প্রতীকী ছবি।
শেষ আপডেট: 2nd October 2024 00:39
প্রীতি সাহা
আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, জেলবন্দি সন্দীপ ঘোষকে 'রাক্ষসে'র সঙ্গে তুলনা করলেন নৃশংসভাবে মৃত্যুর শিকার হওয়া ডাক্তারি ছাত্রীর বাবা।
বললেন, "আমাদের খুবই সাধারণ ঘর। অনেক লড়াই করে মেয়েটা ডাক্তারি পড়ে ওই জায়গায় পৌঁছেছিল। অথচ দেখুন ১৪০ কোটি মানুষের মধ্যে আমার মেয়েটার বাঁচার অধিকার রইল না!"
বিচারের দাবিতে এদিন কলেজ স্কোয়ার থেকে রবীন্দ্র সদন পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছিল ৫০টিরও বেশি সংগঠন। অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের সামনে তিলধারণের জায়গা নেই।
সদ্য সন্তান হারা বাবার দু'চোখ বেয়ে গড়াচ্ছে জল। কষ্টে-কান্নায় বুজে যাওয়া গলা থেকে উঠে এল দলাপাকানো আর্তস্বর, "আরজি করের অনেক নাম ডাক শুনেছিলাম। বিশ্বাস করুন, বুঝতে পারিনি যে ওখানকার প্রিন্সিপালটা রাক্ষস! না হলে কোনও বাবা জেনে শুনে মেয়েকে রাক্ষসের হাতে তুলে দেয়?"
এখনও চোখের সামনে ভেসে ওঠে ৯ অগস্টের সকালের সেই ফোনটার কথা। ঘড়ির কাঁটায় সকাল ১১টা। আরজি কর থেকে ফোন গিয়েছিল নির্যাতিতার বাবার ফোনে। বলছিলেন, "৯ অগস্ট, সকাল ১১টা। আমার ফোনে একটা কল আসে। ওই একটা কল আমাদের জীবনটাকে তছনছ করে দিল!"
৯ অগস্ট থেকে ১ অক্টোবর। দেখতে দেখতে ৫৪ দিন অতিক্রান্ত। মেয়ে হারা বাবার প্রশ্ন, "এতদিন হয়ে গেল। প্রমাণ লোপাটের জন্য যারা গ্রেফতার হল, কাদের আড়াল করতে তারা প্রমাণ লোপাট করেছিল, সেই উত্তর এখনও পেলাম না।"
আবার ফিরে গিয়েছেন ৯ অগস্টে। চোখের জল মুছতে মুছতে সামনের ভিড়টাকে বলছিলেন, "আপনারা পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বলে আজকে সাহস করে বলতে পারছি। সেদিন আমাদের অবস্থাটা ভাবুন। পুলিশ সহযোগিতা করেনি, উল্টে ওই অবস্থার মধ্যে মেয়ের দেহ দেখতে না দিয়ে আমাদের সাড়ে ৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়ে রেখেছিল। জীবনে কখনও ভুলতে পারব না, কীভাবে ওই মুহূর্তগুলো কাটিয়েছি।"
কদিন আগে ডাক্তারদের মঞ্চে দাঁড়িয়ে অভিনেতা-পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় মনে করিয়েছিলেন, "রিভলবার হাতে দেখা যাওয়া সত্ত্বেও আজমল কাসভের ফাঁসি ঘোষণা হতে পাঁচ বছর লেগেছিল। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে, বিচারের জন্ ধৈর্য্য ধরতে হবে।"
এদিন অনেকটা সেই সুরেই নির্যাতিতার বাবা বললেন, "বিচার যে সহজে পাওয়া যাবে না, সেটা ভালই বুঝতে পারছি। তবে হাল ছাড়ব না। আপনাদের কাছে একটাই অনুরোধ মেয়েটা বিচার না পাওয়া পর্যন্ত প্লিজ আমাদের পাশ থেকে সরে যাবেন না।"
নির্যাতিতার কাকিমা বলছিলেন, "আমাদের বাড়িতেও পুজো হত। আগামীকাল মহালয়া। এভাবে আমাদের উঠোনটা যে খালি হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি। এখনও কানের কাছে সবসময় মেয়েটার কথাগুলো বাজতে থাকে!"
নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা, প্রতিদানে সমাজকে অনেক কিছু ফিরিয়ে দেওয়া, সুযোগ পেলেই যে স্বপ্নের কথাগুলো মা-বাবা-কাকিমা'কে বলতো মেধাবী ডাক্তারি ছাত্রীটি!