শেষ আপডেট: 17th August 2023 13:01
দ্য ওয়াল ব্যুরো: টু বি, অর নট টু বি? সে আছে, না নেই? বিজ্ঞানের দুনিয়ায় মস্ত এক ধন্দের অবসান হতে চলেছে। রাক্ষস (Demon Particles) খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা!
ঈশ্বরের দেখা কালেভদ্রে মেলে। রাক্ষসও তাই। আসে আর মিলিয়ে যায় তারা। ব্রহ্মাণ্ডের কোটি কোটি বস্তু, কণা, গ্রহ-নক্ষত্রের পরিবার খুঁজে কণায়-কণায় সংঘর্ষ বাঁধিয়ে অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন বিজ্ঞানীরা। না, সে আছে। ঈশ্বর যখন আছে, তখন রাক্ষসও আছে। ঈশ্বর কণার বিপরীত রাক্ষুসে কণার (Demon Particles) খোঁজ পেলেন ইলিনয়েস ইউনিভার্সিটির (University of Illinois ) বিজ্ঞানীরা। ৭০ বছর লেগে গেল এই কণার খোঁজ পেতে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সুপরিবাহীরা যদি তাদের ধর্ম ধরে রাখতে চায়, তাহলে তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নীচে থাকতে হবে। কিন্তু রাক্ষুসে কণারা (Demon Particles) যেহেতু ভরশূন্য, স্বচ্ছ তাই যে কোনও তাপমাত্রাতে বা তাপমাত্রার বদলেও এরা নিজেদের ধর্ম বজায় রাখতে পারে।
কিন্তু কী এই ‘রাক্ষস কণা (Demon Particles) ’? পদার্থবিদ ডেভিড পাইন্স ৭০ বছর আগেই এই কণার উপস্থিতির কথা বলেছিলেন। এই কণা একধরনের অতিপরিবাহী কণা। অর্থাৎ তার মধ্যে একবার বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে রোধজনিত তাপক্ষয় না থাকায় তা নতুন উৎস ছাড়াই প্রবাহিত হতে থাকবে। এরা হল সুপার কন্ডাক্টর যারা ডিজিটাল দুনিয়ার প্রযুক্তিতে বিপ্লব ঘটাতে পারে। রাক্ষুসে কণারা প্রযুক্তির ভোলই বদলে দিতে পারে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।
বিশ্বরহস্য ব্যাখ্যায় বিজ্ঞানীদের ঝুলিতে যে মূল সম্বল বিজ্ঞানের পরিভাষায় যে থিয়োরির নাম ‘স্ট্যান্ডার্ড মডেল’ তা দাঁড়িয়ে হিগস-বোসন বা ঈশ্বর কণার ভিতের উপর। কণাটি না-থাকলে বিজ্ঞানীদের সাধের ওই থিয়োরি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে তাসের ঘরের মতো। ওই তত্ত্বে বলা হয়েছে যতগুলি কণা আছে, তাদের মধ্যে আচমকাই একদিন দেখা মিলেছিল ওই ‘ঈশ্বর কণার’। এরা আসে আবার মিলিয়ে যায়। ধরাছোঁয়ার বাইরে। অথচ, এই ঈশ্বর কণারাই অন্য কণাদের ভর জোগায়। সব কণার সেরা হল ঈশ্বর কণা বা ‘গড পার্টিকল’ (God Particles)। বিজ্ঞানের ভাষায় নাম ‘হিগস-বোসন’ কণা।
হিগস-বোসন আছে, না নেই? কেন কণাটি ঘিরে এত কৌতূহল? এ প্রশ্নের উত্তর সোজা। পদার্থের উপাদান ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র নানা রকম কণা। এদের অধিকাংশ সামান্য হলেও ভারী। মানে, তাদের ভর আছে। অন্য কিছু কণার ভর নেই। কেন অধিকাংশ কণার ভর আছে? ১৩৭০ কোটি বছর আগে ব্রহ্মাণ্ডের জন্মের অব্যবহিত পরে জন্মেছিল যে-সব কণা, তাদের কারওরই তো ভর ছিল না। তা হলে কেউ কেউ সে রকম ভরহীন থেকে গেলেও বাকিরা কেন হল ভারী?
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ভাবনার সূত্র ধরে এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন হিগস। দাবি করেছেন এমন এক কণার অস্তিত্বের, যা কিছু কিছু কণাকে জুগিয়েছে ভর। অন্য কণাদের ভর জোগানোর ক্ষমতাসম্পন্ন ওই কণাটিই হিগস-বোসন।
ঈশ্বর কণার অস্তিত্বের কথা তো জানা গেল, কিন্তু তার দর্শন পাওয়া সহজ নয়। তার দেখা মিলতে পারে যে যন্ত্রে, তা বানাতে খরচ হাজার কোটি ডলার বা ইউরো। অনেক দূর এগিয়েও হাল ছেড়ে দিয়েছিল আমেরিকা। কিন্তু দমেনি ইউরোপ। জেনিভা শহরের অদূরে সার্ন গবেষণাগারে তৈরি হয়েছিল লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার (এলএইচসি)। সেখানেই মাটির নীচে অন্ধকার সুড়ঙ্গে বছরের পর বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে আবির্ভূত হয়েছিল ঈশ্বর কণা।
কণায় কণায় সংঘর্ষ ঘটিয়ে, চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় লক্ষ কোটি ভগ্নাংশের মধ্যে বিজ্ঞানীরা খুঁজেছিলেন তাঁদের ঈশ্বরকে। কিন্তু নতুন কণারা জন্মের পর সেকেন্ডের কোটি কোটি ভাগের মধ্যে উধাও হয়ে যায়। কিছুতেই ধরা দেয় না। আলোর বেগে ধাবমান বিপরীতমুখী প্রোটন কণাদের মধ্যে বার বার সংঘর্ষ বাঁধিয়ে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। মুখোমুখি লড়াইয়ে ধ্বংস হয়েছে তারা। অকল্পনীয় পরিমাণ ‘এনার্জি’ তৈরি হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড জন্মের এক সেকেন্ডের দশ লক্ষ ভাগের এক ভাগ সময়ের পরের অবস্থা। আর সেই সংঘর্ষের বিপুল এনার্জি থেকে আলবার্ট আইনস্টাইন-আবিষ্কৃত নিয়ম অনুযায়ী তৈরি হয়েছে কোটি কোটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা। যারা আবার জন্মের পর সেকেন্ডের কোটি কোটি ভাগের কম সময়ের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে জন্ম দিয়েছে আরও নতুন কণার। এভাবেই অন্ধকার সুড়ঙ্গে ক্ষণিকের ব্যবধানে জন্ম নিয়েছিল ঈশ্বর কণারা। যে কণার ভর ১৩৩টি প্রোটনের মোট ভরের সমান।
সার্নের কণা পদার্থবিদরা বলেন, ঈশ্বরের অনেক রূপ। ব্রহ্মাণ্ডের শক্তিস্বরূপ সেইসব রূপের দেখা মেলা যায় না। ঈশ্বর কণাও ঠিক তেমনই। সৃষ্টি ও পৃথিবীর সবরকম বস্তু, জীবের ভর-রহস্যের সমাধান করতে পারে এই কণারা। সৃষ্টির উৎসই তারা। এর আগেও দশ বা তিরিশ গিগা ইলেকট্রন ভরের ‘ঈশ্বর কণা’ দেখা গিয়েছিল এলএইচসিতে। কিন্তু তা দেখা গিয়েছিল মাত্র এক মূহুর্তের জন্যই। তার পরেই মিলিয়ে গিয়েছিল।