শেষ আপডেট: 7 January 2024 14:00
দ্য ওয়াল ব্যুরো: গত দুদিন ধরেই রাজ্য রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে, বলা ভালো তোলপাড় হচ্ছে দুটি নামকে ঘিরে। এক, শাহজাহান শেখ, এবং দুই, শঙ্কর আঢ্য। প্রথমজন পলাতক। তবে ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন দ্বিতীয় জন। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ পুরসভার এই প্রাক্তন চেয়ারম্যানের বাড়িতে শুক্রবার তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সেদিন মধ্যরাতেই শঙ্করকে গ্রেফতার করে ইডি। প্রাক্তন এই পুর চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে এবার তৃণমূলেরই কাউন্সিলর তথা যুবনেতাকে খুনের অভিযোগ উঠল। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, ছেলের খুনের ঘটনায় জড়িত থাকলেও গ্রেফতার হওয়া প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ দাপুটে তৃণমূল নেতা শঙ্করের নামে অভিযোগটুকুও দায়ের করতে পারেননি তাঁরা!
১০ বছর আগের একটি খুনের ঘটনায় এতদিন পর নাম জড়িয়েছে শঙ্করের। ২০১৪ সালের মার্চ মাসে খুন হয়েছিলেন বনগাঁ পুরসভা এলাকার কাউন্সিলর তথা তৃণমূলের যুব নেতা হিমাংশু বৈরাগী। এই ঘটনার নেপথ্যেও তৃণমূলেরই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে বলে দাবি হিমাংশুর বাবা-মায়ের। তাঁরা জানিয়েছেন, শঙ্করের পরিবার আগে কংগ্রেস করত। রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের আগে ২০১০ সালে বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন শঙ্করের আত্মীয়া জ্যোৎস্না আঢ্য।
কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। সেই সময় হিমাংশু ছিলেন ওই এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর। তিনি সহ আরও কয়েকজন তৃণমূল কাউন্সিলর মিলে অনস্থা প্রস্তাব এনে পুরসভার চেয়ারম্যান বোর্ড ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে গুঞ্জন উঠেছিল। সেই আক্রোশেই শঙ্করের নেতৃত্বে বেশ কিছু দুষ্কৃতী খুন করে হিমাংশুকে, এমনটাই অভিযোগ তার পরিবারের।
হিমাংশুর বাবা রাকেশ বৈরাগীর অভিযোগ, ছেলের খুনের মামলায় কোথাও অভিযুক্ত হিসেবে শঙ্করের নাম পাওয়া যাবে না। কারণ, সেই সময় 'প্রভাবশালী' শঙ্কর ও তাঁর পরিবারের লোকজন ক্রমাগত তাঁদের চাপ এবং হুমকি দিতে থাকে যাতে শঙ্করের নামে অভিযোগই দায়ের না করা হয়।
এমনকী, মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয় পুরো বৈরাগী পরিবারকে। রাকেশের ৭৫ বছরের বৃদ্ধা মা পর্যন্ত সেই ষড়যন্ত্র থেকে রেহাই পাননি, নাতিকে হারিয়ে উল্টে জেল খাটতে হয় তাঁকেই। জেলে ছিলেন রাকেশও। পরে জামিনে ছাড়া পেলেও শঙ্করের নামে আর এফআইআর দায়ের করা হয়নি। অভিযোগ, তাঁদের পরিবারের উপর এতটাই চাপ দেওয়া হচ্ছিল যে উকিল পাচ্ছিলেন না তিনি।
শেষ পর্যন্ত এগিয়ে আসেন সিপিএম নেতা আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। ১০ বছর কেটে গেছে, হিমাংশু হত্যা মামলা এখন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে বিচারাধীন। কিন্তু মাস্টারমাইন্ড শঙ্করের সাজা হওয়া তো দূর, উল্টে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে সে। সেই মামলায় না হলেও রেশন দুর্নীতির তদন্তে শঙ্কর গ্রেফতার হওয়ায় খুশির হাওয়া বৈরাগী পরিবারে। এখন সুবিচারের আশায় দিন গুনছেন তাঁরা।