শেষ আপডেট: 11th August 2024 12:13
দ্য ওয়াল ব্যুরো: হাসপাতালের ভিতরে, ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি করার পরে, সামান্য একটু বিশ্রাম নিতে গিয়ে নৃশংস ভাবে খুন হতে হয়েছে তরুণী চিকিৎসককে। খুনের আগে শিকার হতে হয়েছে ভয়াবহ ধর্ষণের। ক্ষোভে ফুঁসছেন হাসপাতালের বন্ধু, সহপাঠী, জুনিয়ার, সিনিয়র, সহ-চিকিৎসক, পড়ুয়ারা, ফুঁসছে গোটা বাংলা। কেউ যেন মেনে নিতে পারছেন না, শহরের বুকে, নিজের চেনা পরিসরে, আরজি কর-এর মতো তাবড় মেডিক্যাল কলেজের অন্দরে এমন ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।
এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ফাঁসির দাবি করেছেন তিনি। এর পরে শনিবারই নবান্নে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ফিরহাদ হাকিমরা। উপস্থিত ছিলেন, মুখ্যসচিব, রাজ্যপুলিশের ডিজি সহ শীর্ষ কর্তারা। বৈঠকের পরে জানানো হয়েছে রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে বিশেষ পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এবার থেকে প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে মহিলাদের জন্য নিরাপদ রেস্টরুম থাকবে।
আরজি করের ঘটনার পরে সামগ্রিক ভাবেই আরজি করের এবং রাজ্যের অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজেরও নিরাপত্তা আরও বেশি জোরদার করতে তৎপর হয়েছে রাজ্য সরকার। এক দিনের মধ্যে, বেলগাছিয়া ট্রাম ডিপোতে আরজিকর হাসপাতালের অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ের জন্য জমি দেওয়ার বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি শহরের হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা কীভাবে আরও বাড়ানো যায় সেই নিয়েও আলোচনা হয়েছে। জানা গেছে, হাসপাতালের প্রতিটি ঢোকা-বেরোনোর গেটে সিসিটিভি বাড়ানো হবে বলে। একই সঙ্গে, হাসপাতালের প্রতিটি গেটে নিরাপত্তা কর্মীও বাড়ানো হবে। শুধু তাই নয়, হাসপাতালের প্রায় জায়গায় প্রয়োজনে সিসিটিভি বাড়ানো হবে বলে খবর। মূলত জুনিয়র ডাক্তারদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেই পদক্ষেপ করবে সরকার।
অন্যদিকে, এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজত হয়েছে। প্রথম থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল যে, একজন সিভিক ভলেন্টিয়ার হয়ে সে কীভাবে হাসপাতালে অবাধ যাতায়াত করত। পড়ুয়ারা নিজেরা দাবি করেছে, সেমিনার হল থেকে চারতলা, সর্বত্র যেত সঞ্জয়। কিন্তু তার পোস্টিং আরজিকরেই ছিল না। অভিষেক গুপ্তা (ডিসি নর্থ) সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, অভিযুক্তের পোস্টিং আরজি কর বা এই এলাকায় ছিলই না। হাসপাতালে তার পরিচিত কেউ ভর্তি হয়তো ছিল।
ঘটনার দিন সেমিনার হলে বসে অন্যান্য চিকিৎসক-পড়ুয়াদের সঙ্গে অলিম্পিক্সের নীরজ চোপড়ার ম্যাচ দেখছিলেন ওই তরুণী। তারপর রাতের খাওয়া সেরে সবাই চলে যায় এবং তিনি সেখানেই শুয়ে পড়েন। সেমিনার হলে ঢোকা-বেরনোর দুটো রাস্তা আছে। সামনের দিকের রাস্তার করিডরের সামনেই সঞ্জয়কে দেখে গেছিল সিসিটিভি ফুটেজে। সেমিনার হলে ঢোকার অন্তত ৪৫ মিনিট পর তাকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। অন্যদিকে, তরুণীর শরীরের একাধিক জায়গা যেমন বুক, পেট, যৌনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। পাওয়া গেছে চাপা রক্তের দাগও।
সূত্র মারফত জানা গেছে, জেরার সময় নিজের দোষ স্বীকার করেছে সঞ্জয়। যদিও ঘটনার জন্য সে ক্ষমাপ্রার্থী নয়। বরং নিজেই নিজের ফাঁসি চেয়ে নিয়েছে সে। গ্রেফতারির পর থেকে এখনও পর্যন্ত তার চোখে-মুখে অনুশোচনার লেশমাত্র ধরা পড়েনি। তাই অনুমান করা হচ্ছে, একেবারে নিজে সজ্ঞানে এই নৃশংস কাজ করেছে অভিযুক্ত। এও জানা গেছে, ঘটনার দিন মদ্যপ অবস্থায় ছিল সঞ্জয়। গভীর রাতে ঘুম থেকে টেনে তুলে ওই তরুণীর ওপর ভয়ানক অত্যাচার করেছে সে।