শেষ আপডেট: 15th July 2023 13:44
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ১১ মাসের ছেলের ১০৩ ডিগ্রি জ্বর ওটার পরে দিশাহারা হয়ে পড়েন পরিমণী। তিনি আশঙ্কা করেছিলেন, ডেঙ্গু কিংবা কোভিড–জাতীয় কিছু কি না। তবে যাবতীয় পরীক্ষা–নিরীক্ষার পরে জানা যায় সাধারণ মরশুমি জ্বর। কিন্তু জ্বর আর ছাড়তেই চায় না। সেই সঙ্গে কাশি, বুকে কফ জমে নাজেহাল অবস্থা একরত্তির। ডাক্তারবাবুরা বলছেন, সিজনার ফিভার বা মরশুমি জ্বর (Seasonal Fevers) এখন ঘরে ঘরে। সেই সঙ্গেই সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা। পরিমণীর ছেলের জ্বর কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
ডাক্তাররা বলছেন, এখন শিশুদের দু’রকমের জ্বর হচ্ছে। কারও কারও একশর কাছাকাছি জ্বর (Seasonal Fevers) থাকছে। সঙ্গে সর্দি বা সামান্য কাশি। আর কারও ১০২-১০৩ জ্বর হচ্ছে। কাশির দমক বেশি। এ ছাড়া কনজাংটিভাইটিসের সংক্রমণ শুরু হয়েছে কলকাতায়। চোখ টকটকে লাল হয়ে যাচ্ছে। যে সব ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে, তাঁদের স্কুল থেকে এই ভাইরাল সংক্রমণ হচ্ছে। সুইমিং পুল থাকলে সেখান থেকে শিশুদের মধ্যে দ্রুত সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।
অনেক ডাক্তার বলছেন, জ্বর ১০০ বা তার বেশি না হলে প্যারাসিটামল খাবারও দরকার নেই। একশর বেশি হলে তবেই প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক দরকার কিনা তা রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করছে। কোনও ওষুধই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া উচিত নয়। তবে হ্যাঁ চিকিৎসকরা বলছেন, ফ্লুর সংক্রমণ যে হারে হচ্ছে তাতে এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যেই শিশু এবং বড়দের ফ্লু ভ্যাকসিন নিয়ে নেওয়া ভাল।
বারাসাত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (কমিউনিটি মেডিসিন) ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ অনির্বাণ দলুই বলছেন, আবহাওয়া ঘন ঘন বদলাচ্ছে। এই ভ্যাপসা গরম, আবার পরক্ষণেই বৃষ্টি। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ যথেষ্টই বেশি। ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার এত বাড়বাড়ন্তের কারণ হল খামখেয়ালি আবহাওয়া (weather change sickness)। কখনও ঠান্ডা, আবার কখনও গরম, এত দ্রুত আবহাওয়া বদলাচ্ছে যে রোগজীবাণুরাও আরও বেশি সক্রিয় হয়ে উঠছে। একটা সময় ঋতু বদলের সময়েই বেশি সর্দি-জ্বর হত। এখন আবহাওয়ার কোনও ঠিকঠিকানাই নেই। আজ গরম, তো কাল ঠান্ডা, পরশু বৃষ্টি। এই বদলটা (Change of Weather) এত ঘন ঘন হচ্ছে, জীবাণুরাও পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে। দ্রুত বংশবিস্তার করছে। আরও বেশি সংক্রামক ও ছোঁয়াচে হয়ে উঠছে।
প্রচণ্ড গরম, তাপপ্রবাহে হিট স্ট্রোক হয় কেন, ঠিক কতটা তাপমাত্রা সইতে পারে মানব শরীর
এই পরিবর্তিত আবহাওয়ার কারণেই নানা রোগ বাড়ছে। ডাক্তারবাবু বলছেন, সর্দি-কাশির অ্যাডেনোভাইরাস, রাইনোভাইরাস করোনার চেয়েও বেশি ছোঁয়াচে হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস তো রয়েছেই। রেসপিরেটারি সিনসিটিয়াল ভাইরাসও (RSV) জ্বর, গলা ব্যথার কারণ। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের অনেকগুলো ধরন আছে—টাইপ এ, টাইপ বি, এইচ১এন১ (নন-সোয়াইন ফ্লু)। শহরে এখন এই এইচ১এন১ ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হচ্ছে। গা গরম, ধুম জ্বর, হাত-পায়ে ব্যথা, দুর্বলতা, অনেক সময় শ্বাসকষ্টও ভোগাচ্ছে। ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের দিকেই বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। টানা জ্বর, বা হাল্কা শ্বাসের সমস্যা হলে হেলাফেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই ভাল।
কী কী লক্ষণ দেখলে সতর্ক হতে হবে
জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা তিন দিনের বেশি থাকলেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
সর্দি-কাশি, ক্রমাগত নাক দিয়ে জল পড়া, গলা শুকিয়ে যাওয়া, গলায় ব্যথা হলে দেরি করা ঠিক হবে না।
দ্রুত শ্বাস নেওয়া, শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় বুক ধড়ফড় করলে ডাক্তার দেখিয়ে নিতে হবে।