শেষ আপডেট: 29th January 2021 02:52
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বম্বে হাইকোর্টের দুটি সাম্প্রতিক রায় নিয়ে বিতর্ক চলছে দেশজুড়ে। সাধারণ মানুষ তো বটেই, এমনকি আইনজ্ঞ মহলও প্রশ্ন তুলেছে ওই দুই রায় দেওয়া বিচারপতির দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে। প্রথম ঘটনায় তিনি বলছেন, পোশাক না সরিয়ে নাবালক বা নাবালিকার শরীরে অন্যায় স্পর্শ করলে তা যৌন নির্যাতন নয়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে তাঁর রায়, প্যান্টের চেন খুলে যৌনাঙ্গ প্রদর্শন যৌন নির্যাতন নয়। প্রথম রায়টির উপর ইতিমধ্যেই স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এবার হাইকোর্টের এক প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি প্রদীপ নন্দরাজক জানিয়ে দিলেন, দুটি ক্ষেত্রেই বিষয়টি আপত্তিজনক এবং অযৌক্তিক। আরও এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির অভয় থিপসেরও মত, এই রায় আইনি ক্ষেত্রে ভুল উদাহরণ তৈরি করতে পারে। ১৯ জানুয়ারি বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চে পকসো আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলার রায়ে বিচারপতি পুষ্প গনেদিওয়ালা জানান, পকসো আইন মতে যৌন নির্যাতন হওয়ার জন্য অভিযুক্ত ও আক্রান্তের ত্বকের সঙ্গে ত্বকের স্পর্শ ঘটতে হবে। জামা খুলে বা জামা সরিয়ে আপত্তিজনক কাজ করলে তবেই তা যৌন নির্যাতন বলে গণ্য হবে। পোশাকের ওপর দিয়ে স্পর্শ করলে তা যৌন নিগ্রহ নয়। ১২ বছরের একটি মেয়েকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগে চলছিল মামলা। অভিযোগ, মেয়েটির বুকে অন্যায় স্পর্শ করেছিল ৩৯ বছরের এই যুবক। সেখানেই বিচারপতি পুষ্প গনেদিওয়ালা এই রায় দেন, যেহেতু অভিযুক্ত মেয়েটির পোশাক খোলেনি বা সরায়নি, তাই এটি যৌন নির্যাতন নয়। এর দিন কয়েক পরেই ফের আর একটি মামলার শুনানি করছিলেন ওই বিচারপতিই। সেখানেও তিনি রায় দেন, পাঁচ বছরের শিশুর হাত ধরা এবং নিজের প্যান্টের চেন খোলা যৌন নির্যাতনের সমকক্ষ অপরাধ নয় পকসো আইনে। এই রায়ের ফলে অভিযুক্ত ব্যক্তি, ৫০ বছরের লিবনুস কুজুরের পাঁচ বছরের কারাবাসের সাজা কমে হয়ে যায় পাঁচ মাস। সেই পাঁচ মাসের সাজা খাটা হয়ে গেছিল বলে ছাড়াও পেয়ে যায় লোকটি। এই দুটি রায়ের বিরোধিতা করে হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি প্রদীপ নন্দরাজক বলেন, "এই ধরনের মামলায় আদালতের দায়িত্ব হল, অভিযুক্তের উদ্দেশ্যটি কী ছিল তা চিহ্নিত করা। যে কোনও অন্যায় স্পর্শ বা আচরণ যদি যৌন হেনস্থার উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়, তবে তা পকসোর আওতায় অপরাধ বলেই বিবেচিত হয়। এখানে ত্বকের সঙ্গে স্পর্শ হয়েছে কিনা, প্যান্টের জিপ খোলার পরে কি হয়েছে-- এসব ধর্তব্যের মধ্যেই আসবে না যদি অভিযুক্তের উদ্দেশ্য হয় যৌন নিগ্রহ।" তিনি আরও বলেন, "আরও সমস্যার বিষয় হল, এই রায় দিয়েছেন একজন মহিলা বিচারপতি। আমরা আইনি ক্ষেত্রে মহিলা বিচারক, অফিসার, কর্মী নিয়োগ রি এই ভেবে, যে মহিলাদের বা শিশুদের উপর হওয়া এই ধরনের অপরাধগুলি আরও সঠিক এবং সংবেদী বিচার পাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এখানে তেমনটা ঘটেনি।" বম্বে হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির অভয় থিপসেও এই দুই রায়কে 'ভুল' বলেই ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর কথায়, "যদি দু'ক্ষেত্রেই 'যৌন নির্যাতন না হওয়ার' সিদ্ধান্তে এসে উপনীত হন বিচারপতি, তবে তার পেছনে অবশ্যই যথাযথ ও অখণ্ড যুক্তি থাকা প্রয়োজন। নয়তো ভবিষ্যতের প্রতিটি মামলায় এই রায় কুপ্রভাব ফেলবে। যদি এমন হয়, অভিযুক্ত হাতে গ্লাভস পরে কুকর্ম করেছে, সেক্ষেত্রে তো সে যুক্তি দেবে, ত্বকের সঙ্গে সংস্পর্শ হয়নি বলে এটি যৌন নির্যাতন নয়।" স্পেশ্যাল প্রসিকিউটর উজ্জ্বল নিকমের মত, "মূলত নাবালিকাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য পকসো আইন আনা হয়। ফলে এই আইনে যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে অভিযুক্তর উদ্দেশ্য ভাল করে খতিয়ে দেখাই মূল বিষয় হওয়া উচিত। অপরাধ কোন পদ্ধতিতে হয়েছে তা নিয়ে কাটাছেঁড়া অযৌক্তিক। এসব করলে আইনের নজরকে বিভ্রান্ত করা হবে।" নারী অধিকার নিয়ে কাজ করেন, আইনজীবী ফ্ল্যাভিয়া অ্যাগনেস। তাঁর মতেও এইরায় দু'টি পকসো আইনের অনুকূলে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, "পকসো আইন আরও অনেক সংবেদনশীল ভাবে দেখতে হবে। পকসো কিন্তু বলেছে, শরীরের মধ্যে অঙ্গ প্রবেশ না করালেও সেটি ধর্ষণ। এক্ষেত্রেও যে ৩৯ বছরের লোকটি ১২ বছরের মেয়ের বুকে হাত দিয়েছিল, জামার ওপর দিয়ে দিলেও তা নিঃসন্দেহে যৌন নিগ্রহের উদ্দেশ্যেই দিয়েছিল। আদালত কী করে তার অপরাধ লঘু করে দেখতে পারে!"