। বর্তমানে বিয়েবাড়ি এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে ডিজের ব্যবহার। এর ফলে শহর বা গ্রামের মানুষজনের ভীষণ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সারারাত ধরে চলছে ডিজে বাজিয়ে নাচগান। একজনের আনন্দ অন্য জনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষ তো বটেই, শিশু , বৃদ্ধ এবং অসুস্থদের উপর এর প্রভাব ভয়ঙ্কর।
কলকাতা পুলিশের সহযোগিতায় তাই শব্দের তাণ্ডব কমাতে সচেতনতার প্রচার চালানোর উদ্যোগ নিয়েছেন সিএমআরআই হাসপাতালে ডাক্তারবাবুরা।
যুদ্ধে হাত-পা হারানো জওয়ানরা প্যারাঅলিম্পিকে খেলবেন! প্রশিক্ষণ দেবে ভারতীয় সেনাবাহিনী
জাতীয় পরিবেশ আদালতের যাবতীয় বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাজ্য জুড়ে যথেচ্ছ ভাবে বাজানো হচ্ছে ডিজে, লাউড স্পিকার, মাইক্রোফোন ইত্যাদি। সেই মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার জন্য যতটা পদক্ষেপ করার দরকার ছিল, তাতে যথেষ্ট খামতি রয়েছে বলেই অভিযোগ। ডিজে যাঁরা বাজাচ্ছেন, তাঁরা এখনও বাজার থেকে ডিজে ভাড়া পাচ্ছেন বলেই সেটা করতে পারছেন। এ বার ডিজে বন্ধ বা মাইক্রোফোন-সহ যে কোনও শব্দযন্ত্রে সাউন্ড লিমিটর লাগানো বাধ্যতামূলক করা, সেটা পুলিশ-প্রশাসন ছাড়া অন্য কেউ করতে পারবে না। ডিজের উৎপাত তো বটেই, শব্দবাজি রোধেও সতর্ক থাকার জন্য পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে বলা হয়েছে।
কীভাবে কমবে শব্দ-তাণ্ডব?
ডাক্তারবাবুরা বলছেন, মানুষের কান শব্দের ব্যাপারে যথেষ্ট সংবেদনশীল। তীব্র শব্দ কানের পর্দায় বেশ জোরে ধাক্কা দেয়, যা কানের পর্দাকে নষ্টও করে দিতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে এর ক্ষতিকর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে। তাই তারস্বরে ডিজে বাজানো, মাইক ও লাউডস্পিকার চালানো বন্ধ করতে হবে।
আমরা মোটামুটি সবাই জানি, শব্দের পরিমাপ হল ডেসিবেল। ফিসফিসিয়ে আমরা যে কথা বলি, তাও মোটামুটি ২৫ ডেসিবেল। সেই হিসেবে ৭০- ৭৫ ডেসিবেল অবধি শব্দ কানের পক্ষে সহনীয়। ৯০ ডেসিবেল এর বেশি হলেই কানের মারাত্মক ক্ষতি হতে থাকে। তাই ইয়ারফোন, হেডফোন ব্যবহারের সময়েও সতর্ক থাকতে হবে।
জোরে গাড়ির হর্ন বাজানো বন্ধ করতে হবে।
প্রচণ্ড শব্দ হচ্ছে বা মাইক বাজছে, এমন জায়গায় বেশিক্ষণ থাকবেন না।