শেষ আপডেট: 9th February 2024 16:13
দ্য ওয়াল ব্যুরো, উত্তর ২৪ পরগনা: বেপাত্তা শাহজাহান। 'মুকুটহীন বাদশার' অনুপস্থিতিতে জ্বলছে সন্দেশখালি। জেলিয়াখালিতে শিবু হাজরার পোল্ট্রি ফার্ম ও বাগানবাড়ি আগুন ধরিয়ে দিল গ্রামবাসীরা। আগের দিনও তৃণমূল নেতা শিবুর সন্দেশখালির পোল্ট্রি ফার্মে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল গ্রামবাসীরা।
শুক্রবার সকাল হতেই বিদ্রোহী গ্রামবাসীরা ক্ষোভ উগরে দেয় জেলিয়াখালির পোল্ট্রি ফার্মে। লাঠি সোটা নিয়ে গ্রামের মহিলারাই শাহজাহান অনুগামী শিবু পোল্ট্রি ফার্ম হামলা চালান। তছনছ করে দেন দেন ফার্ম। দুপুর হতেই শিবুর বাগান বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। সমস্ত আসবাব আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
সারাদিন তেতে রয়েছে সন্দেশখালি। দফা দফা বিক্ষোভ আন্দোলন চলছে। বেলার দিকে পুলিশ গেলে গ্রামবাসীদের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে শুরু করেছে পুলিশ। শিবুর তিনতলা বাগান বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার পরে তার দোকানেও হামলা চালায় বিক্ষুব্ধরা। হাতুড়ি দিয়ে দোকানের দরজা ভাঙার চেষ্টা করে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তাঁদের উপর এদিনও চড়াও হয়েছে শিবু হাজরার দলবল। মহিলাদের শ্লীলতাহানী করেছে। তাদের মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। পুলিশের সামনে শিবু ওরফে শিবপ্রসাদের দলবল হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাঁদের উপর হামলা চালিয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, জেলিয়াখালিতে সাধারণ মানুষের জমি জোর করে দখল করেছিল এই শিবু। সেখানে পোল্ট্রি ফার্ম করেছিল। সামন্ত প্রভুদের মতোই শিবু ও উত্তম সর্দারদের ভয়ে নিজেদের জমিতেই পোল্ট্রি ফার্মে বেগার খাটতে হত তাঁদের। মজুরি চাইলেই জুটতো মার। গ্রামের বেশ কয়েকজন মহিলার অভিযোগ, শিবু ও উত্তম তাঁদের জনখাটা স্বামীদের মেরে কোমর ভেঙে দিয়েছিল।
জেলিয়াখালিতে শান্তির খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে যায়। কিন্তু দীর্ঘদিনের চলা তাদের উপর শাহজাহান অনুগামীদের দমন-নিপীড়নের জের এখন আছড়ে পড়েছে। গ্রামবাসীদের একটাই দাবি সন্দেহখালিতে চলা শাহজাহানদের 'সামন্তপ্রথার' বন্ধ হোক। পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করুক।
তৃতীয় দিনে সকাল থেকে থমথমে ছিল বসিরহাটের সন্দেশখালি। এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো ছিল। এখনও পর্যন্ত থানা চত্বরে ১৪৪ ধারা জারি করা রয়েছে। বৃহস্পতিবার অনেক রাত পর্যন্ত থানা ঘেরাও করে রেখেছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে পুলিশ আধিকারিকদের বোঝানোয় আন্দোলন স্থিত হয়।
কিন্তু বেলা বাড়তেই ফের একে একে আদিবাসীরা জড়ো হন। শয়ে শয়ে মহিলারা লাঠি-ঝাঁটা হাতে নিয়ে সন্দেশখালি থানার সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। সন্দেশখালি ব্লক সভাপতি শিবপ্রসাদ হাজরা ও জেলা পরিষদের সদস্য উত্তম সরদারকেল কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না তাঁর জবাব চাইছেন তাঁরা।
এই দুই শাসকদলের নেতাকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত আন্দোলন তাঁরা চালিয়ে যাবেন বলে দাবি বিক্ষোভকারীদের। অন্যদিকে সন্দেশখালির সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দার সহ ১১৭ জনের বিরুদ্ধে সন্দেশখালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন শিবপ্রসাদ হাজরা ওরফে শিবু হাজরা।
শিবুর অভিযোগ, তাকে খুনের চেষ্টা করা হচ্ছে। জনজাতিদের উস্কে দিয়ে শান্ত সন্দেশখালিকে অশান্ত করতে চক্রান্ত করে চলেছে বিরোধীরা। অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ উভয় পক্ষের মোট আটজনকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করেছে।