শেষ আপডেট: 16th June 2023 14:50
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কালো মেঘের বুক চিরে যখন বিদ্যুতের (electricity) আলপনা ফুটে ওঠে আকাশে তখন ঠিক কেমন লাগে? ঝোড়ো হাওয়ায় বিদ্যুতের কড়কড়ানি বুকে কাঁপন ধরায় ঠিকই, কিন্তু ঘণীভূত সেই মেঘ আর আলোর ঝলকানি বিজ্ঞানের অভিনব এক উদ্ভাবনের উপায়ও হতে পারে।
অবাক হচ্ছেন তো! এটাই সত্যি। বৈজ্ঞানিক উপায় পরীক্ষিত সত্যি। বাতাসের আর্দ্রতা থেকে বিদ্যুৎ তৈরির চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্টের গবেষকেরা এমন একটি ডিভাইস তৈরি করেছেন, যা বাতাসের আর্দ্রতা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ (electricity) তৈরি করতে সক্ষম।
‘অ্যাডভান্সড মেটিরিয়াল’ বিজ্ঞানপত্রিকায় এই ব্যাপারে গবষণাপত্র ছাপা হয়েছে। বিজ্ঞানী জিয়াওমেং লিউ ও জুন মেও বলেছেন, বজ্রপাত থেকে কীভাবে বিদ্যুৎ ধরে রাখা যায় সে কৌশল এখনও বের হয়নি। তবে ঘণীভূত মেঘ যাতে বিন্দু বিন্দু জলকণা রয়েছে তার থেকে বিদ্যুৎ শক্তি তৈরির কৌশল আবিষ্কার হয়েছে। ঘণীভূত মেঘের প্রতিটি জলকণাই চার্জড পার্টিকল, এদের থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারবে ওই ডিভাইস। গবেষণাগারে কৃত্রিম মেঘ তৈরি করে বিদ্যুৎ তৈরির চেষ্টা চলছে। সে কাজে অনেকটাই সাফল্য এসেছে। এই গবেষণা সফল হলে বিদ্যুতের ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
এত ঘন ঘন বাজ পড়ছে কেন? বজ্রপাতের কারণ কী, কীভাবে সতর্ক থাকবেন
বিদ্যুৎ-সহ অন্যান্য শক্তি উৎপাদনের জন্য প্রচুর পরিমাণে কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো হয় বিশ্বজুড়ে। তার ফলে, কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও সালফার ডাই-অক্সাইডের মতো বিভিন্ন ধরনের গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন হয়, যা প্রতি মুহূর্তে বিষিয়ে দিচ্ছে প্রকৃতি, পরিবেশকে। দূষিত হচ্ছে বায়ুমণ্ডলও।
রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘ইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)’-এর অগস্টের রিপোর্ট জানাচ্ছে, বিশ্বে ফিবছর যে পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন হয়, তার দুই-তৃতীয়াংশই তৈরি হয় জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে বিদ্যুৎ-সহ নানা ধরনের শক্তি উৎপাদন করতে গিয়ে। এই সব গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন যেমন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে উত্তরোত্তর বিষিয়ে তুলছে, তেমনই তা প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিশ্ব উষ্ণায়নেরও। যার ফলেই জলবায়ুর বদল এবং বর্তমান আবহাওয়ার পরিস্থিতির উপরেও যা প্রভাব ফেলেছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্প কৌশল আবিষ্কারে তাই অনেকদিন থেকেই সচেষ্ট বিজ্ঞানীরা। কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাস না পুড়িয়েও যাতে অন্য ভাবে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ ও নানা ধরনের শক্তি উৎপাদন করা যায়, সে জন্য গত এক-দু’দশক ধরেই নানা প্রচেষ্টা চলছে বিশ্বজুড়ে। তারই একটি গবেষণা করছেন ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটির গবেষকরা।ইয়াও এবং তাঁর সহকর্মীরা ‘ইলেকট্রিসিটি হার্ভেস্টার’ নামের একটি ডিভাইস ডিজাইন করেছেন, যা ন্যানোপোরস বা ক্ষুদ্র ছিদ্রযুক্ত একটি পাতলা পর্দার মতো যন্ত্র। এই ন্যানোপোরগুলোর ব্যাস ১০০ ন্যানোমিটারের চেয়ে কম এবং এই ছিদ্রগুলোর মাধ্যমে জলের অণু উপর থেকে নীচের দিকে প্রবাহিত করা যায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রাথমিক পরীক্ষায় দেখা গেছে ডিভাইসটি দিয়ে ১৪০ ভোল্টের বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ১০০টি এলইডি বাল্ব জ্বালানো সম্ভব।